প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন,আপনারা ছাত্রদেরকে কি ছবক দিচ্ছেন? আপনারা তো তাদেরকে আরও একটা ফ্যাসিবাদের প্রলোভন দেখাচ্ছেন। এইটা ঠিক না। উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গত ১৫ /১৬ বছরের আন্দোলন আর জুলাই-আগস্ট আন্দোলন আপনারা বিভাজন করছেন কেন? এখানে সব রক্ত স্রোত একই মোহনায় সমুদ্র গিয়ে মিলিত হয়েছে।
এই রক্ত স্রোতের মিলিত মোহনায় শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছে। আপনারা যে কয়দিন আছেন মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করুন। এখনো মিনিকেট চাউলের দাম ৮৫ টাকা। আপনারা এদিকে নজর দিন। আপনারা ছাত্রদেরকে কি ছবক দিচ্ছেন? আপনারা তো তাদেরকে আর একটা ফ্যাসিবাদের প্রলোভন দেখাচ্ছেন। এইটা ঠিক না। সোমবার (১৭ মার্চ) নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে মাগুরার আছিয়ার ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে এক সমাবেশ তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, অপরাধীদের সঠিক বিচার না হলে আমাদের সমাজ এগিয়ে যাবে না। আমরা আদিম অরণ্যের মধ্যে বসবাস করবো। আজকের এই আধুনিক যুগে এসে যখন মানুষ মহাবিশ্বে আরও কোন গ্রহে মানুষের অস্তিত্ব আছে কিনা, প্রাণীর অস্তিত্ব আছে কিনা এটা খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর এই সময় বাংলাদেশে একটি শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তাও আবার নিজের আত্মীয়র দ্বারা। এর চেয়ে বেদনাময় ও কষ্টের আর কি আছে। তিনি বলেন, যখন একটি রাষ্ট্রে অপরাধীদের সংখ্যা বেড়ে যায় তখন এই পরিস্থিতি হয়। শেখ হাসিনার ১৬-১৭ বছর আমল ছিল অপরাধীদের অভয় অরণ্য।
মাদক ব্যবসায়ী, মানব পাচারকারী, চোরা কারবারি, ক্যাসিনোদের আধিপত্য ছিল আমাদের সমাজে। কালো টাকার বিস্তরের কারণেই এই অপরাধগুলো বাড়ছে। শেখ হাসিনার আমলে এত ধর্ষণ ও নির্যাতন হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। নুসরাত আক্তার সহ একটার পর একটা মেয়ের জীবন চলে গেছে। নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আর এসব অপরাধ করেছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, সমাজের অপরাধীদেরকে শেখ হাসিনা আশ্রয় দিয়েছে যার কারণে সমাজে অপরাধ বেড়েছে, ধর্ষণ বেড়েছে। শেখ হাসিনার আমলে এত টাকা পাচার করেছে যে একজন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দুই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে। এটাতো একটা ক্রাইম। ক্রাইম করে তারা মুক্ত ভাবে ঘুরে বেড়ায়। হাসিনার আমলে ধর্ষণকারীরাও তো মুক্ত হয়েছে। নির্দ্বিদায় ঘুরে বেড়িয়েছে। তিনি বলেন ,দুর্নীতি লুটপাটের টাকা এখনো সমাজে রয়েছে, তার কারণ হিসেবে বলা যায় একজন সন্ত্রাসী সাজ্জাদের স্ত্রী বলেছেন, টাকা দিয়ে তার স্বামীকে জেল থেকে বের করে আনবেন।
টাকার কি গরম? টাকা দিয়ে আদালত কিনে নিবেন, পুলিশ কিনে নিবেন, এমনকি সবকিছুই করবেন। এটা কিন্তু শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের রেশ। শুধু কি সাজ্জাদ একজনই? অনেক লুটপাটকারী টাকা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। এরাই দেশকে অস্থিতিশীল করবে, বিকৃত করবে যাতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যারা ছিল তাদের নিয়ে সমালোচনা করা যায় । আর দেশ থেকে যারা ভারতে গিয়ে পালিয়ে আছে তারা এগুলো করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনা অবলীলায় ভারতীয় যে সংস্কৃতি , সেটি চালু রেখেছিল। আমাদের দেশে ভারতীয় সব চ্যানেল অবলীলায় দেখায় , কিন্তু কি দুর্ভাগ্য আমাদের চ্যানেল ওখানে দেখা যায় না, অনুমতি দেয়নি। আর ভারতীয় আগ্রাসন সংস্কৃতি দেখে দেখে আমাদের সমাজের উপর প্রভাব পড়েছে, নারীর উপর নিপীড়নের যে বিষয়টি ওখান থেকেই উঠে এসেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এদেশের জনগণের গভীর বিশ্বাস, আপনি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। কিন্তু যদি এটা গড়িমসি হয়, তবে ভিন্নমাত্রা নেবে। আপনার উপদেষ্টারা ছাত্রদের বলেছেন, এভাবে ৫ বছর দেশ চালালে আরও উন্নতি হবে। তবে কি নির্বাচনের প্রয়োজন নেই? গণতন্ত্রকামী দল বিএনপি গত ১৫-১৬ বছর ধরে আন্দোলন করেছিল।
বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই বিএনপি আন্দোলন করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরাও জীবন দিয়েছে। গুমের স্বীকার হয়েছে। সেই আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে আগস্টে। যেখানে শিশু নারী পুরুষ সবাই আন্দোলনের অংশগ্রহণ করে শেখ হাসিনাকে পতন করেছে।