দীর্ঘ ২৭ বছর পর হতে যাচ্ছে ছাত্রদলের কাউন্সিল, প্রার্থী ডজনেরও বেশি ।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ২৭ বছর পর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

কাউন্সিল সামনে রেখে ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছেন ডজনেরও বেশি প্রার্থী। জেলা শাখার শীর্ষ নেতাদের (ভোটার) সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, জেলা ও মহানগরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তৃণমূলের প্রতিটি ইউনিটকে ঢেলে সাজানোসহ তারা নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তৃণমূল নেতারাও প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে কী ভূমিকা, বিগত আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন কি না- এসব বিচার-বিশ্লেষণ করে তারা পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চাইছেন।

কাউন্সিলের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগী নেতারা যাতে ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসতে পারেন, সেজন্য বিএনপির হাইকমান্ড কয়েকটি পরিকল্পনা নিয়েছে। সূত্র জানায়, এর অংশ হিসেবে প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে অনেকটা গোপনে একটি কমিটি কাজ করছে। ইতিমধ্যে তারা স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সহযোগিতা নিয়ে কাজ প্রায় শেষ করেছেন। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে তিনটি কমিটির বাইরে আরেকটি কমিটি কাজ করছে। হাইকমান্ডের নির্দেশে তারা ইতিমধ্যে অন্তত ৩০ প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছেন।

বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের পারিবারিক তথ্যও নিচ্ছেন। প্রার্থী বিবাহিত কি না, তার বিরুদ্ধে কতটি মামলা আছে, পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয়সহ ৯টি বিষয়ে তথ্য চেয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড। এরই মধ্যে একটি খসড়া প্রতিবেদনও পাঠানো হয়েছে। আরও খোঁজখবর নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন শিগগিরই পাঠানো হবে। তিনি বলেন, আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা এবং একটি বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব উপহার দিতে চাই।

জানা গেছে, ১৯৯২ সালে পঞ্চম কাউন্সিলে সরাসরি ভোটে রুহুল কবির রিজভী ও এম ইলিয়াস আলী যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর পরের সব কমিটিই ছিল ‘পকেট কমিটি’। এগুলো প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়।

পুনঃতফসিল অনুযায়ী আজ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে। এটি রোববার পর্যন্ত চলবে। ১৯ ও ২০ আগস্ট মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হবে। ৩১ আগস্ট প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ২২-২৬ আগস্ট যাচাই-বাছাই শেষে ২ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটের জন্য প্রচার চালাতে পারবেন। নির্বাচন পরিচালনার জন্য ছাত্রদলের সাবেক নেতা খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি এবং শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল কমিটি গঠন করেছে বিএনপি।

পুনঃতফসিল ঘোষণার পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী নেতারা জেলায় জেলায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ তো আছেই। শুধু ভোটারই নন, সংশ্লিষ্ট জেলা-মহানগর এলাকার প্রভাবশালী বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তারা। তবে ‘বিশেষ সিন্ডিকেট’ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিতে প্যানেল করার কাজেও নেমে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে তৃণমূল নেতাদের মতে, ভোট হলে সিন্ডিকেটমুক্ত হবে এবারের কমিটি। যোগ্য ও পরীক্ষিতরাই ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসবে। ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. কায়েস বলেন, দলের দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন, ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য তাদের প্রাধান্য দেব। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে যে সবচেয়ে ত্যাগ স্বীকার করতে পারবে, তাকে প্রাধান্য দেব। বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বলেন- যোগ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারাই ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসবে। যারা খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে ছিলেন এবং আগামী দিনেও থাকবেন, তাদের পক্ষে আমরা থাকব।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী যারা : সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- বিলুপ্ত কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল আলম টিটু, জাকির হোসেন, সহ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মামুন খান, বৃত্তি ও ছাত্রকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মুক্তিযুদ্ধ গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম সাগর, স্কুলবিষয়ক সম্পাদক আরাফাত বিল্লাহ, সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল আলম ফকির লিঙ্কন, ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক আজিম উদ্দিন মেরাজ, সহ-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক ডালিয়া রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সিনিয়র সহসভাপতি তানভীর রেজা রুবেল, সহসভাপতি আমিনুর রহমান আমিন, সাজিদ হাসান বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, তানজিল হাসান, শাহ নেওয়াজ, ইকবাল হোসেন শ্যামল, রিজভী আহমেদ, রিয়াদ মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক মুতাছিম বিল্লাহ।

সভাপতি প্রার্থী আসাদুল আলম টিটু বলেন- যোগ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের কাউন্সিলররা ভোট দিয়ে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচন করবে বলে প্রত্যাশা করছি। আরেক সভাপতি প্রার্থী মামুন খান বলেন, আমার মাতৃতুল্য আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ঢাকার রাজপথে কার্যত এবং দৃশ্যমান আন্দোলনের সূচনা করতে চাই। আরেক সভাপতি প্রার্থী সাজিদ হাসান বাবু বলেন, রাজপথের আন্দোলনে সবসময় ছিলাম, একাধিকবার জেল খেটেছি, নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আশা করি, কাউন্সিলররা সবকিছু বিবেচনা করে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আমিনুর রহমান আমিন বলেন, বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম, আগামী দিনেও থাকব। আশা করি, কাউন্সিলররা সব বিবেচনা করে ভোট দেবেন। আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আবু তাহের বলেন, বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা রাজপথে ছিলেন এবং নির্যাতিত হয়েছেন, কাউন্সিলররা তাদের নির্বাচিত করবেন।

ছাত্রদলের নেতৃত্বে ত্যাগী নেতাদের আনার জন্য তিনি ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, প্রিয় নেতা তারেক রহমান ছাত্রদলের আসন্ন কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রের একটি যোগসূত্র স্থাপন করেছেন। একে কাজে লাগিয়ে ছাত্রদলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে দেশনেত্রীর মুক্তি আন্দোলনকে বেগবান করব। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তানজিল হাসান বলেন, ‘মা’ আপসহীন নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ও সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও কাজ করব। আমি বিশ্বাস করি, কাউন্সিলররা ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের ভোট দিয়ে নেতৃত্বে আনবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here