ল্যাবে নমুনার জট, অনেকেই সুস্থ্য হওয়ার পরও রিপোর্ট পজেটিভ

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ করোনা মহামারি আকারে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা। করোনা উপসর্গে মারা যাওয়ার সংখ্যাও কম নয়। করোনা আক্রান্তর সংখ্যা কমানো যাচ্ছে না কেন? এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন- করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরপরই পরীক্ষার ফল পেলে সুবিধা হতো। কিন্তু করোনা উপসর্গে রোগী মারা যাওয়ার পর মিলছে পরীক্ষার ফল। তত ক্ষণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে অন্যত্র।

দিনাজপুরে পিসি আর ল্যাবে পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই করোনা আক্রান্তরা মারা যাচ্ছে। আবার অনেকেই সুস্থ্য হওয়ার পর রিপোর্ট পজেটিভ আসছে। সেই সাথে ল্যাবে করোনা পরীক্ষার নমুনা দেয়ার সময় কেউ কেউ নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ভুল দেয়ায় বিপাকে পড়ছেন, স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ এবং প্রশাসন। পিসিআর ল্যাবে নমুনার জোট এবং সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও উদাসীনতা কারণে এমন ঘটছে বলে বিশিষ্টজনেরা অভিযোগ করেছেন।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৩ জুন মারা গেছেন, দিনাজপুর শহরের ব্যস্ততম গোলকুঠি এলাকার গুড্ডু (৪৫)। বেশ কিছু দিন ধরে জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। তার করোনা হয়েছে কি না তা জানতে ২০ জুন নমুনা দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে দেয়া হয়। রিপোর্ট আসার আগেই ২৩ জুন তিনি মারা যান। পরিবার থেকে জানানো হয়, গুড্ডু হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তার নামাজে জানাজা এবং দাফন কার্য সম্পন্ন হয়।

শহরের ব্যস্ততম এলাকা বাহাদুর বাজারের দিনা হোটেলে সামনে খিলি পান, বিড়ি-সিগারেটের দোকান থাকায় ব্যাপক পরিচয় গুড্ডু’র। তাই,তার জানাজা এবং দাফন কার্যে এ প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ অংশ নেয়। কিন্তু, ২৭ জুন পিসিআর ল্যাবের রিপোর্টে তার করোনা আক্রান্ত পজেটিভ রিপোর্ট আসে।

জেলা সিভিল সার্জন এর তথ্য মতে, প্রতিদিনের মতো সাংবাদিকরা জেলায় করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর আপডেট সংবাদে গুড্ডু’র করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পরিবেশন করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মৃত গুড্ডু’র কতিপয় আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয়রা।

তাদের দাবি, গুড্ডু’র মৃত্যু হয়েছে হার্ট অ্যাটাকে। তার মৃত্যুর আগেই নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। এনিয়ে সাংবাদিকদের উপর একপ্রকার চড়াও হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। তাদের দাবি, করোনা পজেটিভ মৃত ব্যক্তির নাম ভুট্টু। তার বাড়ি শহরের মুন্সিপাড়া এলাকায়। কিন্তু, স্থানীয় পৌর কাউন্সিল খোঁজ নিয়ে দেখেন, যে মুন্সিপাড়ায় ভুট্টু নামে ব্যক্তি থাকলেও তিনি জীবিত এবং করোনা আক্রান্ত নয়। এ নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ এবং প্রশাসন পড়ে চরম বিপাকে পড়েন। পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করার সময় যে মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে, তা বন্ধ পাওয়া যায়।

২৮ জন স্বাস্থ্য বিভাগ আবারও ওই নম্বরে ফোন দিলে মৃত গুড্ডু’র স্ত্রী তা রিসিভ করেন। পরে সোমবার (২৯ জুন) দুপুর ১২ টায় উপজেলা প্রশাসন করোনায় মৃত্যু গুড্ডুর বাড়ি লকডাউন করেন। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটি-দিনাজপুর জেলার সদস্য সচিব এবং জেলা সিভিল সার্জন ডা আব্দুল কুদ্দুস এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বাড়িটি চিহ্নিত করতে দেরি হওয়ায় মৃত ব্যক্তির বাড়ি লকডাউন করতেও দেরি হয়ছে।

কিন্তু,গুড্ডু অসুস্থ্য অবস্থায় তার সংস্পর্শে থাকা পরিবারের লোকজন,প্রতিবেশী-আত্মীয়-সজন এবং মৃত্যুর পর দাফন- কাফনে অংশ নেয়া লোকজনের কি পরিস্থিতি তা নিয়ে নেই কারো মাথা ব্যাথা। শুধু গুড্ডু নয়, দিনাজপুরে করোনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে,তাদের অধিকাংশ জনের মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে পজিটিভ।

শুধু মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রেই নয়, নমুনা দেয়ার পর অনেকেই সুস্থ্য হওয়ার পর রিপোর্ট আসছে পজেটিভ। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে পজিটিভ রিপোর্ট আসার আগেই অসাবধানতার কারণে ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বেশির ভাগই সুস্থ্য হওয়ার পর রিপোর্ট আসছে পজেটিভ।

যেমন, জেলার খানসামা উপজেলায় সাংবাদিক এবং উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা ধীমান দাস। পিসিআর ল্যাবে নমুনা দেয়ার পর ১৭ দিন পর তার পরীক্ষা রিপোর্ট এসেছে পজিটিভ। অথচ তিনি এখন সুস্থ্য। শুধু সাংবাদিক ধীমান দাস নয়, অনেকের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে।

দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ পিসিআর আরটি ল্যাবে প্রায় দেড় হাজার নমুনা জোট বেধে রয়েছে। এ ল্যবে দিনাজপুর,ঠাকুরগাঁও,পঞ্চগড় এবং নীলফামারী এই ৪ জেলার মানুষের করোনা নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম চলছে। এতে সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন। কিন্তু, বিশিষ্টজনেরা বলছেন, ভিন্নকথা। ল্যাব সংশ্লিষ্টদের খামখেয়ালীপনা এবং উদাসীনতায় এমনটা ঘটছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here