প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে বিএনপি অনড় বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।শেষ পর্যন্ত কোথায় আপনারা সমাবেশ করবেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমাদের সিদ্ধান্ত যেখানে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সেখানে।
আমাদের দলের পক্ষ থেকে ডিএমপি কার্যালয়ে প্রতিনিধি দল গিয়ে অন্য যেখানে সমাবেশের প্রস্তাব দিয়ে এসেছে সেটাও তো পুলিশ প্রশাসন শুনছেন না। তারা(পুলিশ প্রশাসন)বলছেন তারা নাকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের বিষয়ে অনড়। পুলিশ প্রশাসন যদি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনড় থাকে আমরা এখানে (নয়াপল্টনে) সমাবেশের বিষয়ে অনড়।রিজভী বলেন তারা হয়তো অনেকভাবে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করতে পারে আমাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমরা মনে করি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিরাপদ নয়।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ নিয়ে পুলিশের টানা হেঁচড়ায় দেশবাসী ক্ষুব্ধ। বিএনপির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশের কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য এক পরিকল্পিত নীলনকশায় মেতেছে আওয়ামী সরকার। সমাবেশের ভেন্যু নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার দোলাচল তৈরীর পরিস্থিতি সরকারের অসৎ অনাচারের বহিঃপ্রকাশ।রিজভী বলেন,‘সব দেশে সব কালে সমাবেশ আহ্বানকারীরা সবসময় সেটিকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য শান্তি ও স্থিতির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।
সমাবেশ জনগণের কাছে বক্তব্য পৌঁছার একটি অন্যতম পদ্ধতি। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার এতটাই গণবিচ্ছিন্ন যে, অসংখ্য মানুষের শব্দে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। গণতন্ত্রে দল, মত, চিন্তা নির্বিশেষে সকলের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটি বিশ্বাস করেন না। তিনি একদলীয় একমাত্রিক কর্তৃত্ববাদী নিষ্ঠুর শাসনকে রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সেজন্য শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে মানবতার অস্তিত্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন।
বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে মিথ্যা প্রশাসনের বাড়াবাড়ি, গুজব রটানো, রঙ চড়িয়ে কথা বলা যেন সরকারেরই মানসিক বৈকল্যের বর্ধিত প্রকাশ। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন ঢাকার গণসমাবেশকে নিয়ে টালবাহানায় আবারও প্রমাণিত হলো অগণতান্ত্রিক শক্তির দোসররা কখনই গণতান্ত্রিক শক্তির মিত্র হতে পারে না। বিএনপির সাথে অবৈধ সরকার শত্রুতা করতে পারে, কিন্তু তাদেরকে মনে রাখতে হবে বিএনপির বন্ধুর সংখ্যা অসংখ্য। জনগণই বিএনপির সবচেয়ে বড় বন্ধু। এত ষড়যন্ত্র চক্রান্তের মাঝেও বিএনপি এখনও দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।
রিজভী বলেন বিএনপির গণসমাবেশকে নিয়ে সরকারের কপালে কেন এত দুশ্চিন্তার ভাঁজ? ওবায়দুল কাদের সাহেবরা কেন এত বিচলিত হয়ে পড়েছে? আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র অভিলাষী নেতারা গণসমাবেশকে নিয়ে বানোয়াট গল্প প্রচারে নেমেছে। আর এই বানোয়াট গল্পকে নিয়ে পুলিশ প্রশাসন অতি উৎসাহী হয়ে ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে ‘ক্র্যাকডাউন’ চালাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি চলছে গ্রেফতার, গ্রেফতারের নামে পুলিশী তল্লাশী, আসবাবপত্র ভাংচুরসহ পরিবারের লোকজনের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ। এরা গণতন্ত্রকামী জনগণকে দাবিয়ে রাখার জন্য সরকারের রাষ্ট্রীয় দমনযন্ত্রকে ব্যবহার করছে বিএনপির ওপর। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যে, বিএনপি নেতাকর্মীদের বাঁচা অর্থ কায়ক্লেশে বেঁচে বর্তে থাকা।
তিনি বলেন পুলিশের কাছে এখন নিরপেক্ষতা কোন বিবেচ্য বিষয় নয় বরং দলীয় আনুগত্য গুরুত্ব পেয়ে থাকে। এদের বিবেচনাশক্তি থাকলে বিএনপির ঢাকার গণসমাবেশ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতেন না। আজকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ চলছে বলেই রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গকে দলীয় চেতনায় সংগঠিত করা হয়েছে। বিচার ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে না। দলীয়করণের রাজনীতি গণতান্ত্রিক রাজনীতি নয়। বিরোধী দল শত্রুদল নয়। বিএনপির রাজনীতি জনস্বার্থকেন্দ্রীক। জনসমাবেশে জনগণের পক্ষেই কথা বলা হবে।
নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি আরও বলেন এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর রাত থেকে ৪ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত ১০৩১ (প্রায়)। ৪ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আজ ৫ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত ২৮৪ (প্রায়)। গত ৩০ নভেম্বর রাত থেকে আজ ৫ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত (৫ দিনে) ১৩১৫ (প্রায়) ৫ ডিসেম্বর দুপুর থেকে ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮৫জন। মোট ১৪০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, যুববিষয়ক সহসম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।