বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এ হামলা

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ সারাদেশে পূজামন্ডপে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগস্তদের পাশে দাঁড়াতে এবং সরেজমিন তদন্তে দুইটি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেয়া এই সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কুমিল্লাসহ সারাদেশে পূজামন্ডপে হামলার ঘটনায় বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে দুইটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

একটি হচ্ছে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের কাছে গিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে একটি কমিটি। এই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আরেক কমিটি হচ্ছে তদন্ত বিষয়ক। বিভিন্ন জায়গায় যেসব হামলা ও ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং করতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি করা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কমিটি দুটো অতিদ্রুত উপদ্রুত এলাকাগুলো সফর করে কেন্দ্রে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এটা স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটি দুইটি দুই-একদিনের মধ্যে তাদের কাজ শুরু করবে। গত ১৭ অক্টোবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। এই ভার্চুয়াল বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

সভায় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের সময়ে কুমিল্লায় কোরআন শরীফের অবমাননা এবং পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন দলের মদদপুষ্ট দুষ্কৃতকারীদের পূজামন্ডপে আক্রমণ, ভাঙচুর এবং তার ধারাবাহিকতায় চাঁদপুর, নোয়াখালীর চৌহমুনী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় স্থায়ী কমিটি মনে করে, বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার নিজেরাই এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সংকট সৃষ্টি করছে। স্থায়ী কমিটি অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য সকল নাগরিককে সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার নিজেরাই এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সংকট সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। রবিবার রাতে ৮টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় নিম্ন বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়।

১। সভায় বিগত ১৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।

২। সভায় মহাসচিব দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ পরিস্থিতি সদস্যবৃন্দকে অবহিত করেন।

৩। সভায় সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সময়ে কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন শরীফের অবমাননা এবং পরবর্তীতে শাসক শ্রেণির মদদপুষ্ট দুষ্কৃতকারীদের পূজামন্ডপে আক্রমণ, ভাঙচুর এবং তারই ধারাবাহিকতায় চাঁদপুর, গাজীপুর, নোয়াখালীর চৌমহনী, চট্টগ্রাম, ঢাকায় পুলিশের নির্বাচারে গুলিবর্ষণ এবং নিরীহ পথচারী শিশুসহ কয়েকজনের মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

সভা মনে করে, বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার নিজেরাই এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সংকট সৃষ্টি করছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলে পরিস্থিতি জটিলতর হয়েছে। সভা মনে করে, ক্ষমতাসীনরা তাদের অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘ স্থায়ী করার লক্ষ্যে বিভাজনের রাজনীতি করছে। রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির কারণেই এই রক্তপাত, লুঠতারাজ চলছে।

সভা সনাতন ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানায় এবং সকল ধমের্র মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে সরকারের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করা হয়। অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানানো হয়। কোনও তদন্ত ছাড়াই বিএনপি এর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে বাড়ি-ঘরে পুলিশী তল্লাসী ও অভিযানের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে এই ধরনের অপকর্ম করা হচ্ছে বলে মনে করা হয়।

সভায় এই ধরনের হীন অপকৌশলের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সভায় দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য সকল নাগরিককে সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। সভায় উপদ্রুত এলাকা গুলোতে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনা গুলোর তদন্ত করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যরিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে আরো একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দুটো অতিদ্রুত উপদ্রুত এলাকা গুলো সফর করে কেন্দ্রে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৪। সভায় ইন্টারনেটসহ ডিজিটাল সকল মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সরকার ক্ষমতার যে অপপ্রয়োগ চালাচ্ছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। জনগণের মৌলিক অধিকার, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার আহ্বান জানানো হয়। এই বিষয়ে পরবর্তীতে কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৫। সভায় কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্যদের মতামত এবং পেশাজীবী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের মতামতের সমন্বয়ে একটি সারমর্ম উপস্থাপনের জন্য মহাসচিবকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here