প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ৪ঠা নভেম্বর পালিত হয় সংবিধান প্রনয়ন দিবস। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের একজন আইনজীবী হিসেবে প্রকৃত সাংবিধানিক অধিকার বন্চিত নারীদের হয়ে আজকের এই লেখা।পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রের মতোই স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সনের ৪ ঠা নভেম্বর রচিত হয় একই সনের ১৬ ই ডিসেম্বর তা কার্যকর হয়।
বাংলাদেশের সংবিধান পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান। এখানে মানুষের মৌলিক অধিকার সহ নারীর অধিকারগুলো বিভিন্ন অনুচ্ছেদে অত্যন্ত সুনিপুন ও সুন্দর ভাবে উপস্হাপন করা হয়েছে, যা নারীর আপন সত্তাকে উদ্ভাসিত করে।
বাংলাদেশের সংবিধান নারীর অধিকারের প্রতি এক অসাধারণ স্বীকৃতি। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে নারী-পুরুষে বৈষম্য করার কোনও সুযোগ নেই।– সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আছে, ‘ সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’।– সংবিধানের ২৮ (১) অনুচ্ছেদে আছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না’। – সংবিধানের ২৮ (২) অনুচ্ছেদে আছে, ‘ রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন’।– সংবিধানের ২৮ (৩) অনুচ্ছেদে আছে, ‘ কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী- পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাবে না’।
–সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, ‘নারী ও শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যেকোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না’।–।সংবিধানের ২৯ (১) অনুচ্ছেদে আছে, ‘ প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগের সমতা থাকবে’।– সংবিধানের ২৯ (৩) অনুচ্ছেদে আছে, ‘ কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নারীপুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মের নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।- – সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে নারীর জন্য জাতীয় সংসদে ৫০ টি আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
৯ অনুচ্ছেদের অধীনে স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের উন্নয়নে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। মনে পরে একটি উক্তি যা আমাদের প্রয়াত প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ সাহেব করেছিলেন-“যত সুন্দর ভাষা ও শব্দ দিয়ে সংবিধান লেখা হোক না কেন, জাতির জীবনে তা প্রয়োগ না হলে সেটা অর্থহীন হয়ে পড়বে।” বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে মনে করি প্রায়োগিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার সর্বোচ্চ আদালতের সাথে সংশ্লিষ্ট , সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত নারীরা।
এখানে নিয়োগ,পদায়ন,মনোনয়ন সব কিছুতেই সংবিধানে প্রদত্ত অধিকার থেকে নারী আইনজীবীরা বঞ্চিত।বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত বাঙালীর কৃষ্টি,সংস্কৃতি,ঐতিহ্যের ধারক,বাহক ও অভিভাবক। আমরা যদি সর্বোচ্চ আদালতের দিকে অবস্হান গত দিক থেকে তাকাই বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগে মাননীয় প্রধান বিচারপতি সহ রয়েছেন সাতজন মাননীয় বিচারপতি,বর্তমানে আপিল বিভাগে কোন নারী বিচারপতি নেই।মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে মাননীয় বিচার পতি মোট ৯২ জনের মধ্যে নারী বিচারপতি মাত্র ৬ জন। এটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে, মাননীয় এটর্নী জেনারেল, এডিশনাল এটর্নি জেনারেল পদে কোন নারী নেই, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ৬৭ টি জনের মধ্যে ১২ জন নারী। এ্যসিস্ট্যান্টএটর্নী জেনারেল ১৫১ জনের মাঝে ৫৭জন নারী ।
বাংলাদেশের কোন জেলার নারী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি),গর্ভমেন্ট প্লীডার(জি,পি) কোন উচ্চপদে নারী আছে বলে জানা নেই। সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের ২০২০-২০২১ সনের নির্বাচিত কমিটিতে চৌদ্দটি পদে মাত্র একজন নারী সদস্য। যদিও ৮০০ জন মতো নারী আইনজীবী রয়েছেন তবে কোন ভাল পদ,পদবীতে নারীদের নমিনেশন কোন দল থেকেই দেয়া হয়না। সারা বাংলাদেশে মোট আইনজীবী ৫৮ হাজারের মতো,এর মাঝে নারী আইনজীবী প্রায় দশহাজার। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে নারী প্রতিনিধি নেই,নির্বাচনে নারীদের নমিনেশন দেয়া হয়না,আর নমিনেশন পাওয়া অত্যন্ত দূরহ বিষয়ও বটে” যোগ্য নারী যে নেই,নারীদের যোগ্যতা নজরে আসেনা। আর কতো বড় হলেই যোগ্য হবে নারী?”
বারের সভাপতি, সম্পাদক পদে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট সহ অন্যান্য জেলা বার এসোসিয়েশন গুলোতে মনোনয়ন দেয়া হয়না বললেই চলে তবে দু’একটা বার এসোসিয়েশনে ভাগ্যক্রমে দুএকজন সম্পাদক হয়েছেন যা খুবই নগন্য। সভাপতি,সম্পাদকের পদে নমিনেশন? সেতো আকাশকুসুম কল্পনা,একেবারে দিবাস্বপ্ন দেখার মতো। আমরা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলি, নারী নেতৃত্বের কথা বলি,নারী অধিকারের কথা বলি, নারী অধিকার বাস্তবায়নের জন্য আমরা সোচ্চার অথচ সবচেয়ে বন্চনার শিকার সর্বোচ্চ আদালতের নারীরাই।