প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ সাংবাদিকদের বড় একটি অংশ তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় এবং দিন শেষে চিকিৎসা করানোর ব্যয় ভার বহন করার সামর্থও থাকে না। আর তার অকাল মৃত্যুতে পরিবার পড়ে যায় চরম অনিশ্চিত জীবনে। এভাবে চলতে থাকলে কোনো মেধাবী এই পেশায় আর আসবে না। এজন্য সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে প্রয়াত সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান এবং আবুল বাশার নুরু’র স্মরণে এক দোয়া ও স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বক্তারা এ কথা বলেন। ‘প্রাক্তন ছাত্রলীগ সাংবাদিক কোরাম’ এই দোয়া ও স্মরণ সভার আয়োজন করে। বক্তারা বলেন, সাংবাদিকদের বড় শত্রু সাংবাদিকরা। আমাদের সাংবাদিকরা যখন মালিক হওয়া শুরু করেছে, নীতি নির্ধারনীয় পর্যায়ে গিয়েছে, তখন সমস্যাটা বাড়ছে। তারা মালিকপক্ষকে বুঝিয়ে নিজে সুবিধা নিয়ে সাংবাদিকদের তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।
দিনশেষে মানবেতর জীবনযাপন করে রোগে-শোকে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। তার মৃত্যুতে পরিবার পড়ছে চরম অনিশ্চয়তায়। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কোনো মেধাবীরা সাংবাদিক পেশায় আসবে না।দেশের সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড আছে, কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হয় না উল্লেখ করে তারা বলেন, এজন্য সরকারের ব্যস্থাপনা যেমন দায়ী, তেমনি আমরা নিজেরাও দায়ী। আমাদের সাংবাদিকরা অসুস্থ হয়। কল্যান ট্রাস্ট আছে…বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদন্যতায় সেখান থেকে সহযোগিতা পাই। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানের জন্য আমরা কাজ করি অসুস্থ হলে সেই প্রতিষ্ঠান তার জন্য কিছু করে না।
এই যে লেুকোচুরি, ইদুর-বিড়ায় খেলা; এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব ছিলো, সেটি হয় উপেক্ষা করছে, ঘাটতি রয়েছে অথবা দুর্বলতা প্রকাশ করেছে।অধিকার রক্ষায় সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী উল্লেখ করে বক্তারা আরো বলেন, মালিকরা কিন্তু সংঘবদ্ধ, সাংবাদিকরা কিন্তু সংঘবদ্ধ হতে পারি নাই। সুষ্ঠু সাংবাদিকতা, বস্তুনিষ্ট তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা আমাদের যেমন দায়িত্ব, তেমনিভাব আমাদের জীবন ধারনের জন্য আমাদের নুরু-লায়েকুজ্জামানদের রক্ষা করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে নামতে হবে। তখনই রাষ্ট্র বা মালিকরা সবাই কিন্তু বাধ্য হবে।
প্রয়াত সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান এবং আবুল বাশার নুরু’র স্মৃতিচারন করে তার সহকর্মী সাংবাদিকরা বলেন, তারা দু’জন সারাজীবন পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে শুধুমাত্র সাংবাদিকতাই করেননি, প্রগতিশীল আন্দোলন, প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনাকে ধারন করে সামনের দিকে যেমন এগিয়ে গেছেন, তেমনি উত্তরসুরিতের মাঝে সেই আলো জ্বালানোর চেষ্টা করেছেন। তাদের মধ্যে কোনো দ্বৈতনীতি ছিলো না। মনে যেটা লালন করতেন সেটিই তিনি প্রকাশ করতেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, এই সময়ে সবচেয়ে বড় যেটা ক্রাইসিস, সেটি হচ্ছে সেটা সবাই আওয়ামী লীগ। ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ না করেও তারা সেটা পরিচয় দিতে চায়। এটাই বর্তমানে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সংকট। সত্যিকারের যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে, মুক্তিযদ্ধের চেতনায় আপোষহীন, যারা সংকট সময়ে সামনে ছিলেন তাদের চিহ্নিত করা জটিল হয়ে পড়েছে। প্রয়াত সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান এবং আবুল বাশার নুরু বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন।
বর্তমান সরকার সাংবাদিকবান্ধব উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, বর্তমান সংসদে তিনজন পেশাদার সাংবাদিক সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব লালন করছেন। তারা সাংবাদিকদের হয়ে কথা বলবেন। বন্ধুবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকবান্ধব। যে কোনো প্রয়োজনে সাংবাদিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট আন্তরিক। দ্রুত সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নসহ নতুন ওয়েজবোর্ডে ঘোষনা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা এ সময় সংগঠনের সবাইকে সুখে-দু:খে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আপোষহীন থাকার আহ্বান জানান বক্তারা।
সাংবাদিকরা যাতে স্বচ্ছলভাবে স্বাচ্ছেন্দে জীবনযাপন করতে পারে, সেজন্য তাদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সাংবাদিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তারা। স্মরণ সভা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের সম্পাদক শামীম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এমপি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের-বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের- বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শুকুর আলী শুভ, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি কামরুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার, সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান খোকন, সাংবাদিক অমরেশ রায়, ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সাংবাদিক ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক হালিমা আক্তার লাবন্য, ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক নিয়াজ জামান সজিব, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রনি, নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাংবাদিক রুহুল আমিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি মানিক লাল ঘোষ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জনকণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি উত্তম চক্রবর্তী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, সিনিয়র সাংবাদিক শাহনেয়াজ দুলাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য উম্মুল ওয়ারা সুইটি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক প্রচার সম্পাদক আছাদুজ্জামান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এসকে রেজা পারভেজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাংবাদিক কাজী মোবারক হোসেন।