১০ম ওফাত দিবসে মাসব্যাপী কর্মসূচি সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী আধ্যাতিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ কামরুজ্জামান হারুন: আওলাদে রাসূল (দঃ) গাউছে দাওরাঁ আল্লামা শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী আল মাইজভান্ডারী (ক.ছি.আ) এর জীবন চরিত। বিশ্ব আধ্যাত্মিক পরিমন্ডল অন্যতম প্রাণকেন্দ্র মাইজভান্ডার দরবার শরীফ। এ পবিত্র ভূমিতে শায়িত আছেন তরীকায়ে মাইজভান্ডারীয়ার স্থপতি গাউছুল আজম হযরত শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (কঃ) এবং তরীকায়ে মাইজভান্ডারীয়ার প্রাণপুরুষ অলিকুল শিরোমনি গাউছুল আজম হযরত শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভান্ডারী আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (কঃ)।

হযরত গাউছুল আজম বাবাভান্ডারী কেবলা কাবা (কঃ) হিজরী ১৩৫৬ সালের ২২শে মুহররম মোতাবেক ১৩৪৩ বঙ্গাব্দের ২২শে চৈত্র রোজ সোমবার ভোর ৭টা ৫৫ মিনিটে একাত্তর বছর ৬ মাস এ নশ্বর জগতে আধ্যাত্মিক লীলা সমাপন করে পরপারে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান।
হযরত গাউছুল আজম বাবাভান্ডারী কেবলা (কঃ) এর বেছালের পর তাঁরই মেঝ শাহজাদা সুলতানুল মাশায়েখ শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ আবুল বশর মাইজভান্ডারী আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (কঃ) এর ওরসে নবী বংশের উজ্জল প্রদীপ আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় মুর্শেদ কেবলা আল্লামা শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী বিংশ শতাব্দীর এমন এক যুগ-সন্ধিক্ষণে মাতৃগর্ভ থেকে ধরাধামে তশরীফ আনয়ন করেন, যখন সমগ্র বিশ্বে চলছিল অনাচার, জুলুম, নির্যাতন, মুসলিম দুনিয়া সুন্নীয়তের মূল দর্শন থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছিল। আধুনিক জাহেলিয়াত ও বাতিল পন্থীদের খপ্পরে পড়ে ঈমানহারা হয়ে যাচ্ছে।
সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানও তরকতের সঠিক দিক-নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল মুসলিম উম্মাহ, বিশ্বশান্তি বিঘিœত করে পরাশক্তিগুলো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল। মানবতা ভুলুন্ঠিত, নির্যাতিত জনগোষ্ঠির আর্তনাদে খোদার আরশ কাঁপছিল; ঠিক এমনি নাজুক পরিস্থিতিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর প্রদর্শিত এবং সাহাবায়ে কেরাম ও আউলিয়া-ই-কেরামের অনুসৃত পথে সঠিক প্রতিনিধিত্ব করার লক্ষ্যে ১৯৩৮ ইংরেজী সালের ১০ই ফেব্রুয়ারী মোতাবেক মহান ২৭শে মাঘ ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ অনুযায়ী ৯ই জিলহজ্ব ১৩৫০ হিজরী রোজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় মাইজভান্ডার শরীফের পূণ্যভূমিতে প্রেরণ করেন।
“মারহাব ইয়া মারহাবা ইয়া মারহাবা
শায়খুল ইসলাম মইনুদ্দীন মারহাবা”
মাইজভান্ডার দরবার শরীফে তিনি তাঁর আব্বাজান শাহজাদায়ে গাউছুল আজম শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ আবুল বশর মাইজভান্ডারী আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (রঃ) এর তত্বাবধানে ইলমে দ্বীন কুরআন-সুন্নাহ এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করে ঐতিহ্যবাহী সরকারী কলেজিয়েট উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে মেট্রিক পাশ করেন অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. ইউনুস, সাবেক নৌ-বাহিনী প্রধান মোহাইমনুল ইসলাম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানসহ দেশ বরেন্য কৃতি সন্তানগণ তাঁর স্কুল জীবনের সহপাঠী ছিলেন। আগ্রাবাদস্থ চট্টগ্রাম সরকারী কমার্স কলেজ থেকে অত্যন্ত সুনামের সাথে বি.কম পাশ করেন। আরবী-ফারসী-উর্দুতে তাঁর আব্বাজান এবং বিংশ শতাব্দীর বিশ্ববরেণ্য ওলামায়ে কেরাম থেকে কুরআন-সুন্নাহ তথা ইলমে দ্বীন ইসলাম চর্চা করে প্রভূত জ্ঞান লাভ করেন। তাঁর সবচাইতে বড় কারামত হলো জম্মের পর থেকে অদ্যবধি মুখ থেকে কুরআন-সুন্নাহর বাইরে কোন অযথা বাক্য প্রকাশ পায়নি। যা বলেন আল্লাহ ও রাসূলের (দঃ) শান, আউলিয়া-ই-কেরামের শানে বলেন। যা আমাদের জন্য ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির পাথেয় স্বরূপ।
১৯৫৯ ইংরেজীতে তদানীন্তন হাবীব ব্যাংকে অফিসার হিসাবে যোগদান করে জেনারেল ম্যানেজার পদে যখন উন্নীত হন, ঠিক তখনি ১৯৬২ইং সালে ৫ই এপ্রিল মহান ২২শে চৈত্র রাত ২.৩০ মিনিটে তাঁর আব্বাজানের নির্দেশক্রমে চাকুরী ছেড়ে বায়াতে খাছ গ্রহণ করে খেলাফত লাভের মাধ্যমে তরীকায়ে মাইজভান্ডারীয়ার প্রচার-প্রসার কল্পে আধ্যাত্মিক সাধনায় ব্রতী হন। ১৯৬৬ ইংরেজীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চট্টগ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সাথে। বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রাজনীতিবীদ মরহুম ইসলাম মিয়া টিকে তাঁর শ্বশুর ছিলেন। তাঁরই কন্যা মরহুমা ফাতেমা বেগম (মুন্নিকে) জীবন সঙ্গীনি হিসেবে গ্রহন করেন, তিনি তাঁর জীবনের উন্নতির সোপানে আরোহনের চির সঙ্গীনি ছিলেন।
গাউছুল আজম বাবাভান্ডারী (কঃ) ও হযরত কেবলার (কঃ) তরীকা মতে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তাঁর দুই শাহজাদা যথাক্রমেঃ শাহজাদায়ে গাউসুল আজম আলহাজ্ব শাহ্সূফী সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (মাঃজিঃআঃ), শাহজাদায়ে গাউছুল আজম আলহাজ্ব সৈয়দ শহিদ উদ্দিন আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (মাঃজিঃআঃ) এবং দুই শাহজাদী যথাক্রমেঃ শাহজাদী আল্হাজ্বা সৈয়দা সায়েমা আহমদ (সোমা), ও শাহজাদী সৈয়দা সাহেদা আহমেদ (রুমা)। ১৯৮০ ইং সালে তাঁর স্ত্রী ইন্তেকাল করে জান্নাতবাসী হন। এরপর তিনি আর দ্বিতীয় বিবাহ করেননি। কঠোর রিয়াজত করে চলেছেন। মাদারজাত (মাতৃ গর্ভকালীন) অলী হুজুর কেবলা হযরত গাউছুল আজম বাবাভান্ডারী (কঃ) যেদিন ইহকালীন লীলা সমাপন করে আপন রবের সান্নিধ্যে চলে যান অর্থাৎ বাবাজান কেবলার বেছালের দিনই তিনি মাতৃগর্ভে তাশরীফ আনয়ন করেন।
সোবাহান্নাল্লাহ! হযরত গাউছুল আজম বাবাভান্ডারী কেবলা (কঃ) বেছালের দিনই তাঁর গাউছিয়তের মহান জিম্মাদারী আনজামের লক্ষ্যে রূহানী জগতে আপন প্রিয় নাতী আমাদের প্রাণপ্রিয় মোর্শেদ মইনুদ্দিন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (মাঃজিঃআঃ) কে খলীফাতুল মুসলেমীন এবং তরীকত ও মারেফতের দিশারী হিসাবে মনোনীত করেন। তাঁরই আগমনে আজ পৃথিবীতে আশেকানে মোস্তফা (দঃ) ধন্য। তাঁর পবিত্র জীবনে অসংখ্য কারামত রয়েছে, কতিপয় কারামত আমরা “শাজরায়ে কাদেরীয়া গাউছিয়া মাইজভান্ডারীয়া” গ্রন্থে উল্লেখ করেছি।
বায়াতে খাছ ও খিলাফত লাভ ১৯৬২ ইং সালের ৫ই এপ্রিল মাসে ২২শে চৈত্র রাত ২.৩০ মিনিটে তার আব্বাজান সৈয়দ আবুল বশর আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (কঃ) তাঁকে ডেকে নিয়ে একান্তে বসায়ে খাছ ভাবে বয়াত করান এবং সাজ্জাদানশীন হিসেবে খিলাফত দান করে বয়াত করনোর অনুমতি প্রদান করেন। সেদিন থেকেই তরীকত ও সিলসিলার খিদমত আনজাম দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু বাংলাদেশ, পাক-ভারত উপ-মহাদেশেই নয়; বরঞ্চ সমগ্র বিশ্বে শরীয়ত ও তরীকতের খিদমত আন্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলার খাজা মইনুদ্দিন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী (মাঃজিঃআঃ) ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে ভারত-বর্ষে যেসব আউলিয়া-ই-কেরাম আগমত করেন, তদ্মধ্যে সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী আজমিরী (রঃ) সবার শীর্ষে। যিনি তাঁর জীবদ্দশায় নব্বই মতান্তরে নিরান্নব্বই লাখ অমুসলিমকে মুসলমান বানিয়েছিলেন। সোবহানাল্লাহ! তাঁদেরই পদাংকনুসরন করে বাংলার খাজা মুর্শেদ মইনুদ্দিন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (মাঃজিঃআঃ) লক্ষাধিক অমুসলিম নর-নারীকে এ পর্যন্ত ইসলামে দাখিল করান। সোবহানাল্লাহ! দ্বীনের প্রচারের দায়িত্ব তো আহলে বায়েতের সদস্য আউলিয়া-ই-কেরামই পালন করেন। আমেরিকার ভূখন্ডের বিশিষ্ট নওমুসলিমগণই মুর্শেদের হাতে মুসলমান হওয়ার অন্যতম জাজ্বল্যমান প্রমাণ। সম্প্রতি ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা সফরে বহু অমুসলিম ইসলামে দাখিল এবং বায়াতের মাধ্যমে তরীকায়ে মাইজভান্ডারীয়ায় প্রবেশ করেন।
সূফীবাদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক
সূফীবাদ ইসলামের মূল দর্শন। সূফীবাদই মানুষকে সোনার মানুষ হিসাবে নিজকে গড়ার তালিম দেয়। সূফীবাদী যারা, তাঁরাই মানবতার-শান্তি ও কল্যাণের দিশারী। সাম্য-মৈত্রী সৃষ্টি করে। ১৯৯৬ ইং সালে ইন্টারন্যশনাল এসোসিয়েশন অব সূফীজম আমেরিকার (ওহঃবৎহধঃরড়হধষ অংংড়পরধঃরড়হ ড়ভ ঝঁভরংস অসবৎরপধ) এর ব্যবস্থাপনায় আমেরিকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সূফী সেম্পোজিয়ামে মুর্শেদ কেবলা বাংলাদেশ হতে বিশিষ্ট প্রতিনিধি হিসাবে অংশগ্রহন করেন। তাঁর আগমনে খুশী হয়ে উক্ত এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাগণ তাকে উপদেষ্ট (অফারংড়ৎ) মনোনীত করেন। তিনি কাদেরীয়া, চিশতিয়া, নক্শবন্দীয়া, মুজাদ্দেদীয়া, মৌলভীয়া, সোহরাওয়ার্দীসহ সকল হক তরীকতপন্থী ওলামা-মাশায়েখের পৃষ্ঠপোষকতায় করে যাচ্ছেন।
বিশ্বব্যাপী কর্ম বিস্তৃত “শায়খুল ইসলাম” উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৯৭ ইং সালে আমেরিকায় অনুষ্ঠিত “ইন্টারন্যাশনাল সূফী সেম্পোজিয়ামে” আগত বিশ্বেও শ্রেষ্ঠ সূফী সাধকগণ সর্বসম্মতিক্রমে তাঁকে ‘শায়খুল ইসলাম’ উপাধিতে ভূষিত করেন, যা বিরল এক সম্মান বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রেসিডেন্ট মুর্শেদ কেবলা ১৯৮৮ ইং সালে ঐতিহ্যবাহী জামেয়া আহমদীয়া সুন্নীয়া আলীয়া ময়দানে তাঁকে বাংলাদেশের ওলামা মাশায়েখ আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামাত বাংলাদেশ এর সম্মানিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন সর্বসম্মতিক্রমে। সুন্নিয়তের প্রসারে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু বাংলাদেশ পাক-ভারতেই নয়, বরঞ্চ সমগ্র বিশ্বে। বর্তমানে তিনি ওয়ার্ল্ড আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সম্মানিত প্রেসিডেন্ট।
জাতিসংঘে ভাষণ ও মিলাদে মোস্তফা (দঃ) এর শুভ উদ্বোধন বিগত ২০০০ সালের ২৮-৩১শে আগষ্ট জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বিশ্বশান্তি সম্মেলন  অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন তৎকালিন জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান। এ সম্মেলনে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মের শীর্ষ স্থানীয় ধর্মগুরু ও আধ্যাত্মিক শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন আওলাদে রাসূল (দঃ) শায়খুল ইসলাম হযরত শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (মাঃজিঃআঃ)।
জাতিসংঘে আয়োজিত উক্ত কনফানেন্সে হুজুর কেবলা ভাষণে বলেনঃ আজকের জাতিসংঘ বিশ্ব-শান্তি ও সকল ধর্মের ও বর্ণের মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ, হানাহানি, যুদ্ধ, ক্ষুধা ও দরিদ্র নিসনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) ‘মদিনার সনদের’ মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছিলেন, যা জাতিসংঘ আজ বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্মেলন সমাপনী দিবসে প্রার্থনা পর্বে আওলাদে রাসূল (দঃ) সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (মাঃজিঃআঃ) মিলাদ শরীফ (ছালাত ও সালাম) পরিচালনা করেন এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মুনাজাত পরিচালনা করেন। জাতিসংঘের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ব্যাক্তিত্ব, যিনি মিলাদে-মোস্তফা (দঃ) এর শুভ উদ্বোধন করেন। মিলাদ মাহফিলে রাবেতার মহাসচিব আবদুল্লাহ ওমর নাসিফ, ইরাক, ইরান, ভারত ও পাকিস্থানসহ বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উজবেকিস্তান সরকার ও ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বিশ্ব-আধ্যাত্মিক সম্মেলনে আমন্ত্রিত এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ কর্তৃক বিপুলভাবে বিরল সম্মানে ভূষিত।
২০০০ ইং সালের ১৭-১৮ই সেপ্টেম্বর উজবেকিস্তান সরকার প্রধানের আমন্ত্রণে এবং ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে হোটেল শেরাটনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আধ্যাত্মিক সম্মেলনে অষ্ট্রেলিয়া, আজারবাইজান, বেনিন, চীন, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইস্রাইল, জাপান, সুদান, কাজাখাস্তান, মরক্কো, সউদী আরব, স্পেন, শ্রীলংকা, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, তিউনিশিয়া, তুরস্ক, ভ্যাটিকান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে ধর্মীয় আধ্যাত্মিক শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহন করেন। বড় শাহজাদা আল্হাজ্ব শাহ্সূফী সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (মাঃজিঃআঃ) সফরসঙ্গী ছিলেন। জর্দানের প্রিন্স আল্-হাসান বিন্ তালাল স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
সভাপতিত্ব করেন ইউনেস্কো সদর দপ্তর হতে আগত ডাইক্টের ডায়েন (উড়ঁফড়ঁ উরবহব)। ইন্টারন্যাশনাল এ কনফানেন্সে মুর্শেদ কেবলা বিশেষভাবে সমাদৃত হন। তাসখন্দ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। উজবেকিস্তান সরকার তাঁকে বিশেষ ফ্লাইটে পবিত্র বুখারী নগরীতে নিয়ে যান। তিনি হযরত ইমান বুখারী (রঃ), ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রঃ) এবং শায়খ বাহাউদ্দিন নক্শবন্দী (রঃ) প্রমুখ মনীষীদের মাজার জিয়ারত করেন। বিপন্ন মানবতার পাশে সৈয়দ মইনুদ্দিন ১৯৮৮, ১৯৯৮ ইং সালের শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা কবলিত বিপন্ন মানুষের পাশে ত্রাণ-সামগ্রী নিয়ে হাজির হন আওলাদে রাসূল (দঃ) মুর্শেদ কেবলা।
১৯৯১ ইং সালের ভয়াবহ জলোচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্থ পতেঙ্গা এলাকার দুঃখী মানুষের পাশে গিয়ে দাড়ান হুজুর কেবলা। ২০০৭ ইং সালের বন্যা এবং শতাব্দীর ভয়াবহ সিডরে ক্ষতিগ্রস্থ দুঃখী অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে ত্রান-সামগ্রী নিয়ে দাড়ান আমাদের নিবেদিত প্রাণ আশেকান তাঁরই নির্দেশক্রমে। তিনি এতিম-অনাথ দুঃখী মানুষের বন্ধু ও কান্ডারী। বিশ্ব মানবতার সেবাই যার জীবনের ব্রত।তরীকতের সিপাহ্সালার ও দিক্ নির্দেশক তরীকায়ে মাইজভান্ডারীয়ার দিক-নির্দেশক হিসাবে সারা বাংলার আনাচে-কানাচে খিদমত আন্জাম দিয়েছেন। এ তরীকাকে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
তরীকায়ে মাইজভান্ডারীয়ার মূল সুর আল্লাহ ও রাসূল (দঃ) এবং মানবতার প্রেম। সাম্য-মৈত্রী সৃষ্টি। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করা। তাই তিনি বাংলাদেশে আট সহস্রাধিক খানকা শরীফ কায়েম করেন। এমনিভাবে বর্হিবিশ্বে ও এ তরীকার খিদমত অব্যাহত রেখেছেন। ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, আবুধাবী, ওমানসহ সমগ্র বিশ্বে খানকা শরীফ, মসজিদ ও ইসলামী রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। যুগের সকল তরীকতের প্রতিনিধিগণের সাথে তাঁর রয়েছে রূহানী নিবিড় সম্পর্ক। তিনি পীরানে পীর। সোলতানুল আউলিয়া। সমগ্র বিশ্বে তাঁর লাখো-কোটি ভক্ত অনুরক্ত রয়েছে। রয়েছে হাজারো খলিফা ও প্রতিনিধি। তরীকায়ে মাইজভান্ডারীয়ার চর্চা ও তালিম সমগ্র বিশ্বে সম্প্রসারিত করেন আওলাদে রাসূল (দঃ) শাহ্সূফী সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (মাঃজিঃআঃ)।
শতাব্দীর সংস্কারক মুর্শেদ কেবলা প্রিয় নবীজি (দঃ) ইরশাদ করেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা প্রতি শতাব্দীর মাথায় এমন ব্যাক্তিকে দুনিয়াতে প্রেরণ করবেন, যিনি দ্বীন ইসলামের সংস্কারের খিদমত আন্জাম দেবেন”। মহানবী (দঃ) এর পবিত্র বানীর আলোকে মুর্শেদ কেবলা ইসলামের সংস্কারক হিসাবে খিদমত আন্জাম দিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বব্যাপী নিরলসভাবে। একদিকে তরীকত পন্থীদের মাঝে সংস্কারের মাধ্যমে তরীকতের ছহীহ খিদমত আন্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। সকল অনাচারের বিরুদ্ধে তাঁর জিহাদ অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে প্রেম-ভালবাসা দিয়ে অমুসলমানদেরকে ইসলামে দীক্ষিত করছেন। “ইসলাম উদারতায়’ তলোয়াওে নয়”, যার বাস্তব প্রতিচ্ছবি মুর্শেদ কেবলা সৈয়দ মুইনুদ্দিন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (মাঃজিঃআঃ)।
ইলমে দ্বীনের খিদমত জ্ঞান পিপাসু মাহজ্ঞানী সৈয়দ মইনুদ্দিন। তিনি তাঁর আশেকান ও তাদের সন্তানদেরকে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য সর্বদা উৎসাহিত করে যাচ্ছেন। জ্ঞানী ও শিক্ষাবিদকে তিনি অত্যন্ত ভালবাসেন। পড়াশুনার প্রতি অত্যাধিক গুরুত্ব দেন। তিনি মানুষ গড়ার এক নিপুন কারিগর। তিনি সাচ্চা হাফেজ তৈরীর লক্ষ্যে মাইজভান্ডার দরবার শরীফে মাইজভান্ডার রহমানিয়া মইনীয়া হেফজখানা ও এতিমখানা কমপ্লেক্স (৫ তলা বিশিষ্ট ভবন) প্রতিষ্ঠা করেন। এতিমখানার ছাত্রদের ভরন-পোষন-চিকিৎসা এমনকি জামা-কাপড় পর্যন্ত ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ব্যয় ভার বহন করে থাকেন।
সুন্নী যোগ্য আলেম তৈরীর মানসে নিন্মোক্ত মাদ্রাসাসমূহ প্রতিষ্ঠা করেনঃ
১। কেন্দ্রীয় ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন কমিটি।
২। মইনীয়া দরসে নেজামী মাদ্রাসা- মাইজভান্ডার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি,চট্রগ্রাম।
৩। মইনীয়া হেফজখানা- মাইজভান্ডার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি,চট্রগ্রাম।
৪। মইনীয়া এতিমখানা- মাইজভান্ডার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি,চট্রগ্রাম।
৫। দরবার-এ-গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী কমপ্লেক্স-মাইজভান্ডার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি,চট্রগ্রাম।
৬। মইনীয়া দাতব্য চিকিৎসালয়- মাইজভান্ডার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি,চট্রগ্রাম।
৭। মইনীয়া মেডিকেল সেন্টার- মাইজভান্ডার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি,চট্রগ্রাম।
৮। রহমানিয়া মইনীয়া লাইব্রেরী- মাইজভান্ডার দরবার শরীফ,ফটিকছড়ি,চট্রগ্রাম।
৯। মইনীয়া পাবলিকেশন্স- মাইজভান্ডার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি,চট্রগ্রাম।
১০। মাসিক নূর-এ-রহমান- মাইজভান্ডার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি,চট্রগ্রাম।
১১। ইংরেজী জার্নাল অর্ধ মাসিক সুফীজম- মাইজভান্ডার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি,চট্রগ্রাম।
১২। মইনীয়া ইমাম প্রশিক্ষন কেন্দ্র- মাইজভান্ডার দরবার শরীফ,ফটিকছড়ি,চট্রগ্রাম।
১৩। মইনীয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা- মাইজভান্ডার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি,চট্রগ্রাম।
১৪। আমতল ছিদ্দিকীয়া মইনীয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসা-পাইন্দং,ফটিকছড়ি,চট্রগ্রাম।
১৫। গোবিন্দপুর রহমানিয়া মইনীয়া শাহী জামে মসজিদ- বুড়িচং, কুমিল্লা।
১৬। গোবিন্দপুর রহমানিয়া মইনীয়া হেফজখানা ও এতিমখানা কমপ্লেক্স- বুড়িচং, কুমিল্লা।
১৭। বাগানবাড়ী রহমানিয়া মইনীয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা- মতলব উত্তর,চাঁদপুর।
১৮। মইনীয়া আদর্শ স্কুল ও কলেজ- মতলব উত্তর,চাঁদপুর।
১৯। রায়পুরা রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারীয়া হেফজখানা ও এতিমখানা-রায়পুর,নরসিংদী।
২০। মেঘনাঘাট রহমানিয়া মইনীয়া এবতেদায়ী মাদ্রাসা- গজারিয়া,মুন্সীগঞ্জ।
২১। মইনীয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ- ৮২, শাহ আলীবাগ, মিরপুর-১, ঢাকা-১২১০।
২২। মইনীয়া কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী- ৮২, শাহ আলীবাগ, মিরপুর-১, ঢাকা-১২১০।
২৩। মইনীয়া শিশু কিশোর মেলা- ৮২, শাহ আলীবাগ, মিরপুর-১, ঢাকা-১২১০।
২৪। মইনীয়া দুস্থ কল্যান ও মেধাবী বৃত্তি প্রকল্প- ৮২, শাহ আলীবাগ, মিরপুর-১, ঢাকা-১২১০।
২৫। মইনীয়া ক্যালিগ্রাফী ফাউন্ডেশন – ৮২, শাহ আলীবাগ, মিরপুর-১, ঢাকা-১২১০।
২৬। আন্তর্জাতিক সূফী ঐক্য সংহতি(SUFIS)- ৮২, শাহ আলীবাগ, মিরপুর-১, ঢাকা-১২১০।
২৭। আধ্যাত্নিক সংগীত একাডেমী- ৮২, শাহ আলীবাগ, মিরপুর-১, ঢাকা-১২১০।
২৮। মইনীয়া ত্রান ও পূনবার্সন কেন্দ্র- ৮২, শাহ আলীবাগ, মিরপুর-১, ঢাকা-১২১০।
২৯। মইনীয়া ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্ট- তরগাঁও, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
এ ছাড়াও বিশ্বের কয়েকটি দেশ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিষ্ঠিত ২৬৫১ টি খানকাহ্ শরীফ ও এবাদত খানা রয়েছে এবং ১৭১টি খানকাহ্ শরীফে শিশু শিক্ষা,কুরআন শিক্ষা,বয়স্ক শিক্ষা সহ সুন্দর জীবন গড়ার লক্ষ্যে তাসাউফ ভিত্তিক শিক্ষা পদ্বতি চালু রয়েছে।
অসংখ্য সুন্নী কামিল-ফাজিল-আলিম মাদ্রাসায় বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে আর্থিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের পৃষ্ঠপোষকাত করছেন আর্থিক ভাবে নীরবে অকাতরে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষার্থী ও গবেষণারত অনেকের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে। এতিম-দুঃখী ও বিপন্ন মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু সৈয়দ মইনুদ্দিন। বহুজনকে কর্মসংস্থানে সহযোগিতা করেন তিনি।
হজ্বে বায়তুল্লাহ ও জিয়ারতে মদিনা মনোয়ারা আওলাদে রাসূল (দঃ) সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমদ বহুবার পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন আশেকান ওলামায়ে কেরামকে নিয়ে। অনেক আলেমকে পবিত্র হজ্ব পালনে পূর্ণ আর্থিক সহযোগিতা করেন তিনি। আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহকে ধরে আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে এবং মদিনা শরীফে কদমে মোস্তফায় (দঃ) ভক্তদেরকে হাওলা করেন তিনি। দোয়ার প্রতিটি পবিত্র স্থানে তিনি দেশ-জাতি-মুসলিম উম্মাহ সহ আশেকানদের কল্যাণের জন্য নিভূতে আবেগ জড়িত কন্ঠে ফরিয়াদ করেন। ১৯৯৭ সালে পবিত্র মক্কায় মিনার তাবুতে যখন আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলছিল। তখন তিনি “ইয়া গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী, ইয়া গাউসুল আজম বাবাভান্ডারী” ৩ বার বলা মাত্র আগুন অন্যদিকে চলে যায়। বাংলাদেশী হাজীরা নিরাপত্তা লাভ করেন গায়েবী ভাবে। প্রিয় নবীজি (দঃ) স্বয়ং তাঁকে হজ্ব কবুলসহ অসংখ্য সু-সংবাদ প্রদান করেন। রহমতের ফিরিশতা
মুজদালেফায় তাঁকে আরাফাতের দোয়া কবুলের সুসংবাদ দিয়ে যান এবং আরশ-আজীম তাঁর মাথার উপর ঘুরতে দেখেন।
আওলাদে মোস্তফা (দঃ) সৈয়দ মইনুদ্দীনের অসংখ্য কারামত ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রত্যক্ষ করেছেন হজ্ব কাফেলা সাথীগণ পবিত্র হারামাইনের ভূখন্ডে। আল্লাহ ও রাসূল (দঃ) তাঁর উপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট। তাঁর বুজুর্গী সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়। ২০০৬ সালে প্রিয় নবীজি (দঃ) রিয়াতুল জান্নাতে তাঁকে এবং উনার আওলাদে পাকগণসহ আশেকান হাজীদের প্রতি বিশেষ নজরে করম এনায়েত করেন। বাবে জিব্রিলের সম্মুখে বহুবার তাঁর বুজুর্গী পরিলক্ষিত হয় ।
সুন্নীয়তের ময়দানে তাঁর অবদান: আহলে  সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রেসিডেন্ট হিসাবে সমগ্র বিশ্বে তাঁর অবদান সর্বজন বিদিত। রাজধানী ঢাকায় প্রতি বছর ১২ই রবিউল আউয়াল পবিত্র জশ্নে জুলুসে-ঈদে-মিলাদুন্নবী (দঃ) এর বিশাল সমাবেশ তাঁরই নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শুধু বাংলাদেশ নয় বরঞ্চ তাঁর নির্দেশেই আশেকান মাইজভান্ডারী সমগ্র বিশ্বে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) জুলুস সহকারে উদ্যাপন করে আসছে। থাইল্যান্ডের খলিফা আলহাজ্ব গাফফার চৌধুরীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মিলাদুন্নবী (দঃ) এর সমাবেশে সেখানকার রাজ প্রধান অতিথি হিসাবে আসন অলঙ্কিত করে থাকেন।
সুন্নীয়তের প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে তিনি বহু মাদ্রাসা-মসজিদ ও খানকাহ শরীফ নির্মাণ করেন। সুন্নীয়তের মুখপাত্র হিসাবে “নূর-এ রহমান” তাঁরই পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত হচ্ছে নিয়মিতভাবে। শরীয়ত-তরিকত ও সুন্নীয়তের এবং বিশ্ব মানবতার খিদমতের লক্ষে তিনি ‘আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারীয়া’ নামক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এ আন্জুমান বাংলাদেশ তার অগ্রযাত্রাকে যেমনি অব্যাহত রেখেছে। এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকাসহ সমগ্র বিশ্বে আন্জুমানের বৈদেশিক শাখাসমূহ রয়েছে।
বিশ্বশান্তির দূত হুজুর কেবলা:তিনি শুধু শরীয়ত ও তরীকতের প্রচার-প্রসারেই ক্ষান্ত নন, বরঞ্চ বিশ্বশান্তির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। গত ২৭শে আগষ্ট ২০০৫ আফ্রিকার ঘানার ভাইস প্রেসিডেন্ট কর্তৃক পুলিশ লাইন ময়দানে “ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনে “ ‘বিশ্বশান্তির দূতের’ সম্মননায় ভূষিত হন, যা সমগ্র বাঙ্গালী ও মুসলিম উম্মাহ্র জন্য বিরল সম্মান। প্রিয়নবী রাহ্মাতুল্লিাল আলামিনের নূরানী আওলাদ হিসাবে সমগ্র বিশ্বে তিনি শান্তির দূত হিসাবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
বেলায়েতের সম্রাট গাউছে দাওরাঁ হুজুর কেবলা আমাদের প্রাণপ্রিয় মুর্শেদ কেবলা (মাঃজিঃআঃ) তো মাদারজাত (মাতৃগর্ভ) অলী হিসাবে পৃথিবীতে আগমন করেন। বাল্যকাল থেকেই যাঁর বেলায়তের প্রকাশ ঘটেছিল। একবিংশ শতাব্দীর ত্রাণকর্তা ও দিশারী হিসাবে আমরা তাঁকে পেয়েছি। তাঁর হাজারো কারামত রয়েছে। তিনি “ কারামতের মুখাপেক্ষী নন, বরং কারামত তাঁর মুখাপেক্ষী”। ‘শাজরায়ে কাদেরীয়া গাউছিয়া মাইজভান্ডারীয়া’ অধ্যয়ণ করলে আমরা তার কিছু কারমতের নমুনা খুঁজে পাবো। এছাড়া ‘একটি জীবন, একটি দর্শন’ নামে তার পূর্নাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ আমরা তা বিস্তারিতভাবে জানতে পারবো।
তরীকতে তাঁর তালিম অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিখুঁত। তাঁর সাহচর্য যারা লাভ করেছেন, তাঁরা হয়েছেন সোনার মানুষ, সঠিক তাপস, তরীকতের নামে সমাজে যে বিদয়াত ও কুসংস্কার ছিল, তার বিরুদ্ধে সারা জীবন তিনি আপোষহীন সংগ্রাম করে যান। দুনিয়ার কোন মোহ-লোভ-লালসা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। বাতিল ও অসত্যের সাথে তিনি কোনদিন আপোষ করেননি। তিনি তো হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের রক্তীয় বংশীয় ধারা, নবী বংশের উজ্জল প্রদীপ। ১৯৮৮ ইং সালে ঢাকায় প্রেস কনফারেন্সে ঘোষণা করেন “সুন্নীয়ত ও ঈমানের জন্য রক্ত দিতে হলে সর্বপ্রথম আমি মইনুদ্দীনই রক্ত দিতে প্রস্তুত”। পরিশেষে আমরা বাংলাদেশ সরকার বিশেষতঃ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে সবিনয় অনুরোধ করছি, বাংলার এ কৃতি সন্তানের জীবনাদর্শ ও কর্মকান্ডকে পাঠ্যক্রমের তালিকা ভুক্ত করুন।
আমরা নোবেল পুরস্কার অথরিটীর কাছে আকুল আহবান জানাচ্ছি, চলতি শতকের এ মনীষী ও শান্তির দূতকে আধ্যাত্মিক ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদানে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। তাতে মানবতার মান বাড়বে। গুণীদের সম্মান সমুন্নত হবে। ইতিহাস আপনাদেরকে স্মরণ করবে।
সারা বিশ্বের মানবতা ও মুক্তির দিশারী: অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের শান্তির দূত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার কল্যাণাকামী, আধাঁরে আলোর পথ প্রদর্শক, এ সময়ের মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শিরমণি, নবী (দঃ) এর ত্রিশ তম বংশধর, গাউছে দাওরাঁ, শায়খুল ইসলাম হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সূফী সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী মাইজভান্ডারী (কঃ ছিঃ আঃ)।
বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লাখো-লাখো ভক্ত আশেকানদের অশ্রু জলে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। তিনি ২০১১সনের  ১৭ আগষ্ট সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্নানিল্লাহে…………..রাজিউন)। তাঁর এই প্রয়াণে সুন্নীয়তের ঝান্ডা বাহক অসীম সাহসী নির্লোভ, ত্যাগী একজন মহা-মানবকে আমরা হারালাম। প্রতি বছর মাইজভান্ডার দরবার শরীফের এ মহান আউলিয়া, গাউছে দাওরাঁ, শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, শায়খুল ইসলাম আওলাদে রাসূল (দঃ) হযরত শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল্ হোসাইনী (মাজিআ) এর মহান ২৭শে মাঘ মোতাবেক ৯ই ফেব্রুয়ারী পবিত্র জন্মদিন এবং প্রতি বছর ১৭ ই আগষ্ট পবিত্র ওফাত দিবসে হাজির হয়ে তাঁর ফয়ুজাত ও বরকত লাভে ধন্য হই এবং সঠিক পথে চলার দিশা গ্রহণ করি। আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাঁরই সান্নিধ্যে হাজির হয়ে গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) ও গাউছুল আজম বাবাভান্ডারী কেবলা (কঃ) নূরানী নেগাহে করম হাসিল করে ধন্য হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন! এ বছর মাসব্যাপী মহান ২রা ভাদ্র উদযাপিত হবে।
১৭ই আগস্ট, ২০২১ দরবার শরীফে উদ্বোধন করবেন, মাইজভাণ্ডার শরীফের সাজ্জাদানশীন, হযরত সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলি) এবং আগামী ৩০ ই ভাদ্র ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সমাপনী অনুষ্ঠান ও আখেরী মুনাজাত এর মাধ্যমে মহান ২রা ভাদ্রের এ বছরের আয়োজনের পর্দা নামবে।  যারা দূর দূরান্ত থেকে জিয়ারত করতে চান তারা ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দরবার শরীফে আসবেন।২০ আগস্ট, ২০২১ ঢাকার মিরপুর-১ অবস্থিত কেন্দ্রীয় খানকাহ্ শরীফে শোহাদা-এ-কারবালা এবং হযরত সাইয়্যিদ মইনুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী (কঃ) স্মরণে  আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন হযরত সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলি)।
১৬ ই আগস্ট, ২০২১,চট্টগাম শহর চকবাজার মাইজভানডার মনজিলে, ১৯ ইআগস্ট, ২০২১ গাজীপুর জয়দেবপুর কেন্দ্রীয় খানেকা শরীফে, ১৯ ই আগস্ট, ২০২১ গাজীপুরে, ২১ ই আগস্ট কুমিল্লাতে, ২২ তারিখ মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী (মাঃজিঃআঃ) এর অংশগ্রহণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।  সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে অংশগ্রহণের এবং এ ঘোষণাটি সকলের কাছে পৌঁছে দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।
কামরুজ্জামান হারুন
সাংগঠনিক সম্পাদক
মইনীয়া যুব ফোরাম
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি।
০১৮১৮২৫৩২৪৬।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here