প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আমরা আমাদের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন নই,আমরা উদ্বিগ্ন আমাদের রাষ্ট্র নিয়ে। হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে। নেতারা বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে আমাদের অনেক নেতাকর্মী বাড়িতে যেতে পারে না। অনেকে দুই ঘণ্টা নিদ্রায় যেতে পারে না। সব সময় রাষ্ট্র বাহিনী আমাদের পেছনে ধাওয়া দিয়ে বেড়াচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল বলেন ঐতিহাসিকভাবে ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। স্বাধীনতার পরই ১৯৭৩ সালে ১ জানুয়ারি “ভিয়েতনাম দিবস” উপলক্ষে বের করা মিছিলে শিক্ষার্থী হত্যার মাধ্যমে যে কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হয়েছিলো তার ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত আছে।
নেতারা বলেন শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের অব্যাহত সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য, বইয়ের ইতিহাস বিকৃতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণ, উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আজ ধ্বংসের মুখের ঠেলে দেওয়া হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান বলেন অবাধে নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য ছাত্রদল যাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিবাদ করতে না পারে, সে উদ্দেশ্যে দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের থেকে বাইরে বের করে দেওয়া হচ্ছে।
ক্যাম্পাসে আজ সহ-অবস্থান বলতে কিছু নেই।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে সমালোচনা করে রাশেদ বলেন, ‘বিএনপি নাকি সহিংস রাজনীতি করার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করছে। প্রশাসনের অতি উৎসাহী গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তা প্রমাণ করার জন্য মাঠে নেমে পড়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাবির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানকে আটক করার দুই দিন পুরো পুরোনো অস্ত্র দেখিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
জিসানের খোঁজ নেওয়ার জন্য ছাত্রদলের কয়েকজন সিনিয়র তার বাসায় গেলে তাদেরকেও আটক করা হয়। সেদিন যদি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি না দিতো হয়তো তাহলে তাদের আটকের বিষয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বীকার করতো না।ছাত্রদল নেতা বলেন,আজকে রাষ্ট্র জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবার বদলে বাংলাদেশ হয়ে ওঠেছে কিছু আওয়ামী লুটেরার অবাধ লুটপাটের জায়গা, প্রশাসনের কিছু দলবাজ অতিউৎসাহী সদস্যের নাটক মঞ্চস্থ করার ক্ষেত্র।
তিনি বলেন, ‘মাগুরা ছাত্রদল নেতাকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মারাত্মকভাবে আহত করার পর তিনদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে গতকাল বুধবার মারা যান। এছাড়া গত কয়েকদিনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারাদেশে অবাধে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে ছাত্রনেতাদের।ছাত্রদল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক পরীক্ষা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে ছাত্রলীগ মারধর করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। পরে ভিসির কাছে বিচার চাইলে উল্টো ক্যাম্পাস থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়।
শিক্ষকরা আমাদের পিতার মতো, তারা যদি ন্যায্য বিচার না করেন তাহলে আমরা কোথায় যাবো?ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, ‘আজ এই অবৈধ সরকার তার মোসাহেবেরা মিলে আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা ভাবতে হবে। আমরা কোনোভাবেই উত্তর কোরিয়ার কাতারে এ রাষ্ট্রকে নিয়ে যেতে চাই না। বৈশ্বিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশকে নিয়ে ক্রমাগত উদ্যোগ জানাচ্ছে, স্যাংশন আসছে, ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। এর সবকিছুর মূলে হচ্ছে একতরফা অবৈধ চুরির নির্বাচন। একজন ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতায় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলোপ করেই আজ দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।তিনি বলেন যারা আজকে ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে মোসাহেবির নেশায় বুদ হয়ে, ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতাদের মত বক্তব্য দিয়ে নিজেদেরকে ফ্যাসিবাদের বড় দোসর প্রমাণের প্রতিযোগিতা করছেন তারা কেউ আইনের উর্ধ্বে নন। এসব অপকর্মের জন্য একদিন অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তানজিল হাসান, তবিবুর রহমান সাগর, রিয়াদ ইকবাল, নিজামউদ্দিন রিপন, মহিবুবব মিয়া, আক্তারুজ্জামান আক্তার, নাসির উদ্দিন নাসির, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুর রিয়াদ, ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক মানসুরা আলম, সহ-কর্মসূচি প্রণয়ন ও পরিকল্পা সম্পাদক তাইফুর রহমান ফুয়াদ প্রমুখ।