ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে আজ

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ১৫ বছর ও তার বেশি বয়সী নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে আজ শুক্রবার (২০ মে)। সকালে সাভার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ইসির যুগ্মসচিব জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে, নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে, নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এবং নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। মোট চারটি ধাপে এই কার্যক্রম চলবে। প্রথম ধাপে কাল থেকে ৯ জুন পর্যন্ত ৬৪ জেলার ১৩৯টি উপজেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর হালনাগাদ কার্যক্রমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এবার আগামী তিন বছরের মধ্যে যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য (১৮ বছর) হবেন, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সে হিসাবে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম, এই হালনাগাদ কার্যক্রমে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে যাদের জন্ম ১ জানুয়ারি ২০০৫ বা তার আগে তাদের ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা আগামী বছরের ২ মার্চ প্রকাশ করা হবে।

আর যাদের জন্ম ১ জানুয়ারি ২০০৬ বা তার আগে, তাদের অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ২০২৪ সালের ২ মার্চ এবং যাদের জন্ম ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে, তাদের অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ২০২৫ সালের ২ মার্চ।ইসি জানিয়েছে, যাদের জন্ম ২০০৫ সালের আগে, কিন্তু বিভিন্ন কারণে ভোটার হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি, তারাও হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটার হতে পারবেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে মৃত ভোটারের তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। এ সময় ভোটার স্থানান্তরের আবেদনও করা যাবে।

নির্বাচন কমিশন নিয়োজিত তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), পিতা/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ইউটিলিটি (পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস) বিলের কপি প্রয়োজন হবে।

তথ্য সংগ্রহের পর নিবন্ধন কেন্দ্রে ভোটারদের নিবন্ধন করা হবে ধাপে ধাপে। উপজেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ এবং সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে নিবন্ধন কেন্দ্র স্থাপন করে ভোটারদের ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ গ্রহণ করে ভোটার নিবন্ধন করা হবে। এ সময় মূল তথ্যের প্রিন্ট কপি দেওয়া হবে ভোটারদের।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, এ ধাপে ১৪০টি উপজেলার তথ্য সংগ্রহের কথা থাকলেও বন্যার কারণে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার তথ্য সংগ্রহের কাজ স্থগিত করা হয়েছে। প্রায় ৫৬ হাজার তথ্য সংগ্রহকারী এবং ১১ হাজার ৩০০ জন সুপারভাইজার এবারের হালনাগাদ কার্যক্রমে যুক্ত থাকবেন।

দেশের নাগরিকদের মধ্যে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম এবং বাদ পড়া নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে এই হালনাগাদে।যে ১৩৯টি উপজেলায় প্রথম ধাপে তথ্য সংগ্রহ রংপুর অঞ্চলে পঞ্চগড় সদর, ঠাকুরগাঁও সদর, দিনাজপুর সদর ও নবাবগঞ্জ, নীলফামারী সদর ও ডিমলা, লালমনিরহাট সদর, রংপুর সদর ও পীরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর ও ফুলছড়ি।

রাজশাহী অঞ্চলে জয়পুরহাট সদর, বগুড়া সদর, দুপচাঁচিয়া ও সারিয়াকান্দি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট, নওগাঁ সদর, পোরশা ও বদলগাছি, রাজশাহীর বোয়ালিয়া ও রাজপাড়া, নাটোর সদর ও সিংড়া, সিরাজগঞ্জ সদর ও তাড়াশ, পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী। খুলনা অঞ্চলে মেহেরপুরের গাংনী, কুষ্টিয়া সদর ও কুমারখালী, চুয়াডাঙ্গা সদর, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ও হরিণাকুণ্ডু, যশোর সদর, অভয়নগর ও বাঘারপাড়া, মাগুড়া সদর, নড়াইল সদর, বাগেরহাট সদর ও শরণখোলা, খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা ও দৌলতপুর, সাতক্ষীরা সদর ও তালা।

বরিশাল অঞ্চলে বরগুনা সদর ও আমতলী, পটুয়াখালী সদর ও গলাচিপা, ভোলা সদর ও মনপুরা, বরিশাল সদর, আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী, ঝালকাঠী সদর, পিরোজপুর সদর ও নেছারাবাদ। ফরিদপুর অঞ্চলে গোপালগঞ্জ সদর ও টুংগীপাড়া, মাদারীপুর সদর, শরিয়তপুর সদর ও ডামুড্যা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও সদরপুর, রাজবাড়ী সদর।

ঢাকা অঞ্চলে মানিকগঞ্জ সদর ও শিবালয়, মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়া, নরসিংদীর শিবপুর ও পলাশ, নারায়ণগঞ্জ সদর ও আড়াইহাজার, ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরাণীগঞ্জ, সাভার, সুত্রাপুর, কোতয়ালী ও ডেমরা, গাজীপুরের শ্রীপুর, কালীগঞ্জ ও কাপাসিয়া।ময়মনসিংহ অঞ্চলে টাঙ্গাইল সদর, সখিপুর ও ঘাটাইল, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ, শেরপুরের শ্রীবর্দী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, ভালুকা, ঈশ্বরগঞ্জ, গফরগাঁও, নেত্রকোনা সদর ও কলমাকান্দা, কিশোরগঞ্জ সদর, কটিয়াদি ও তাড়াইল।

সিলেট অঞ্চলে সুনামগঞ্জ সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ, মৌলভীবাজার সদর ও শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ সদর ও বাহুবল।কুমিল্লা অঞ্চলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নাসিরনগর, কুমিল্লার লালমাই, বরুড়া, লাকসাম, হোমনা ও বুড়িচং, চাঁদপুরের কচুয়া ও ফরিদগঞ্জ, ফেনী সদর ও ফুলগাজী, নোয়াখালী সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগ, লক্ষ্মীপুর সদর ও রামগতি।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডু, সন্দ্বীপ, কর্ণফুলী, লোহাগড়া, পটিয়া ও আনোয়ারা, কক্সবাজারের মহেশখালী, রামু, চকরিয়া ও কুতুবদিয়া, খাগড়াছড়ি সদর, মহালছড়ি ও লক্ষ্মীছুড়ি, রাঙ্গামাটি সদর এবং বান্দরবান জেলার সদর উপজেলা। ইসি কর্মকর্তারা জানান, রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার তালিকাভুক্ত হতে না পারে, সে জন্য এবারও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

এর অংশ হিসেবে বিশেষ এলাকার জন্য বিশেষ কমিটির মাধ্যমে নিবন্ধন ফরম যাচাই-বাছাই করা হবে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক তথ্য সম্বলিত ডেটাবেজ যাচাই করে নিবন্ধন চূড়ান্ত করা হবে। এবার যাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তাদের মধ্যে ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম, তারা ২০২৩ সালের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।

হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহ করে রাখা পরের দুই বছরের (২০০৭ ও ২০০৬) নাগরিকদের তথ্য ইসির ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হবে। এসব নাগরিকরা যথাক্রমে ২০২৪ ও ২০২৫ সালের হালনাগাদে স্বংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় আসবেন। এছাড়া যে কেউ নির্বাচন অফিসে গিয়ে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে ভোটার হতে পারেন।দেশে বর্তমানে ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন। এদের মধ্যে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন নারী এবং ৪৫৪ জন ট্রান্সজেন্ডার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here