রাজধানীর বাড়িতে বাড়িতে ঝুলছে ‘টু লেট’ ভাড়াটিয়া খুঁজে পাচ্ছেন না বাড়িওয়ালারা

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানের ৬ তলা বাড়ির মালিক চৌধুরী জামাল ভূঁইয়া। পরিবারের জন্য এক তলা ও বাকি পাঁচ তলায় ৩টি করে মোট ১৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। নিজের জমানো টাকা আর ব্যাংক লোন নিয়ে বাড়িটি বানিয়েছেন তিনি।

ভাড়া বাবদ যে টাকা পেতেন তা দিয়ে নিজের সংসার ও ব্যাংক লোন ভালোভাবে চালাতে পারতেন। তবে মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এখন বিপাকে পড়েছেন। ১৮টি ভাড়া দেয়া ফ্ল্যাটের মধ্যে ইতিমধ্যে দুই মাস যাবত ৩টি ফ্ল্যাট ফাঁকা পড়ে আছে৷ চলতি মাসে আরও ৪টি ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া চলে যাবে। আগামী মাসে আরও দুইটি ফ্ল্যাট খালি হবে বলে জানান তিনি। চেষ্টা করেও নতুন ভাড়াটিয়া খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।

এদিকে বাকি ভাড়াটিয়াদের জন্য ভাড়ার পরিমাণও কমাতে হয়েছে। এখন বাসা ভাড়া বাবদ যে টাকা পান তা দিয়ে ব্যাংক লোন, পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল নিজের সংসার, বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীর বেতন গৃহপরিচারিকার বেতন পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন চলতে থাকলে আগামীতে আরও বিপাকে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন চৌধুরী জামাল ভূঁইয়া। শুধু জামাল ভূঁইয়া নয় এ চিত্র প্রায় রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ বাড়িওয়ালাদের।

রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই বাড়িতে বাড়িতে ঝুলছে ‘টু লেট’। এ এলাকার কোনো কোনো বাড়ির মালিক তিন মাস ধরে ‘টু লেট’ ঝুলিয়ে রেখেও ভাড়াটিয়া খুঁজে পাচ্ছেন না। ভাড়াটিয়া খুঁজে না পেয়ে কোনো কোনো বাড়ির মালিক বর্তমানে যেসব ভাড়াটিয়া আছেন তাদের কাছ থেকে কিছু ভাড়া কম রাখছেন। অবশ্য এমন বাড়ির মালিকও আছেন, যারা মাসের পর মাস বাসা ফাঁকা থাকার পরও ভাড়া কমাচ্ছেন না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের পর বছর বাড়িভাড়া বেপরোয়াভাবে বাড়ানো হয়েছে। এতে মানুষের আয়-ব্যয়ের প্রকট অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। করোনার সময় পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ায় নিরুপায় হয়ে মানুষ ঢাকা ছাড়ছে, তাতে তৈরি হচ্ছে ভাড়াটিয়া সংকট। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার টিকে থাকতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সংকট সামনের দিনগুলোতে আরো প্রকট হতে পারে।

ভয়াবহ করোনার কারণে দুস্থ ও শ্রমজীবী মানুষদের সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন মধ্যবিত্তের মানুষ। এর মধ্যেই কেউ কেউ চাকরি হারিয়েছেন, কারো বেতন কমেছে। নিম্ন ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের আয় কমেছে। অন্যদিকে সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কবে খুলবে তারও ঠিক নেই। কর্মহীন হয়ে পড়ায় রাজধানী ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে। জানা যায়, ইতিমধ্যে প্রায় এক লাখের মতো মানুষ পরিবার নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন। এ কারণে রাজধানীর বাসা মালিকরাও পড়েছেন ভাড়াটিয়া সংকটে, বেড়েছে তাদের দুশ্চিন্তা।

রাজধানীর ধানমণ্ডির বাড়িওয়ালা রাজিয়া সুলতানা। করোনা ভাইরাসের মহামারি শুরুর আগে থেকেই নিচতলার ফ্ল্যাট খালি ছিল তার। গত চার মাসে নতুন ভাড়াটিয়া না পাওয়ায় বাসা ভাড়া দিতে পারেননি তিনি। চলতি দুর্যোগে দ্বিতীয় তলার বাসা ছেড়ে দিয়েছে ভাড়াটিয়া। ফলে নতুন করে বাসা খালি হয়েছে। এদিকে যে ভাড়াটিয়া আছে তারাও ঠিকমতো ভাড়া দিচ্ছেন না। করোনার কারণে বাসা ভাড়া কমিয়েছেন তিনি। তারপরও আরও কমানোর দাবি ভাড়াটিয়াদের।

গ্রীণ রোডের বাড়ির মালিক হালিম হোসেন। তিনি বলেন, আমার ভাড়াটিয়াদের এপ্রিল ও মে মাসের ভাড়া তিন হাজার করে ছয় হাজার টাকা মাফ করে দিয়েছি। এছাড়া জুন মাস থেকে আগের ভাড়া থেকে এক হাজার টাকা করে কমিয়ে দিয়েছি। এরপরও দুই মাস ধরে আমার তিনটি ফ্ল্যাট ফাঁকা। এ পরিস্থিতিতে নতুন ভাড়াটিয়া পাওয়া বেশ সমস্যার হয়ে গেছে।

জানা গেছে, কম টাকায় নতুন বাসার সন্ধান করছে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার। ঢাকা উদ্যানের বাসিন্দা আশফাক সাঈদ বলেন, একটু নিরিবিলি আর কম খরচের জন্য আমি তিন বছর আগে এই এলাকায় থাকতে শুরু করি। করোনার কারণে এখন এই এলাকায় ভাড়াটিয়াদের উপস্থিতি বাড়ছে। মাত্র সাত হাজার থেকে আট হাজার টাকার মধ্যে তিন রুমের বাসা পাওয়া যায়।

রাজধানীর আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকায় থাকতেন কুষ্টিয়ার ছেলে আলফাজ রহমান। একটি ছোট প্রতিষ্ঠানে চাকরির বেতন, পাশাপাশি টিউশনি করে চলে যেত। কিন্তু কয়েক মাস টিউশনি বন্ধ আর অফিসের বেতনও ঠিকঠাক না পেয়ে এলোমেলো হয়ে গেছে তার জীবন। রাজধানীতে টিকে থাকতে তাই জুনের শুরুতে উঠেছেন রাজধানীর মাদারটেক এলাকার একটি বাসায়। আগে যেখানে একাই বাসা ভাড়া বাবদ গুনতেন সাত হাজার টাকা, এখন দুজন মিলে একই খরচে থাকছেন।

ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার  বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, অনেকেরই আয় কমেছে। এ অবস্থায় বাসা ভাড়া পরিশোধ করা অনেকেরই জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা প্রথম থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি, নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য কিছুটা হলেও বাড়ি ভাড়া মওকুফ করার জন্য, কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনছেন না।

অনেক মানুষ বেকার এবং আয় কমার কারণে তাদের পরিবারকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন, আর আয়ের আশায় তিনি নিজে কোনো একটি মেসে বা কম টাকা ভাড়ার বাসায় উঠেছেন। সত্যি কথা বলতে, মানুষকে খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। যে কারণে অনেকেই বাসা ছেড়ে দিয়েছেন বা দিচ্ছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here