ঢাকার পর নারায়ণগঞ্জে শুরু হয়েছে ক্যাসিনো ঝড়

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ রাজধানীর পর এবার নারায়ণগঞ্জে শুরু হয়েছে ক্যাসিনো ও জুয়ার বোর্ড জব্দ। দুইদিনের ব্যবধানে দুটি স্থানে ক্যাসিনো সামড়ুী জব্দ করা হয়েছে। এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে অনলাইন ক্যাসিনোর বাংলাদেশ প্রধান সেলিম প্রধান যার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলাতে। সেলিমের অনেক আত্মীয় স্বজনও এ ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল সেলিম প্রধানের। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট ফ্লাইটে হাজির হলে ফ্লাইট ছাড়তে ৩টা বেজে যায়।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, সেলিম প্রধান বাংলাদেশের অনলাইন ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত। ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, অনলাইন ক্যাসিনোর বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান এই সেলিম। তাকে দীর্ঘদিন ধরে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। অনলাইনে ক্যাসিনোর বিষয়টি দেশে সে দেখাশোনা করে। ৩০ সেপ্টেম্বর বন্দর উপজেলায় একটি ব্যাটারি তৈরির কারখানা শ্রমিকদের বাসস্থান থেকে ক্যাসিনো সরঞ্জামাদি জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বন্দর উপজেলার দক্ষিন লক্ষনখোলা মাদ্রাসা রোডস্থ শাহীন মিয়ার ভাড়াটিয়া ফ্লাটে ওই অভিযান চলে।

বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, দক্ষিন লক্ষনখোলাস্থ ডংজিং ব্যাটারী কারখানার চিনের নাগরিকদের স্টাফ কোয়াটারে অভিযান চালায়। অভিযান কালে ডংজিং ব্যাটারী ফ্যাক্টরী গেস্ট রুম ও দক্ষিন লক্ষনখোলাস্থ তারা মিয়ার ছেলে শাহিনের মালিকানাধীন ৪ তলা ভবনে একটি ফ্লাট থেকে দুটি জুয়া খেলার বোর্ড ও ১শ ৫০ পিছ জুয়া খেলার গুটি জব্দ করে নিয়ে যায়। তবে কাউকে আটক করা হয়নি।
২৯ সেপ্টেম্বর রূপগঞ্জ উপজেলায় একটি মোবাইল ফোন তৈরির কারখানা থেকে ক্যাসিনো ও জুয়া খেলার সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। রোববার বিকেলে হতে রাত পর্যন্ত রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন সেতু এলাকায় বেস্ট টাইকুন (বিডি) এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড ওই কারখানায় এ অভিযান চলে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্র জানায়, মোবাইল কারখানাটি মূলত কাঁচামালের সঙ্গে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চাইনিজ ক্যাসিনো সামগ্রী আমদানি করেছিল।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক শামীমা আক্তার জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে একটি ক্যাসিনো বোর্ড জব্দ করা হয়েছে। এ বোর্ড পশ্চিমা বিশ্বে বেশ সমাদৃত। ওই সময়ে কাউকে আটক করা হয়নি।

এরই মধ্যে রাজধানীতে ক্লাবের নামে গড়ে ওঠা ক্যাসিনো ও জুয়ার আসরগুলোতে র‌্যাব পুলিশের হানার পরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। এসকল ক্যাসিনো ও জুয়ার আসরে জড়িয়ে পড়েছিল নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকজন ক্ষমতাসীন দলের নেতা যাদের বিনিয়োগ ওই সকল ক্যাসিনো ও জুয়ার আসরে ছিল। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত সহ-সভাপতি জিকে শামীমকে বিপুল পরিমাণ টাকা, অস্ত্র, বিদেশী মুদ্রাসহ আটক করেছে র‌্যাব। রাজধানীতে একের পর এক ক্যাসিনোগুলোতে চলছে র‌্যাব পুলিশের হানা। যে কারণে রাজধানীতে ক্যাসিনো ও জুয়ার আসরগুলোতে র‌্যাব পুলিশের হানার পরে নারায়ণগঞ্জেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। কারণ বিগত দিনেও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ক্লাবগুলোতে অভিযান চালিয়ে জুয়ারীদের আটক করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

চলতি বছরের ১০ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরের জিমখানা এলাকায় একটি জুয়ার আসরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পুলিশ। তবে সেই জমজমাট জুয়ার আসর থেকে কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি। এর আগে ৮ মার্চ সন্ধ্যায় সুতা ব্যবসায়ীদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের টানবাজারস্থ কার্যালয়ে অবস্থিত ইয়ার্ন মার্চেন্ট ক্লাব থেকে ১২ জুয়ারিকে আটক করে সদর মডেল থানা পুলিশ। এসময় কার্যালয়ের ৫ম তলায় অবস্থিত হোটেলের ৩ কর্মচারীকেও আটক করা হয়।

৫ মার্চ মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়ারীদের হাত থেকে রেহাই পেতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ও নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা ওসির কাছে অভিযোগ করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ঋষিপাড়া এলাকাবাসী। এসময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমান বাঙালী, মো: মোস্তফা, কাশীনাথ বাবু, মো: নঈম উদ্দিন, মো: সফুর, সূর্য দাস, সুমন মোল্লা ও শ্যামল দাস সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। অভিযোগে বলা হয়, মাদক ব্যবসায়ীরা জামিনে বের হয়ে ফের এলাকায় মাদক ব্যবসা শুরু করেছে। তারা প্রকাশ্য ইয়াবা, গাজা, বিক্রি করছে। একই সাথে রাতে জুয়ার আসর অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত কমিটি বাধা দিলে তাদেরকে বহিরাগতদের দিয়ে নানা রকম ভয়ভীতি দেখায়।
চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারী রাতে ডিবি পুলিশের ব্লক রেইড পরিচালিত হয়। উক্ত অভিযানে নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫ নং ঘাট এলাকা, কালিরবাজার, বঙ্গবন্ধু সড়কের আশে পাশের এলাকায় এবং সাইনবোর্ড এলাকায় বিভিন্ন জুয়ার আসর হতে ৪০জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ হতে ৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া সাইনবোর্ড এলাকার শাপলা আবাসিক হোটেলে অভিযান পরিচালনা করে অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য ৩ জন নারী সহ মোট ১০ জন পুরুষ আটক করা হয়। ৪০ জুয়ারী গ্রেফতারের ঘটনায় ডিবির এস আই আলমগীর কবির বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

২০১৮ সালের ১০ মার্চ সকালে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের (বিবি রোড) কালিরবাজার এলাকায় অবস্থিত আমান ভবনে সিটি ক্লাবের জুয়ার স্পটে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় জুয়াড়িরা পালিয়ে গেলেও তাদের ফেলে যাওয়া তাস জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই স্পটটি নিয়ন্ত্রন করে ডিস ব্যবসায়ী শামীম ওরফে পিজা শামীম। তার বাড়ি চাষাঢ়া এলাকাতে। ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর রাতে কালিরবাজার সিটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ২১ জুয়ারীকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর শহরের কালিরবাজার স্বর্নপট্টিতে জুয়া খেলাসহ অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দেন স্বর্ণপট্টি এলাকার ব্যবসায়ীরা। স্মারকলিপিতে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করেন, স্বর্ণপট্টি এলাকায় কতিপয় ব্যক্তি একাধিক বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে জুয়ার আসর বসিয়েছে। ওইসকল জুয়ার আসরে জেলার বিভিন্ন থানা এলাকার সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজসহ নানা ধরনের অপরাধীরা প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here