না’গঞ্জের আলোচিত ডিবি পুলিশের সেই এসআই কনক প্রত্যাহার

0
না’গঞ্জের আলোচিত ডিবি পুলিশের সেই এসআই কনক প্রত্যাহার

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় রাইফেল দিয়ে গুলি করা গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান কনককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে গোয়েন্দা শাখা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।এদিকে  তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এতার গুলি করার বিষয়টি নিয়েও তদন্ত হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক ফখরুদ্দিন ভূইয়া।গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় কনক তাদের দিকে সরাসরি অস্ত্র তাক করে গুলি করেন।সংঘর্ষের সময় মারা যান যুবদলকর্মী রাজা আহমেদ শাওন ওরফে শাওন প্রধান। এর প্রতিবাদে দেশজুড়ে ধারাবাহিক বিক্ষোভ করছে বিএনপি। তারা অভিযোগ করছে, কনকের গুলিতেই এই প্রাণহানি হয়েছে।নারায়ণগঞ্জ পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, ঘটনার দিন এসআই কনক যে রাইফেল দিয়ে গুলি বর্ষণ করেছে সেটি নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনসে কর্মরত ১৮তম ব্যাচের কনস্টেবল লিটনের নামে ইস্যু করা।

তবে লিটনের পুরো নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন সেই সূত্রটি। রাইফেলে গুলি লোড করা না থাকলেও লিটনের নামে রাইফেলের সঙ্গে ১০ রাউন্ড গুলি ইস্যু করা ছিল।ঘটনার দিন সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ডিবি পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমান কনক কনস্টেবল লিটনের কাছ থেকে রাইফেল নিয়ে গুলি লোড করেন। এরপর বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গুলি বর্ষণ শুরু করেন।গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক হিসেবে কাজ করা কনক ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় তার হাতে ছিল একটি লাঠি। অন্য একজন পুলিশ সদস্যের হাতে থাকা রাইফেল তুলে নিয়ে তিনি গুলি করেন।
অন্যের অস্ত্র তুলে নিয়ে গুলি করার সুযোগ নেই। পাশাপাশি সেদিন গুলি করার মতো পরিস্থিতি আদৌ ছিল কি না, এ নিয়েও আছে বিতর্ক। তবে এসব বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সমালোচনাও হচ্ছিল।একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সংঘর্ষের আগে মাহফুজুর রহমান কনক অন্য ডিবি পুলিশদের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন। কনকের ডান হাতে একটি লাঠি আর বাম হাতে ওয়্যারলেস। আরেক অংশে দেখা যায় কনকের হাতে চাইনিজ রাইফেল। তিনি গুলি করছেন বিএনপির নেতাকর্মীদের দিকে।সেদিনের ঘটনার ভিডিও ও স্থিরচিত্রে দেখা যায়,বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ছিলেন,তখন কনক দাঁড়িয়ে, নিচের দিকে খানিকটা ঝুঁকে এবং হাঁটু গেড়ে সরাসরি নেতাকর্মীদের দিকে গুলি করছেন।
কনক সেই ঘটনার চার বা পাঁচ দিন আগে ভোলা থেকে নারায়ণগঞ্জে বদলি হয়ে আসেন। তিনি ভোলায় থাকাকালেও পুলিশের গুলিতে বিএনপির মিছিলে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে সেই গুলি কে বা কারা ছুড়েছিল, সেটি প্রকাশ পায়নি।এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একজনের অস্ত্র আরেকজন ব্যবহার করতে পারেন না। নারায়ণগঞ্জ জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, আইনে বলা হয়েছে যে পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অস্ত্র থাকবে, তিনি আত্মরক্ষার্থে তা ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু একজনের অস্ত্র আরেকজন ব্যবহার করতে পারেন না।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, সেদিন কনক গুলি করেছিলেন চায়নিজ এসএমজি সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু রাইফেল দিয়ে। বড় ধরনের কোনো সংঘাত হলে এই অস্ত্র ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের দিকে যে ইটপাটকেল ছুড়ছিলেন, তাকে বড় সংঘাত বলা যায় কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে।জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেছেন, সেখানে সরাসরি বুলেট ব্যবহারের মতো কোনো পরিস্থিতিই ছিল না। তার পরও কার নির্দেশে এই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে, সেটি আমরা জানতে চাই।নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) ও জেলা পুলিশের মুখপত্র আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি সবকিছু মিলিয়ে স্পর্শকাতর হয়ে গেছে। ঘটনা তদন্তে কোন কমিটি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি এ ধরণের কোন কমিটির কথা জানেন না বলে জানান।

প্রসঙ্গত: গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর র‌্যালিতে পুলিশের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।সংঘর্ষের ঘটনার এক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশে সদ্য যোগ দেওয়া এসআই মাহফুজুর রহমান চায়নিজ রাইফেল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়েন।রাইফেল থেকে তার গুলি বর্ষণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সংঘর্ষে শাওন আহমেদ রাজা নামে এক যুবদল কর্মী নিহত হন। ২৬ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন আড়াইশ জন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here