নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ে স্বর্ণের বারের ব্যবসার টাকা ফেরত চাওয়ায় খুন হন ইমাম

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ে ইমাম দিদারুল খুনের ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ক্লু-লেস এই হত্যাকান্ডের পুরোটাই ছিল সুপরিকল্পিত। ইতিমধ্যে পুলিশসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দিদারুল হত্যার নেপথ্যে ছিল তারই একজন বন্ধু। ওই বন্ধু অর্থ সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই নির্মমভাবে হত্যা করেছে ইমাম বন্ধুকে।

গত ২২ আগস্ট সোনারগাঁ মল্লিকপাড়া গ্রামের নারায়ণদিয়া বায়তুল জালাল জামে মসজিদের ইমাম দিদারুল ইসলামকে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহত দিদারুল খুলনার তেরখাদা থানার রাজাপুর এলাকার আফতাব ফরাজির ছেলে। এর আগে গত ২৬ জুলাই তিনি মল্লিকপাড়া গ্রামের ওই মসজিদটিতে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। হত্যাকান্ডের পর জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) নির্দেশে ক্লু-লেস এ মামলার তদন্তে নামে পুলিশ।

তদন্তে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ইতোমধ্যে আসামিকে শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দিবাগত রাতে মাদারীপুরের শিবচর থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাকৃতের নাম ওহিদুর রহমান (৩১)। সে খুলনার নড়াইলের কলাবাড়ীয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (টুকু) শেখের ছেলে। ওহিদুর রহমান নিজেও মাদারীপুরের শিবচরের স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতো।

সূত্র মতে, দিদারুলের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে আর্থিক লেনদেন হয় বন্ধু ওহিদুরের সাথে। স্বর্ণের বার বেচা-কেনার ব্যবসাও ছিল তাঁর। স্বর্ণের বারের ব্যবসা নিয়েই ইমাম ও তার বন্ধুর মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। পরে ইমাম দিদারুল ব্যবসা থেকে সরে আসতে এবং বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে দেওয়া টাকা ওহিদুরের কাছে ফেরত চায়। এতেই তাকে হত্যা করতে পরিকল্পনা সাজায় ওহিদুর।

পরিকল্পনা মতে, হত্যাকান্ডের আগের দিনও দিদারুলের সঙ্গে দেখা করে তার সঙ্গে চা খেয়ে হত্যার পরিকল্পনা সাজিয়ে যায় ঘাতক বন্ধু। পরে হত্যাকান্ডের দিন এশার নামাজের পর রাতের খাবার প্রস্তুত করার সময় দিদারুলকে কিছু নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো হয়। এতেই দিদারুল অচেতন হয়ে পড়েন। তার সেই রাতের খাবারও হত্যাকান্ডের পর সেই অবস্থাতেই উদ্ধার করে পুলিশ।

দিদারুল অচেতন হয়ে পড়লে তাকে চাপাতি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে একটি চিরকুট লিখে ফেলে রেখে দরজায় তালা দিয়ে ঘাতক পালিয়ে যায়। এর আগে কুমিল্লায় হত্যাকারী ওহিদুর ও দিদারুল একইসঙ্গে পাশাপাশি মসজিদে ইমামতিও করেছেন। কিলিং মিশনে সেই বন্ধু একাই অংশ নেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে এ হত্যাকান্ডে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তা জানতে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে আসামিকে সাথে নিয়ে ইমাম হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে সোনারগাঁ থানা পুলিশ।

ওদিকে দিদারুলের পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহত দিদারুল তার বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসা করবে বলে বিনিয়োগের জন্য দুটি গবাদী পশু কিছুদিন আগে বিক্রি করে। এছাড়াও সব মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকার কাছাকাছি সে বিনিয়োগ করবে বলে পরিবারকে জানিয়েছিল। জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ওই টাকা থেকেই তার বন্ধুকে স্বর্ণের বারের ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য টাকা দেয় দিদারুল। পরে তাদের মধ্যে কোন কারণে দ্বন্দ হওয়ায় ব্যবসা থেকে সরে আসতে চায় এবং নিজের টাকাও ফেরত চায় দিদারুল।

আর এতেই পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডের পর ফরিদপুরের দিকে গাঁ ঢাকা দেয় সে ওহিদুর। নিজের পরিচয়ও গোপন করে সে। পুলিশ তার সঠিক পরিচয় খুঁজে বের করে মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার করে।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, মূল আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটির বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত জানানো যাচ্ছে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here