প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ দুর্নীতির দুই মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন খালেদা জিয়া। কারাবন্দী হওয়ার আগে থেকেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুসসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তবে কারাবন্দী অবস্থায় তার শরীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়। পরে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পান তিনি।
সরকারের নির্বাহী আদেশে দুই শর্তে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। শর্ত দুটি হলো- মুক্তিতে থাকার সময় খালেদা জিয়া নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং এ সময় তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর’-এর ধারা-৪০১ (১)-এ দেওয়া ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়। খালেদা জিয়া এখন গুলশানের নিজ বাসভবনে অবস্থান করছেন। বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বারবার আবেদন করা হলেও অনুমোদন পাননি।
এদিকে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। বছর গড়ালেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশ্ন উঠছে খালেদা জিয়ার রাজনীতি এবং নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে। কেউ বলছেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারলেও নির্বাচন করতে পারবেন না।আবার কেউ বলছেন, নির্বাচন রাজনীতি কোনোটাই করতে পারবেন না। দ্বিমুখী বক্তব্য দিচ্ছেন খোদ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-নেতারাই।এর আগে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম দাবি কেরে বলেন, রাজনীতি না করার শর্তে বেগম জিয়ার মুক্তি মিলেছে।
জাতীয় সংসদে গত ২৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি করেন। তিনি বলেন, রাজনীতি করবেন না- এমন মুচলেকা দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাসায় নেয়া হয়েছে।তার এ দাবির পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা।২২ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে বাধা নেই।
তিনি জেলে থেকেও দল পরিচালনা করতে পারবেন, বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে পারবেন। তবে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে আইন অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে বর্তমান নির্বাচনী আইনে যা আছে, তাই মানতে হবে। এখানে সরকার বা নির্বাচন কমিশনসহ কারও কিছু করার নেই।এদিকে অনুকূল পরিবেশ পেলে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি হলে অবশ্যই তিনি রাজনীতি করবেন।
এ নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য লাগে না। আইনমন্ত্রীর কথা যদি যদি সৎ হয়ে থাকে, তাহলে আমানউল্লাহ আমান একটা বক্তব্য দিয়েছিলেন, তারপর রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল কেন?১৯ ফেব্রুয়ারি (রোববার) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না- তার মুক্তির সময় এমন কোনো শর্ত ছিল না।
তবে দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।অন্যদিকে কৃষিমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিপরীত কথা বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, দণ্ড স্থগিতের শর্ত অনুযায়ী খালেদা রাজনীতি করতে পারবেন না।বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) কৃষিমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেখুন বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কেউ যদি দুই বছরের বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত হন তিনি নির্বাচন করতে পারেন না।
খালেদা জিয়া দুই বছরের অনেক বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার তো নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না।তিনি আরো বলেন, তাকে (খালেদা জিয়া) শর্তসাপেক্ষে ঘরে থাকার অনুমতি দিয়েছে তার স্বাস্থ্য বিবেচনায়। তার শারীরিক অবস্থা এবং বয়স বিবেচনায় তাকে শর্তসাপেক্ষে কারাগারের বাইরে ঘরে অবস্থান করার অনুমতি দিয়েছে। সেই শর্ত অনুযায়ী তিনি রাজনীতিও করতে পারেন না। শর্তের মধ্যে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন সেটি নেই। শর্তে বলা হয়েছে, তিনি ঘরে থেকে চিকিৎসা নেবেন।
অন্য কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবেন না, সেটি বলা আছে। সুতরাং তার রাজনীতি করতে পারারও কথা নয়।হাছান মাহমুদ বলেন, আইনমন্ত্রী রাজনীতি করতে পারবেন সেটি বলেননি, আমি খোঁজ নিলাম। আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ভিন্নভাবে কোনো কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অন্যরা কে কী বলেছেন আমি জানি না।এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। কারাদণ্ড ছাড়াও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় খালেদা জিয়াকে। জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।