প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ১৯৯০ সালে বেগম খালেদা জিয়া আমাদের দেলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ এ এক জনসভা করেন। তখন আমি ঐ স্কুলে পড়ি। সাবেক ঢাবি ছাত্র দল নেতা মাহবুব ভাই তখন ছাত্র রাজনীতির ক্রেজ ! আমাদের কাছাকাছি বাড়ী। ঐ জনসমাবেশে আমি অংশ গ্রহণ করি, ওটাই আমার প্রথম রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ গ্রহণ। আমার রাজনীতির আয়স ৩৩ বছর, প্রায় আমার জীবনের সমান !
বেগম খালেদা জিয়ার জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল আমার ক্লাসমেট বন্ধু মিন্টুদের ( রমিজ উদ্দিন চাচার ছেলে) বাসায়। সেই স্মৃতি এখনো জ্বলজ্বল করছে। ঢাকা কলেজের পড়াকালীন সংক্ষিপ্ত সময়েও আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল । আমাদের সময়ে ছাত্রদলের প্যানেলে হারুন – জাভেদ পরিষদ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হয়েছিল। তখন আমাদের সন্গে হারুন ভাইয়ের নির্বাচন করা একজন বন্ধু আজকে আওয়ামী লীগের সুশীল ! ১৯৯৫-৯৬ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অল্প কিছু দিন পর বটতলায় ছাত্র দলের সমাবেশে প্রথম অংশ নিয়েছিলাম। এ্যানি- সোহেল ভাইয়ের বক্তৃতা শুনেছি।
এ্যানি ভাইয়ের কপালে টিয়ার সেলের ক্ষতটা তখন বেশ স্পষ্টই ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব বেশি সক্রিয় রাজনীতি করিনি, তবে আমাদের চেয়ে কম সক্রিয়রাও অনেক পদ পেয়েছিল। রাজনীতির নেশাটাই বেশি ছিল, পদের নেশা অতটা ছিল না ! বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর যে গ্রুপের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম সেই গ্রুপ বিপদে পড়ে যায়। বিরোধী দলে সক্রিয় গ্রুপটি দল ক্ষমতায় আসার পর পদ বঞ্চিত হয়ে রাজনীতির মূল ধারা থেকে দূরে সরে যায়। দলের সকল কার্যক্রম আমরা সব সময় সমর্থন করি এরকম নয়, তবে দলের স্বার্থে আমাদের অনেক সময় অনেক অপ্রিয় পদক্ষেপের সাথেও আপোষ করতে হয়।
এতো দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে উল্লেখ করার মতো তেমন কোন দলীয় পদ পাইনি, অবশ্য পদ পাওয়ার চেষ্টাও খুব একটা করিনি। চেষ্টা করলে ছাত্রদল, যুবদল,স্বেচ্ছাসেবক দল, জেলা বিএনপি মিলিয়ে হয়তো এতোদিনে ৪/৫ টা পদ পাওয়া যেতো। তারপরও হয়তো আজকের জায়গায়ই থাকতাম, যেহেতু রাজনীতিকে কখনো পেশা হিসেবে নিতে চাইনি । এতোদিনেও দল আমাকে তেমন কিছু দেয়নি এজন্য আমাকে দল ছাড়তে হবে, একথা কখনো ভাবিনি। আমি তো পদের জন্য রাজনীতি করি না । যারা দলের মূল্যায়ন পায়নি বলে অন্য দলে চলে যায়, তারা দলকে অন্তর দিয়ে কতটুকু ভালবাসে তা নিয়ে প্রশ্ন করাই যায় !
আমার এলাকায় যারা তরুণ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আমি সব সময় তাদেরকে বলি রাজনীতিটা হলো টেস্ট খেলা, ধৈর্য্য ধরে রাজনীতি করতে হয়, পদের জন্য রাজনীতি করে খুব বেশি আগানো যায় না । দলের নিবেদিত কর্মী হলে দল একদিন মূল্যায়ন করবেই । আমি ধৈর্য্য ধারণ করে রাজনীতি করে গিয়েছি, দল আমাকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নমিনেশন দিয়েছে, সমর্থন দিয়েছে, আমি নির্বাচিত হয়েছি । রাজনীতি করলে হয়তো ভবিষ্যতে আরও মূল্যায়ন হবে, না হলেও দলকে ছেড়ে দিতে হবে এমন চিন্তা কখনোই করি না ।
দেড় বছর বা দুই বছরে হতাশ হলে রাজনীতি না করাই ভালো ! জীবনের পুরোটা সময়ই বলা যায় বিরোধী দলে আছি, দল ক্ষমতায় আসলে মূল্যায়ন নাও করতে পারে তাই বলে দল ছাড়তে হবে ! দল থেকে কিছু পেতেই হবে ! দল যদি কোন দিন ক্ষমতায় না আসে ! যারা রাজনীতি করে তারা তারপরও দল করবে কিন্তু যারা কিছু সুবিধা প্রত্যাশা করে তারা নাও করতে পারে ! ইউনাইটেড লইয়ারস ফ্রন্ট এর ঢাকা আইনজীবী সমিতির প্রোগ্রামে পুলিশের হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছি, দলের নেতাকর্মীরা সহমর্মিতা জানিয়েছে, ভালবাসা পেয়েছি ও তারা পাশে থেকেছে।
সেই দিন প্রোগ্রাম শেষ করার পর পূর্বের একটি মামলায় জামিন নামা দাখিল ও জেলা জজ আদালতে আমরা সারেন্ডার করি । আহত আইনজীবীদের ঢাকা বারের মেডিক্যাল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। সারেন্ডার শেষ করে Barrister Kayser Kamal ভাই ও Kamrul Islam Sajal ভাই রাত দশটা পর্যন্ত হাসপাতালে থেকে সকলের চিকিৎসা নিশ্চিত করেন। তাদের সাথে সেদিন ছিলাম, তাদের দায়িত্ববোধ ও নেতাকর্মীদের প্রতি দরদ আমি দেখেছি । বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান চিকিৎসকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন।
দলের যুগ্ম মহাসচিব সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সশরীরে এসে চিকিৎসার খোঁজ খবর নিয়েছেন। আমরা যারা আহত হয়েছি তাদের খোঁজ খবর নিতে জনাব তারেক রহমান বাসায় তার প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন, ভালবাসার স্মারক হিসেবে ফল পাঠিয়েছেন। দলীয় পদের চেয়ে এগুলোর গুরুত্ব আমার কাছে বেশি । পদ নয়, আমার কার্যক্রমই আমার পরিচয়।