প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ডেস্ক নিউজ: ২৮ অক্টোবর তারিখকে ঘিরে ফের মাঠে নামার চেষ্টায় রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে ওই দিন রাজধানীতে সমাবেশ করতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে তারা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবর। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো দলটি নানা কারণে বিতর্কিত।
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রকাশ্য বিরোধিতাকারী এবং পাকিস্তানিদের সঙ্গে জেনোসাইডের প্রত্যক্ষ অংশীদার জামায়াতে ইসলামী বিতর্কিত তাদের নেতাদের কারণে, তাদের দলীয় লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের কারণে। তারা বাংলাদেশে এতদিন রাজনীতি করলেও বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি অনুগত নয়, নারীর সমঅধিকার স্বীকার করে না, দলের আনুপাতিক হারে নারী নেতৃত্বের বিষয়টি অগ্রাহ্য করে। একাত্তরের জনযুদ্ধ মহান মুক্তিযুদ্ধকে ‘গণ্ডগোলের বছর’ এবং ‘একাত্তরে আমরা ভুল করিনি’ বলেও ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে, এবং সেই ধৃষ্টতায় তারা অনুতপ্ত হয়নি, ক্ষমা প্রার্থনা করেনি।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার চলছে। গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদীসহ বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর হয়েছে। উল্লিখিতরা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন, ছিলেন দলটির শীর্ষ নেতাও। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া একাধিক রায়ে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যক্ষ সংযোগের কথা বলা হয়েছে।
রায়ে একাধিকবার এসেছে জামায়াত দলীয় সিদ্ধান্তে একাত্তরের জেনোসাইডে জড়িত হয়েছিল।দলীয় সিদ্ধান্তে জেনোসাইডের অংশীদার যেখানে, সেখানে এই দলটির রাজনীতি করার অধিকার থাকার কথা ছিল না। কিন্তু নির্বাহী আদেশে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়নি। নিবন্ধন হারিয়েছে তারা আদালতে, এবং এরপর আদালতের সেই রায়ের আলোকে নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে। নিবন্ধন হারানোর আগে থেকেই মূলত রাজনীতিতে জামায়াত কোণঠাসা, যার শুরু হয়েছিল শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার শুরুর সময়।
যদিও তারা তাদের নেতা প্রতি যুদ্ধাপরাধীর রায়ের পর নাশকতার চেষ্টা করেছে, তবু শেষ পর্যন্ত কোণঠাসা ছিল। এরমধ্যে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদীর রায়ের পর সারাদেশে যে নাশকতা করেছিল জামায়াত-শিবির, তা বাংলাদেশে একটা অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে রয়েছে।জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্য কোন রাজনৈতিক তৎপরতা নাই দেশে, গোপনে চলছে তাদের কার্যক্রম। মাঝেমাঝে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা মিছিল করে। সেগুলো গণমাধ্যমে খবর হয়ে আসে।
তবে গত জুনে হঠাৎ করে ফের আলোচনায় এসেছে তারা রাজধানীতে একটা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে। ওই কর্মসূচির অনুমতিও দিয়েছিল পুলিশ। এরপর দলটি দেশের নানা জায়গায় একইভাবে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়, অনুমতি দেয়নি পুলিশ।ঢাকার কর্মসূচি পালনের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল যে, তবে কি আওয়ামী লীগের কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে জামায়াত? প্রথম দিকে সন্দেহ দানা বাঁধলেও ক্রমে সেটা দূরীভূত হয় অন্য কোথাও তারা অনুমতি না পাওয়ায়।
এছাড়া জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কে টানাপড়েনও এক্ষেত্রে অনুঘটক হয়েছিল। যদিও এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রেখেছে, তবে দল দুটোর নীতি-আদর্শের খুব বেশি দূরত্ব নেই। শেষ মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াতের প্রকাশ্য ঐক্য হলেও সেটা রাজনীতির ক্ষেত্রে বড় ঘটনা হিসেবে দেখা হবে না।‘ঝোপ বুঝে কোপ মারা’ দল জামায়াতে ইসলামী। দলটি পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পর্যন্ত অনেকবারই নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কৌশলে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখে ফের রাজনীতি করে গেছে।
এখন নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ নয় যদিও, তবে তারা নানাভাবে কোণঠাসা। এই পর্যায় থেকে উত্তরণে কি-না তারা বিএনপির সঙ্গে দূরত্বের বিষয়টি দেখাচ্ছে। যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই মাঠে নেমেছে। বাংলাদেশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমেরিকা যখন ভিসানীতি দিয়েছিল তখন সরকারের বিব্রত হওয়ার সময়ে প্রকাশ্য কর্মসূচি দিয়েছে, এবং সরকার সেখানে ‘না’ করতে পারেনি। এবার সামনে যখন ২৮ অক্টোবর তারিখকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত কিংবা অনিশ্চয়তার পথে তখনই তারা রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ ডেকেছে।
সরকার-প্রশাসনের দৃষ্টি যখন বিএনপির মহাসমাবেশে তখন জামায়াতের এই সমাবেশের কর্মসূচি বিব্রত করছে নিশ্চয়। এমনিতেই জামায়াত-শিবির নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল নয়। ধর্মের নামে তারা ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন। তাদের ইতিহাস শান্তির নয়, সংঘাতের। এছাড়া ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীসহ সারাদেশে যে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল, সেটা এই জামায়াতের তৎকালীন শীর্ষ নেতা যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর উসকানি এবং জামায়াত-শিবিরের গোলাগুলি দিয়েই শুরু হয়েছিল।
সেই একই তারিখে জামায়াতের মাঠে নামার ঘোষণা আর যাই হোক স্বস্তির হবে বলে মনে হচ্ছে না।ঐক্যে আপাতত দূরে থাকার বিষয়টি দেখানো হলেও ২৮ অক্টোবর জামায়াতের মাঠে নামার ঘোষণা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির পৃথক অংশ কি-না ভাবনার অবকাশ আছে বৈকি! এই দিনের পৃথক রাজনৈতিক কর্মসূচি কেবল দেশবাসীই দেখছে না, নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি সম্পর্কে সারাবিশ্বের নজরে রয়েছে। মাঠে নেমে জামায়াত-শিবির বিশৃঙ্ক্ষলা সৃষ্টি করবে না—এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না।
এছাড়া সরকার দল আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ জামায়াত যখন মাঠে থাকবে তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও ব্যাপক চাপ পড়বে। এই কর্মসূচিগুলো কেবল ঢাকার লোক দিয়েই হবে না, ঢাকার বাইরে থেকেও ‘ভাড়া করে’ লোক আনা হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বিপুল এই জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করা তখন কষ্টকর হয়ে পড়তে পারে প্রশাসনের।এমন অবস্থায় কি জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেবে পুলিশ—এই প্রশ্ন বড় হয়ে ওঠছে।
যদি অনুমতি দেওয়া না হয় তবে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে চোখ রাখা বিদেশিদের কাছে অন্য বার্তা দেওয়া হতে পারে। আবার মতিঝিলে অনুমতি দিলে শৃঙ্খলা রক্ষা কঠিন হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় যদি একান্তই তাদের অনুমতি দিতে হয়, তবে সেটা রাজধানীর বাইরে কোন অংশে দেওয়াই হতে পারে যুক্তির।