প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ আমদানি কমার অজুহাতে অনৈতিকভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। চলতি বছর দেশের পণ্য আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। আর বর্তমানে বাজারে প্রায় সব পণ্যই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা ডলার সংকট ও এলসি খোলার সমস্যাকে দায়ি করছেন।
তাছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও বাজারে পণ্য মূল্যের বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। যা পণ্যের দামে প্রভাব ফেলছে। তবে পণ্য আমদানি কমার কারণে স্বাভাবিকভাবে যতটুকু সংকট তৈরি হয়েছে, এর চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে পণ্য মূল্যস্ফীতি। মূলত অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, ইপিবি এবং কাস্টমস বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ৬ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ কম। আগের অর্থবছর (২০২১-২২) আমদানির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৩ কোটি ৩১ লাখ টন। যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১৩ কোটি ৮২ লাখ টন। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমদানি পণ্যের পরিমাণ কমেছে ৫১ লাখ টন বা ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয় ৯ দশমিক ২১ মেট্রিক টন পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি কমেছে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তবে আমদানি কম হলে ব্যয়ও কমার কথা থাকলেও উল্টো খরচ বা আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১০ দশমিক ০৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬১ হাজার ৬৩২ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৫৯ হাজার ১৫৯ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের শুল্কায়নের তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয় ৮ দশমিক ৮৫ কোটি মেট্রিক টন পণ্য।দেশে গত বছর আমদানি বেশি কমেছে শিল্পের কাঁচামাল, বিলাসবহুল পণ্য ও ভোগ্যপণ্য। ওই তিন খাতের ব্যবসায়ীরাই যার প্রধান কারণ হিসেবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকটের কথা বলছেন। এছাড়া গত অর্থবছরের বেশ কিছু সময় বিলাসীপণ্য ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের করভার বাড়ানো, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং ৩০ লাখ ডলারের বেশি ঋণপত্র খোলার বিষয়ে তদারকির কারণেও আমদানি কমেছে।
সূত্র আরও জানায়, আমদানি সংকটে সবচেয়ে বেশি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী গত এক বছরের ব্যবধানে আমদানিনির্ভর চিনির দাম বেড়েছে ৫১ শতাংশ। এ সময় ৮৫ থেকে ৯০ টাকার চিনি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। পাশাপাশি বাজারে গুঁড়া দুধের দাম ১৭ শতাংশ, ধনে, জিরা, লবঙ্গের মতো গরম মসলার দাম ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।এছাড়াও আদা-রসুনের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। আদার দাম প্রায় সাড়ে ৩শ শতাংশ এবং রসুনের দাম ৮৭ শতাংশ বেশি।
১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়া এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেজিতে এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় ঠেকেছে। আবার কাঁচামাল আমদানি কম হওয়ায় বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ছিল রড ও ইস্পাত পণ্যের। গত এক বছরে প্রতি টন রডের দাম প্রায় ২৫ হাজার পর্যন্ত বেড়ে লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। একই অবস্থা লেখার কাগজের ক্ষেত্রেও। গত এক বছরে লেখার কাগজের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ।
আর গত এক বছরে প্রাণী খাদ্যশিল্পের কাঁচামাল, খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের কাঁচামাল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, প্লাস্টিক পণ্য ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানি সংকটের কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।