মুক্তিযুদ্ধাদের ছোট করে এদেশে রাজনীতি কখনোই সফল হবে না : রুহুল কবির রিজভী

0
মুক্তিযুদ্ধাদের ছোট করে এদেশে রাজনীতি কখনোই সফল হবে না : রুহুল কবির রিজভী

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ছাত্রশিবিরের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করে আপনারা যদি এদেশে রাজনীতি করতে চান, সেই রাজনীতি কখনোই সফল হবে না। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর রমনাস্থ ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) এর সেমিনার হলে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন প্রকৌশলীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (এ্যাব)। রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা দেখছি নানা ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিভক্ত তৈরি করা হচ্ছে। ৫ই আগস্টের পরে এটা মানুষ মেনে নেবে না, ৫ই আগস্ট একটি দুনিয়া কাঁপানো গণ অভ্যুত্থান এর রূপ বৈশিষ্ট্য এক ধরনের আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আরও বড় ত্যাগ ছিল।

৩০ লক্ষ মা বোনের আত্মদান, ওইটাকে ছোট করে এইটাকে বড় করলে এটা মানুষ ভালোভাবে নিবে না। ছাত্রশিবিরের একটা প্রকাশনার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করা হয়েছে। এটা কেন করা হয়েছে? আপনারা যদি এই কাজগুলো করেন তাহলে মানুষের চিন্তা চেতনায় একধরনের একটা প্রতিক্রিয়া হবে। তিনি বলেন, জবরদস্তি করে একটি গোষ্ঠী তন্ত্র তৈরি করেছিলেন শেখ হাসিনা।

এই গোষ্ঠীতন্ত্র তৈরি করে শেখ হাসিনা নিজে নিজের বাবা নিজের মা নিজের বোন এরা সবাই হচ্ছে একটি জাতির কীর্তিমান সন্তান আর অন্য সবাই হচ্ছে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য সবাই তাদের অপমানের শিকার। বরিশালের যেতে বরগুনায় পরপর তিনটা ব্রিজ আছে একটা ব্রিজের নাম শেখ কামাল, আরেকটা ব্রিজের নাম শেখ জামাল, অন্য আরেকটির নাম শেখ হাসিনা। এটা একটা অদ্ভুত বিষয় শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, এরা ছাড়া কি বাংলাদেশে আর কোন কীর্তিমান মানুষ নেই? কবি জসীমউদ্দীন নেই? কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন না? এস এম সুলতান ছিলেন না? কত বীরশ্রেষ্ঠ রয়েছে একটি মানুষের নাম নেই অথচ একটি পরিবারের তিন ভাইয়ের নাম পরপর তিনটা ব্রীজের নাম।

এটা কি কোন দেশ ছিল? এটা ছিল একটি গোষ্ঠীতন্ত্র পরিবারতন্ত্রের শাসন। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানির নামে নভোথিয়েটার সেটা কেউ তুলে দেয়া হয়েছিল? অথচ তার বাবা ছিল মওলানা ভাসানী শিষ্য।[related] কারাগারে বসে দরবেশ ঝাড়ফুঁক দিচ্ছেন মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, কি ভয়ংকর জমিদার তন্ত্রের মধ্যে আমরা বসবাস করেছি। এখন শুনি তিনি(শেখ হাসিনা) একটি দেশ থেকে কত কিছু করবেন। জেলখানায় একজন দরবেশ আছেন, সেখান থেকেই তিনি মাঝেমধ্যে ঝাড়ফুঁক দিচ্ছেন। আমি জানিনা আইনি প্রক্রিয়া কিভাবে চলছে সেখান থেকে তারা এসব কথা বলছে।

নিশ্চয়ই কারাগারের মধ্যে তাদেরকে এত সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে তারা সেটা ব্যবহার করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। মাদক সেবী,ডাকাত গুন্ডাদের সাথে আমাদেরকে শুয়ে রাখা হয়েছিল ডিবি অফিসের সেই আয়না ঘরে। দিনের পর দিন আমাদেরকে সেখানে থাকতে হয়েছে।অথচ তারা কারাগার থেকে বলছে শ্রমিক নেমে যাবে এটা হবে সেটা হবে। এই পরিস্থিতি চলতে পারে না এটা হতে পারে না। সকল হত্যা এবং গুমের নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এত নির্মমতা, এত নিষ্ঠুরতা গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য যত ধরনের রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা যায় শেখ হাসিনা তাই করেছে।

সকল হত্যা এবং গুমের নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা। তার নির্দেশনা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এত সাহস ছিল না এইভাবে তারা গুম করবে খুন করবে। রাষ্ট্র থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে,রাষ্ট্র থেকে প্রটেকশন দেয়া হয়েছে।রাষ্ট্র থেকে বলা হয়েছিল তুমি এই কাজগুলো কর বিরোধীদলের নেতাকর্মীদেরকে স্তব্ধ করে দাও অদৃশ্য করে দাও পৃথিবী থেকে যাতে তারা হারিয়ে যায় এই ব্যবস্থা তোমরা করো তোমাদের পুরস্কার হবে। সেই পুরস্কার তো আমরা দেখতে পেলাম একজন পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীরের সম্পত্তি এক হাজার কোটি টাকা পাচার সহ। এই বেনজীর সাহেব যত জমি দখল করেছে তার ৬০% জমি হচ্ছে হিন্দুদের।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার সংস্কারের কথা বলছে সংস্কার আরও হোক যাতে কোন স্বৈরাচার শক্তি আর কোনদিন মাথা চাড়া দিয়ে না ওঠে। আইনের শাসন এমনভাবে নিশ্চিত করা হোক যাতে সত্যিকার অর্থেই যাতে কোন ভুক্তভোগী আদালতে গেলে ন্যায় বিচার পায়। আর এটা করার জন্য খুব বেশি সময় ব্যয় করার মানে হয় না। মানুষ এই সংস্কারগুলো চায় তাদের মুখে মুখে এগুলো আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফসল।

মইনুদ্দিন ফখরুদ্দীনকে শেখ হাসিনা বলেছে তার আন্দোলনের ফসল আর আমরা বলবো যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফসল।রক্ত ঝরা আন্দোলন এবং শিশু-কিশোরদের আত্মদানের বিনিময়ে সেই আন্দোলন।এই আন্দোলন ছিল অত্যন্ত মহিমান্বিত এখানে ছোট বাচ্চা আহাদ ফারহান থেকে শুরু করে মুগ্ধ আবু সাঈদ তাদের যে আত্মদান এটাতো মহিমান্বিত। এই আত্মদানের সরকারকে তো অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এমন সংস্কার আনতে হবে যে সংস্কারগুলো চিরদিনের জন্য ফ্যাসিবাদের যেন কবর রচিত হয়।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে রিজভী বলেন, জিয়াউর রহমান বহুমুখী প্রতিষ্ঠান। স্বল্প পরিসরে তাকে নিয়ে আলোচনা করা কঠিন। তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বিরাট বিস্তৃত। তিনি একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। যথা সময়ে দেশের মানুষের প্রয়োজন বুঝতে পেরেছিলেন। তার গুণাবলী ছিলো অপরিসীম।মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৎকালীন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন দ্বিধান্বিত। সে  সময় তিনি কি করবেন কি করবেন না এমন সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে দেশের মানুষ উদ্বেলিত হয়ে উঠে।

কিন্তু পলাতক প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ড. ওয়াজেদ তার বইয়ে লিখে গেছেন যে, জিয়াউর রহমান ও তার অবদান মুছে ফেলতে সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করেছিলেন পলাতক প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জনগণের প্রতি আওয়ামী লীগের আচরণ মানুষ দেখেছে। আওয়ামী লীগের কোন্দল ও পাল্টা কোন্দলে ১৫ আগস্ট ঘটেছে। কিন্তু জিয়াউর রহমান একটি রাষ্ট্র দর্শন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ঘোষণার মাধ্যমে দেশের সকল শ্রেণীর মানুষকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসেন।যার বিশালতা অনেক।

রিজভী বলেন, কি পররাষ্ট্রনীতি, কি শিক্ষানীতি কিংবা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ক্ষেত্রে সকল খাতে জিয়াউর রহমানের অবদান। তিনি যুদ্ধোত্তর একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কৃতিত্ব তো জিয়াউর রহমানের। জোর করে আয়না ঘর বানিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করে ইতিহাস লিখেছেন। কিন্তু মানুষ সেটি গ্রহণ করেনি, স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াতে বাধ্য করা হতো যে, শেখ মুজিব দেবতাতুল্য! গত ১৫/১৬ বছর ধরে শেখ হাসিনা এটি করার চেষ্টা করেছেন।

তিনি জবরদস্তি করে একটি গোষ্ঠীতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেখ হাসিনা। এ্যাবের সভাপতি ও আইইবির প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী একে এম আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন এ্যাবের মহাসচিব প্রকৌশলী আলমগীর হাছিন আহমেদ, প্রকৌশলী আব্দুল হালিম মিয়া, সহ-সভাপতি প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিমসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here