প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিতে হৃদয় ভূঁইয়া (২৩) নামের একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আরো একজন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়াও পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়েছে।শনিবার বিকেলে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।নিহত হৃদয় ভূঁইয়া দুঘঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে।
তিনি নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থক। ঘটনার পর ওই এলাকা পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে উপনির্বাচনে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইউপি সদস্য পদে দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোরগ প্রতীকে আব্দুল আজিজ সরকার ও তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোট গ্রহণ শেষে আজিজ সরকার মোরগ প্রতীকে ৯২৯ ভোট ও তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু ৮১১ ভোট পান। এ সময় ফলাফল জানার পর ওই কেন্দ্রের প্রিজাইর্ডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে পুনরায় ভোট গননার অনুরোধ করেন।
পুনরায় ভোট গননা করে রাজুর পক্ষে এক ভোট যুক্ত হয়। এ নিয়ে রাজুর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। রাজু প্রিজাইর্ডিং কর্মকর্তাকে তৃতীয় দফায় ভোট গননা করতে দাবি করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে রাজু কৌশলে কেন্দ্রের বাইরে চলে যান। এ বিষয়টি তার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা লোকজনকে উপজেলায় আসতে বাধা সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে পুলিশ, দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে।
এ সময় কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থক দুধঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে হৃদয় ভূঁইয়া ও কামাল ভূঁইয়ার ছেলে ওমর ফারুক (২৭) গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়াও আপন, সাখোয়াত, মফিজুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, রাশেদ ও রিপনসহ ১২ জন আহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পথে হৃদয় ভূঁইয়া মারা যান।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে গিয়ে সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) সাইফুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক(এএসআই) খবিরউদ্দিন, কনস্টেবল, মঞ্জু মিয়া, জুয়েল রানা,আব্দুস সালাম, কবির হোসেন,নূর মোহাম্মদ, আল আমিন আহত হন।
পুলিশ সদস্যদের সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।নিহত হৃদয়ের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের রাজু নির্বাচিত হয়। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন আজিজ সরকারকে জয়ী ঘোষণা করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুনরায় ভোট গননা করে ফলাফল দেয়ার অনুরোধ করলে আজিজ সরকার বহিরাগত লোকজন নিয়ে গুলি করে।
এ সময় পুলিশও রাজুর সমর্থকের ওপর গুলি চালায়। সেই গুলিতে তার ভাই মারা যান।তিনি আরো জানান, তার ভাই পেশায় একজন টাইলস মিস্ত্রি। তিনি কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত না। তাকে আজিজ সরকারের ভাড়াটিয়া বহিরাগত সস্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে।সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. তানজিলা বলেন, ‘গুলিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
গুলিটি নিহতের বুকের ডান পাশে লেগেছে। গুলিবিদ্ধ আরো একজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও আটজন পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।’দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইর্ডিং কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচন শেষে ফলাফল দিয়ে ফেরার পথে কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা করে।
এ সময় একজন মহিলা পুলিং আহত হয়েছেন।সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান বলেন, নির্বাচন শেষে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এ সময় আজিজ সরকারের সমর্থকদের গুলিতে দু’জন গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে গিয়ে পুলিশের আট সদস্য আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো: মুজিবুর রহমান গত বছরের ২০ মে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলে এ পদটি শূন্য হয়। ফলে শনিবার শূন্য পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।