আজ আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে “বিশ্ব ইজতেমা”

0
আজ আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে “বিশ্ব ইজতেমা”

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ আজ রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ১০ টায় আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে মূল ধারার তাবলীগের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হচ্ছে। তবে জানা যায়, সকাল ১২ টার আগেই আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমেই শেষ হবে। বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় ধর্মীয় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে এরই মধ্যে দেশের নানা প্রান্ত ও বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে চলে এসেছেন। শীত উপেক্ষা করে চটের ছাউনির নিচে অবস্থান নিয়েছেন তারা।

এছাড়া সরেজমিনে দেখা যায়, টঙ্গীর তুরাগপাড়ের বিশ্ব ইজতেমাস্থল এখন দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির পদচারণায় মুখর। শিল্পনগরী টঙ্গী এখন যেন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। আয়োজক কমিটির তথ্য মতে, বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন।এবারের ইজতেমায় ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ২৫-৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এতে অংশ নেবেন। আর বিশেষ সূত্রে জানা যায় এবার বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রান মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছে।

আর  বিশেষভাবে স্থাপিত মঞ্চ থেকে এ মোনাজাত পরিচালনা করা হবে। এর আগে অনুষ্ঠিত হবে হেদায়তি বয়ান।এবার বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ১০ হাজার পুলিশ কাজ করছে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না। নিরাপদে সকলে যেন ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে জিএমপি।আর বাড়তি সুবিধার জন্য বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে পাঁচটি স্পেশাল ট্রেন পরিচালনা করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

সেই সঙ্গে আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া ও ঢাকায় প্রবেশের সময় সব ট্রেন টঙ্গী রেলস্টেশনে থামবে। এছাড়া আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ‘মোনাজাত স্পেশাল’ নামের বিশেষ ট্রেন পরিচালিত হবে। যা রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে টঙ্গীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে টঙ্গীর উদ্দেশ্যে প্রথম ট্রেন ছেড়ে যাবে ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে, দ্বিতীয় ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে, তৃতীয় ট্রেন ছাড়বে ৭টা ৩০ মিনিটে, চতুর্থ ট্রেন ছাড়বে ৯ টায় এবং পঞ্চম ট্রেন ছাড়বে সকাল ১০ টায়।

এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ইজতেমার প্রথম পর্বের শেষদিন আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে আবদুল্লাহপুর হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক বন্ধ থাকবে। একই কারণে কামারপাড়া থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত সড়কের দুই দিক এবং টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে পূবাইল পর্যন্ত সড়কেও যান চলাচল বন্ধ থাকবে। নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য যাতে কারও সমস্যা না হয় সে কারণে টঙ্গি ব্রিজের এখানে আমরা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ রাখবে পুলিশ।ইজতেমা মাঠের তথ্যে জানা যায়, প্রথম পর্বে এবার ইজতেমার মাঠকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে।

বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। ১৬০ একর খোলা ময়দানে বাঁশের খুঁটির ওপর পাটের চট দিয়ে টানানো হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। তবে বিদেশি মেহমানদের জন্য টিন দিয়ে করা হয়েছে আবাসস্থল। ইজতেমা ময়দানে ২৫টি দেশের প্রায় দেড় হাজার বিদেশি মেহমান উপস্থিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটি।প্রথম পর্বের চার দিন বিরতির পর আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে। আগামী ২২ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি হবে।

প্রথম পর্বের ইজতেমায় আলোচিত ঘটনাসমূহের মধ্যে অন্যতম-যৌতুকবিহীন বিয়ে- বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে। শরীয়ত মেনে তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন শনিবার বাদ আসর যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর বসে। শতাধিক বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ আসরে। ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান এসব বিয়ে পড়ান। গত কয়েক বছর এটি অনুষ্ঠিত হয়নি।

ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা- গত শনিবার সকাল থেকে ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্পগুলোতে মুসল্লিদের চিকিৎসা নিতে ভিড় দেখা গেছে। অসুস্থদের অধিকাংশই ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, আমাশয়, শ্বাসকষ্টের রোগী।বিশেষ ট্রেন- বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে আখাউড়া, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে ২১টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে।

৭ মুসল্লির মৃত্যু- ইজতেমায় এ পর্যন্ত সাত মুসল্লির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার বিকেলে ও রাতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। গতকাল শনিবার ফজরের নামাজের পর ইজতেমা ময়দানে তাদের জানাজা সম্পন্ন হয়। এর আগে আরও চারজন মুসল্লি মারা যান। ইজতেমা ময়দানে মৃত মুসল্লিরা হলেন সিলেটের হরিপুরের হেমুবটে পাড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে নূরুল হক, গাজীপুরের ভুরুলিয়া এলাকার আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব, ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাজী মোহাম্মদ হাবিবউল্লাহ হবি, ঢাকার কেরানীগঞ্জের মলমলিয়া গ্রামের মোবারক হোসেন খানের ছেলে মোফাজ্জেল হোসেন খান, মুন্সীগঞ্জের মধ্য কামাল গ্রামের আদিল উদ্দিন সিকদারের ছেলে আক্কাছ আলী সিকদার, চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের আব্দুল রশিদের ছেলে আব্দুল রাজ্জাক ও নরসিংদী জেলার মাছিমপুর গ্রামের রহমত উল্লার ছেলে হাবিবুর রহমান হবি।ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মুরুব্বি জহির ইবনে মুসলিম জানান, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের মধ্যে বার্ধক্য জনিত ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এ পর্যন্ত সাতজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।

অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রির অপরাধে জরিমানা- বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৫টি অভিযান পরিচালনা করেন। এসব অভিযানে ১৪ মামলায় ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা ও আদায় করা হয়েছে।উল্লেখ্য, রাজধানীর কাকরাইল জামে মসজিদে প্রথম বিশ্ব ইজতেমার প্রচলন শুরু হয় ১৯৪৬ সালে। এরপর ১৯৪৮ সালে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে। ১৯৫৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। ১৯৬৬ সাল থেকে গাজীপুরের শিল্প নগরী টঙ্গীর তুরাগ তীরে এ জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here