১০ জেলায় করোনার সংক্রমিতের হার অনেক বেশি

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, পাশাপাশি মৃত্যুও। ইতিমধ্যে আক্রান্ত প্রায় পাঁচ লাখ, আর মৃত্যুও ছাড়িয়েছে সাত হাজার। করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুহার ঢাকা মহানগরে সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিন এখানে গড়ে প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন।

করোনা প্রতিরোধ এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে গঠিত কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকের তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগরীসহ দেশের ১০ জেলায় করোনার প্রকোপ এখন সবচেয়ে বেশি। এদিক থেকে ঢাকার পরের অবস্থানে থাকা জেলাগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, গাজীপুর, বরিশাল, কুমিল্লা, সিলেট, রংপুর ও দিনাজপুর।

বিভিন্ন তথ্য বলছে, শ্রমঘন শিল্পের কারখানাগুলোর বড় একটি অংশ গড়ে উঠেছে এই ১০ জেলাকে কেন্দ্র করে। এসব জেলার শ্রমঘন শিল্প এলাকাগুলোর শ্রমিকরাসহ নিম্নবিত্তরা ঘিঞ্জি পরিবেশে অল্প জায়গায় অনেকে বসবাস করছেন। ফলে এসব এলাকায় করোনা সংক্রমিতের হারও অনেক বেশি।

আবার যেসব জেলা দেশের সড়ক যোগাযোগের জন্য আঞ্চলিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করছে, সেগুলোতেও করোনা সংক্রমণের হার অনেক বেশি বলে অভিমত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকেই সর্বোচ্চ আক্রান্তের ১০ জেলার তথ্য উঠে আসে। বৈঠকে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ব্যাপক সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথমদিকে যেসব করোনার রোগী শনাক্ত হয়েছে তার বেশির ভাগই বিভিন্ন শ্রমঘন শিল্পে কাজ করত অথবা তাদের সংস্পর্শে এসেছে এমন মানুষজন। আর এভাবেই সংক্রমণ সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের শিল্পঘন অঞ্চলগুলোতেই করোনা সংক্রমণের হার তুলনামূলক অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেশি।

সর্বোচ্চ সংক্রমণযুক্ত ১০ জেলায় প্রাদুর্ভাব বেশি হওয়া সম্পর্কে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ইত্যাদি জেলায় শিল্পায়ন হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

তিনি আরও বলেন, তবে শিল্পায়ন বাড়লেও এসব শিল্পে যারা কাজ করবেন, তাদের জন্য স্বাস্থ্যকর আবাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। খুবই নিম্নমানের পরিবেশে এসব এলাকায় একত্রে অনেকে থাকছেন। পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর। এ কারণে এসব বসতিতে কেউ একজন সংক্রমিত হলে তা সহজেই অন্যদের সংক্রমিত করে ফেলছে।

সংক্রমণে এগিয়ে থাকা একটি জেলা বরিশাল। এ জেলায় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম নৌপথ। ঢাকা থেকে এখানে প্রতিদিন প্রায় আট থেকে ১০টি লঞ্চ চলাচল করে। এসব লঞ্চে একসঙ্গে কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। তবে তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের প্রবণতা বেশ কম।

আবার মাস্ক ব্যবহার নিয়েও এক ধরনের শৈথিল্য দেখা যায়। এ কারণে বরিশালে করোনা সংক্রমণের হার তুলনামূলক বেশি। এছাড়া শীতে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায়ও করোনা সংক্রমণের হার তুলনামূলক বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়; সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা সবচেয়ে কম এমন ১০টি জেলার মধ্যে রয়েছে খাগড়াছড়ি, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বান্দরবান, লালমনিরহাট ও হবিগঞ্জ জেলা। এসব জেলায় সংক্রমণের হার সবচেয়ে কম এবং মৃত্যুহার প্রায় শূন্য।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। আর ১০ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয় বলে জানায় আইইডিসিআর। চিকিৎসকরা বলছেন, কোনো প্রতিষেধক না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও মাস্ক পরিধান করে এ ভাইরাসের ব্যাপ্তি রোধ করা সম্ভব। এছাড়াও রোগী শনাক্ত ও আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেও এ ভাইরাসের বিস্তার কমানো সম্ভব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here