বরগুনায় ব্যাংক ঋণে প্রতারণার শিকার ১৫পরিবার,,জমি নিলামে হারাতে বসেছে ভিটে মাটি।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মুঃ আঃ মোতালিব তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি॥  বরগুনার তালতলী অগ্রনী ব্যাংক শাখা থেকে প্রতারণা করে অন্যের জমি মর্গেজ দিয়ে ৫ লক্ষ টাকা সিসি ঋণ গ্রহণের করেছেন মেসার্স রাজ্জাক এন্টারপ্রাইজের মালিক শহীদ তালুকদার। ওই ঋণ পরিশোধ না করায় ঋণের বিপরীতে দেয়া জমি নিলামে উঠেছে। এতে ভিটে মাটি হারাতে বসেছে ১৫টি অসহায় পরিবার।

এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। দ্রুত প্রতারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নিলাম বাতিলের দাবী জানিয়েছেন তারা। জানাগেছে, তালতলী উপজেলার হেলেঞ্চাবাড়িয়া গ্রামের রাজ্জাক তালুকদারের ছেলে শহীদ তালুকদার মেসার্স রাজ্জাক এন্টারপ্রাইজের নামে তালতলী অগ্রনী ব্যাংক থেকে ২০১২ সালে ৫ লক্ষ টাকা সিসি ঋণ (৫২/১২) গ্রহণ করেন। ওই সিসি ঋণের বিপরীতে মোঃ শহীদ তার বাবা রাজ্জাক তালুকদারের ৭৮ নং মৌজায় ৫২, ৭৭, ৮০, ১৯৩, ১৯৭ ও জমা খারিজ ২৪১ নং খতিয়ানের ১৪৭৮, ১৪৭৯, ১৪৮৩, ১৭৮৪, ১৪৯০, ১৪৯১, ১৪৯২, ১৪৯৪, ১৪৯৫, ১৪৯৬, ১৪৯৭, ১৪৯৮, ১৫২০ ও ১৫২১ নং দাগে ২ একর ৭১ শতাংশ জমির মর্গেজ দেয়। ঋণ নেয়ার পর থেকে ওই ঋণ পরিশোধ করেনি তিনি।

বর্তমান সুদে আসলে ব্যাংকে ঋণের পরিমান দাড়িয়েছে ১২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৯৩২ টাকা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর অর্থ ঋণ আদালত আইনের ২০০৩ এর ১২(৩) ধারা মোতাবেক ব্যাংকে মর্গেজ দেয়া তফসীলি সম্পত্তির নিলাম দরপত্র আহবান করেন। কিন্তু তাতেও ঋণ গৃহীতার টনক নড়েনি। নিলাম দরপত্র আহবানের পরে বের হয় আসে প্রতারনার আসল চিত্র। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ঋণের বিপরীতে ব্যাংকে দেয়া তফসীল সম্পত্তির ২ একর ৭১ শতাংশের জমির মধ্যে রাজ্জাক তালুকদার ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আবদুল খালেক মুসুল্লী, মাজেদা বেগম, শাহজাহান আকন, রাহিমা বেগম ও মোঃ বেলাল হোসেনের কাছে ১ একর ৬৭ শতাংশ জমি ঋণ গ্রহণের পূর্বেই বিক্রি করেছেন। কিন্তু ওই জমি ক্রয়কৃত মালিকরা তাদের নামে মিউটিশন করেনি।

এই সুযোগে মোঃ শহীদ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে প্রতারণা করে ওই জমির মর্গেজ দিয়ে ঋণ নিয়েছেন। গত ৭ বছরে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে গা ঢাকা দেন তিনি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অনেকবার যোগাযোগ করলেও তাদের পাত্তা দেয়নি ওই প্রতারকপক্ষ। গত ২০ বছরে ওই জমিতে ১৫ টি পরিবার বসত ভিটা নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই সম্পত্তি নিলামের দরপত্র আহবানের পরে ভুক্তভোগী আশ্রাফ আলী তালুকদার, হারুন তালুকদার, মজিবর তালুকদার, রাসেল তালুকদার, ইউনুস তালুকদার, রেদওয়ান সরদার, নিজাম, বেলাল, শাহজাহান আকন, ইব্রাহিম জোমাদ্দার, খালেক মুসুল্লী, বসির, নসু, জাকির ও শানু মিয়া বিপাকে পড়ে।

ঋন নেয়া জমির নিলাম সম্পন্ন হলে জমিতে বসবাসরত অসহায় ১৫পরিবারগুলোকে পথে বসতে হবে। দ্রুত প্রতারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নিলাম বাতিলের দাবী জানিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।  ভুক্তভোগী শাহজাহান আকন বলেন, ১৯৯৯ সালে রাজ্জাক তালুকদার তার কাছে ৬১ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। কিন্তু আমি ওই জমির মিউটিশন করাইনি। এই সুযোগে তিনি ও তার ছেলে শহীদ তালুকদার আমার জমি তার নিজের নামে দেখিয়ে প্রতারনা করে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহন করেছে। এখন আমার জমি নিলামে উঠেছে। জমি নিলাম হয়ে গেলে আমাকে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে। আরেক ভুক্তভোগী রাহিমা বেগম বলেন, অগ্রণী ব্যাংকে দেয়া তফসীলি জমি থেকে ১৯৯৬ সালে রাজ্জাক তালুকদার ৩৩ শতাংশ আমার কাছে জমি বিক্রি করেছেন।  মেসার্স রাজ্জাক এন্টারপ্রাইজের রাজ্জাক তালুকদার বলেন, আমি অগ্রনী ব্যাংকে যে জমি মর্গেজ দিয়ে ঋণ নিয়েছি ওই জমিরই নিলাম হয়েছে। অপরের জমি নিলাম হয়নি।  অগ্রনী ব্যাংক তালতলী শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় সুদে আসলে ১২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৯৩২ টাকা হয়েছে। এতে ব্যাংকে দেয়া তফসীলি সম্পত্তি নিলাম দরপত্র আহবান করেছি। ব্যাংকে দেয়া তফসীলি সম্পত্তি রাজ্জাক তালুকদার বিভিন্ন জনের নামে বিক্রি করেছে এমন কয়েকজন আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। আমি বিষয়টি দেখছি। প্রতারণা করে অন্যের জমি দিয়ে ঋণ নিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা ছাড়াও প্রতারণা মামলা করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here