প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ চরম অস্থিরতা ও নাটকীয় নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। নানামুখী চাপের মুখে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। নেতৃত্ব ধরে রাখতে আবার কিছু সময়ের মধ্যেই আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা। কিন্তু যেই সেই অবস্থা! শেষপর্যন্ত সেই বাবুনগরী মামা-ভাগনে জুটির হাতেই রয়ে গেছে সংগঠনটির নেতৃত্ব। বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীই আবার আহ্বায়ক।
আবার সদ্যসাবেক সিনিয়র নায়েবে আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীই প্রধান উপদেষ্টা। দুজনের বাড়িই ফটিকছড়ির বাবুনগর গ্রামে। দুজনের পদবিই বাবুনগরী। সম্পর্কেও তারা মামা-ভাগনে। জুনায়েদ বাবুনগরী ও মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী ‘চরম কট্টরপন্থী’ হিসেবে পরিচিত। রোববার দিবাগত গভীর রাতে তড়িঘড়ি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে এবং তাতে ঘুরেফিরে সংগঠনটির আহ্বায়ক ও প্রধান উপদেষ্টা পদ ধরে রেখে কার্যত সংগঠনের কর্তৃত্বই ধরে রেখেছেন। এ নিয়েও নতুন করে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
হেফাজতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুনায়েদ বাবুনগরী সামনে থাকলেও হেফাজতে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীরও প্রভাব কম নয়। আহমদ শফীর পর বয়সসহ বিভিন্ন কারণে কওমী ঘরানার আলেমরা মুরুব্বি মানেন প্রভাবশালী এই হেফাজত নেতাকেই। তাকে সম্মান ও সমীহ করার পাশাপাশি তার নির্দেশনা-পরামর্শকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নেন নেতাকর্মীরা। অশীতিপর হলেও সংগঠনে তার বেশ দাপট। পেছনে থেকে সংগঠনে কলকাটি নেড়ে থাকেন ‘চরম কট্টর’ এ নেতা!
ভেঙে দেওয়া কমিটির মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীকে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া কমিটির সদস্য করা হয়েছে- সালাহউদ্দীন নানুপুরী ও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানকে। এরমধ্যে নুরুল ইসলাম ঢাকার এবং সালাহউদ্দীন গাজীপুরের। কমিটি ভেঙে এভাবে নেতৃত্ব ধরে রাখাকে জাতি তথা আলেম-ওলামাদের সঙ্গে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আহমদ শফীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত মঈনুদ্দিন রুহী।
রোববার দিবাগত রাতে হেফাজতে ইসলামের যে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি গঠন করা হয়েছিল গতবছরের ১৫ নভেম্বরে। এ কমিটির আমির নির্বাচিত হয়েছিলেন হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক জুনায়েদ বাবুনগরী।
মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন ঢাকার জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও হেফাজতের ঢাকা মহানগর শাখার আমির নূর হোসাইন কাসেমী। যিনি পরে করোনায় মারা যান। তার জায়গায় স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীকে। আহ্বায়ক কমিটিতে তাকেই সদস্য সচিব করা হয়েছে। ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। শুরুর দিকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরব থাকলেও শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে বড় দাগে আলোচনায় আসে সংগঠনটি হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমদ শফী মারা যাওয়ার পর অরাজনীতির মোড়কে রাজনৈতিক সংগঠনে রূপ নিতে থাকে এটি।
এরইমধ্যে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে গিয়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। কেন্দ্রীয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু নেতাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এমন চাপের মুখে কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনে বাধ্য হয় হেফাজতে ইসলাম।