প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মহেশপুর (ঝিনাইদহ)সংবাদদাতাঃ একটি সেতু বদলে দিতে পারে হালদার পাড়ার মানুষের জীবন। এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হন হালদার পাড়ার মানুষেরা। তিন পাশে ভারতের ইছামতি নদী আর এক পাশে ভারতের নদীয়া জেলা। দূর থেকে দেখে মনে হবে এটা বিচ্ছিন্ন কোনো এক দ্বীপ।
শত বছরের পুরনো এক গ্রাম, যেখানে মৌসুমি ফসলসহ নানা ধরনের সবজি চাষ ও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে গ্রামের মানুষেরা। ওই গ্রামের বাসিন্দারা সব কিছুতেই সফল হলেও তাদের একটাই দুঃখ নদীর উপর একটা সেতু নিয়ে। সেতুর অভাবে গ্রামবাসীর যেন দুঃখের শেষ নেই। তারা বঞ্চিত হচ্ছেন সব প্রকার সুযোগ-সুিবধা থেকে। সেতু বঞ্চিত গ্রামটি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবতী শ্রীনাথপুর হালদার পাড়া গ্রাম।
জানাগেছে, মুক্তিযুদ্ধ পরর্বতী সময়ে ইছামতি পাড়ের শ্রীনাথপুর হালদার পাড়া গ্রামে দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করত। সে সময় গ্রামরে অধিকাংশ বাসিন্দারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। সময়ের আর্বতনে অনেকে চাষাবাদে যুক্ত হয়েছে। র্উবর ভূমি হওয়ায় সেখানে সবজি ও তুলা চাষ বেশি হয়। তবে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া না লাগার ফলে গ্রামটিতে ধীরে ধীরে বসতি কমতে থাকে। এখন সেখানে মাত্র ৩৫টি পরিবার বসবাস করছে।
ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শীতের সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও সমানতালে করছেন কৃিষ কাজ। গ্রামের তিনপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে এক সময়ের খরস্রোতা নদী ইছামতি। নদীর ওপর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সাঁকো।সাঁকোটার অবস্থাটাও বেহাল। তার ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পারাপার করছেন অনেকে। ওই গ্রামরে বাসিন্দা মনোরঞ্জন হালদার জানান, সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুনে আসছি নদীর ওপর সেতু হবে।
তবে এখনও পর্যন্ত দেখতে পারলাম না। গ্রামের ছেলে-মেয়েরা সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে অনেক কষ্ট হয়। বাঁশের সেতু থেকে নদীতে পড়ে গিয়ে হাত -পা ভেঙে গেছে অনেকের। এ নিয়ে বিভিন্ন অফিসে ঘুরেও কোনো ফল পাইনি।ওই গ্রামের মনোরঞ্জন হালদার জানান, ‘আমি এখানে ১৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে আসছি। ভালো ফলন হলেও শুধুমাত্র সেতুর অভাবে আমাদের উৎপাদিত পণ্য কম দামে বিক্রিয় করতে হচ্ছে।
অন্য এলাকার মানুষেরা আমার এলাকার ছেলে – মেয়েদের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাই না। পুনির্মা রানী নামের ওই গ্রামের আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘যাতায়াত অবস্থা খারাপের জন্য আত্মীয়-স্বজনরা আমাদের বাড়িতে আসেন না। একবার আমার মেয়েটা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। রাতের আধারে সাঁকো পার করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি। পরের দিন যখন হাসপাতালে নিয়ে গেলাম তখন তার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পড়েছেল।
স্থানীয় শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম জানান, হালদার পাড়ায় একটি সেতু নির্মানের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। তবে সেতু নির্মানের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, ভারতীয় সীমান্তর্বতী ওই গ্রামের মানুষের র্দুভোগের কথা আমি শুনেছি। ইতিমধ্যে সেতু নির্মানের জন্য সংশ্লষ্টি র্কতৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।