প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে পাবে দেশের জনগণ। রবিবার (২৫ মে) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) আয়োজিত দলটির ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এর আগে শনিবার অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ হয়।
তারেক রহমান বলেন, ‘‘অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধানের সঙ্গে দেখা করে রাজনৈতিক দলগুলো আবারও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ সুস্পষ্ট দিনক্ষণে ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। বিএনপির দাবি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।তিনি আরও বলেন, ‘‘জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ আমরা যারা একসঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছি, তাদের সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রেখেছি।
ফলে দেশে-বিদেশে সমন্বিত দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে জনগণ শীঘ্রই দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে—আজ এনপিপির এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই প্রত্যাশা আমি রাখছি। তিনি বলেন, ‘‘অন্তবর্তীকালীন সরকারকে নিয়মমাফিক বাজেট ঘোষণা করতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, প্রতিটি বছর জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঘাটতি বাজেট হচ্ছে মূল প্রতিবন্ধকতা। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের হয়তো সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই।
তবে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের ভূমিকা মুখ্য। এমন বাস্তবতায় বাজেট পাসের ঠিক আগ মুহূর্তে অন্তবর্তীকালীন সরকার হঠাৎ করেই এনবিআরের সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যে একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য খুব ভালো বিষয় নয়। এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে সকলেই বিশ্বাস করে এবং বিশেষ করে গণতন্ত্রকামী জনগণ।
তারেক বলেন দেশে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত থাকলে সরকারের পক্ষে ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করা সহজ হয় না। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সরকারের চরিত্র যাই হোক, সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা না গেলে ক্ষমতাসীন সরকার হয়তো নিজেদের অজান্তেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে।এই কারণে হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করেও নাগরিকদের সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে।
প্রতিটি নাগরিককে নিজেদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার থাকতে হবে। দেশের জনগণ সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকারকে অবশ্যই জনগণের ন্যায্য দাবি শুনতে ও মানতে বাধ্য। তারেক রহমান বলেন, ‘‘হাজারো শহীদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক বৈধতার হয়তো সংকট নেই। তবে অবশ্যই অন্তবর্তীকালীন এই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নয়।সরকার যেহেতু জবাবদিহিমূলক নয় সেহেতু নৈতিক কারণেই সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন।
জনগণকে অন্ধকারে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনিশ্চয়তায় রেখে শেষ পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনাই কার্যকর ও টেকসই হয় না, হবেও না।তিনি আরও বলেন, ‘‘বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিষয় নয়, দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় একদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অপরদিকে এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে একরকম অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন।
একারণে জনগণ প্রতিদিন আমরা দেখছি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছে। যদিও দুঃখজনকভাবে তাদের এই দাবি-দাওয়া শোনার কেউ নেই এই মুহূর্তে। তিনি বলেন, ‘‘আমি একটি বিষয় গণতন্ত্রকামী জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই—বাংলাদেশে জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় যেকোনো ধরণের অজুহাত কিংবা গড়িমসির সুযোগ নিয়ে পতিত, পলাতক, পরাজিত স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। এটি আজকে এখানে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যেও ফুটে উঠেছে।
তবে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট তাবেদার অপশক্তির পুনর্বাসনের পথরোধ করা সম্ভব। আমরা নিজ নিজ দলীয় আদর্শ এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রক্রিয়াগত বিরোধ দৃশ্যমান হলেও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দেশ ও জনগণের স্বার্থে ফ্যাসিবাদ মোকাবিলায় একতরফা ইস্যুতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বিগত ৫ আগস্টের মতোই ঐক্যবদ্ধ।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে, মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাহদী আমিন, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, ভাসানী জনশক্তির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার একাংশের খন্দকার লুৎফুর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।





