র‌্যাপিড টেস্টিং কিট ব্যবহার হবে,শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না তা নির্ণয়ের জন্য।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ র‌্যাপিড টেস্টিং অ্যান্টিবডি কিটের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে করোনাভাইরাস শনাক্ত করার ক্ষেত্রে এই কিট ব্যবহার করা হবে না। ব্যবহার হবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না তা নির্ণয়ের জন্য।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান র‌্যাপিড টেস্টিং কিট আবিষ্কার করেছে। তাছাড়া ২৫–৩০টি প্রতিষ্ঠান র‌্যাপিড টেস্টিং কিট আমদানির অনুমতি চেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে কি কি শর্ত পূরণ করতে পারলে কিট অনুমোদন দেওয়া যাবে তা ঠিক করা জরুরি হয়ে পড়ে। সে কারণেই বিশেষজ্ঞ কমিটি বৈঠক করে একটা নীতিমালা চূড়ান্ত করছে।

ঔষধ, ইনভেস্টিগেশনাল ড্রাগ, ভ্যাক্সিন এবং মেডিকেল ডিভাইস মূল্যায়নের নিমিত্তে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন। ১৪ সদস্যের কমিটির অন্যান্য সদস্যরা বিএসএমএমইউ, আইসিডিডিআর,বি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

গত ২১ ও ২৩ জুন এই কমিটি দুই দফা বৈঠক করে নীতিমালা চূড়ান্ত করে। নীতিমালায় বলা হয়েছে সেরো সার্ভেইল্যান্স এবং কনভালসেন্ট প্লাজমা থেরাপি ও গবেষণার কাজে এই কিট ব্যবহার হবে। অপব্যবহার রোধে শুধুমাত্র কিটটি ল্যাবরেটরিতে ব্যবহার করা যাবে। কিটের মোড়কে লিখতে হবে, ‘দিস ইজ নট এ ডায়াগনস্টিক কিট, দিস কিট উইলবি ইউজড অনলি ফর ডিটেক্টিং অ্যান্টিবডি, নট ইন অ্যাকিউট স্টেজ’ (এটি নির্ণায়ক কিট নয়, শুধুমাত্র অ্যান্টিবডি শনাক্ত করার কাজে ব্যবহার করা যাবে, রোগ শনাক্ত করার কাজে নয়) ।

কিটগুলো পয়েন্ট অফ কেয়ারে (কোভিড–১৯ পরীক্ষা কেন্দ্রে) ব্যবহার করা যাবে না। কিটের আইজিজি / আইজিএম এর সেনসিটিভিটি ৯০ ভাগ ও স্পেসিফিসিটি ৯৫ ভাগ হতে হবে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, আরটি–পিসিআর পরীক্ষায় ১০০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে, র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টিং কিটে কমপক্ষে ৯০ জনের পজিটিভ আসার শর্ত দেওয়া রয়েছে।

কমিটির প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স অনুষদের সাবেক ডিন মো. কামাল। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উপসর্গ দেখা দেওয়ার ১৪ দিনের আগে বিশ্বের কোথাও র‌্যাপিড টেস্টিং কিটের ফল ভাল আসেনি। সে কারণে বাংলাদেশেও ১৪ দিনের আগে এটি ব্যবহারের পক্ষে নই আমরা।’ সেরো সার্ভেইল্যান্স বলতে বোঝানো হয়েছে, একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে রোগটির বিরুদ্ধে অ্যান্টবডি তৈরি হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশরাফুল হক বলেছেন, কেন কনভালসেন্ট প্লাজমা থেরাপির জন্য এই কিট প্রয়োজন। তিনি বলেন, কোভিড–১৯ থেকে সেরে ওঠার পর রক্তে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডিটা একসময়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। এরপর কমতে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেওয়ার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি যখন সর্বোচ্চ, সেই সময়টা বেছে নিতে হয়। এমন অনেকে প্লাজমা দিতে আসছেন যাদের রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণ কম। কারও কারও অ্যান্টিবডি তৈরি না হওয়ারও নজির আছে। র‌্যাপিড টেস্টিং কিট এই সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে।

প্লাজমা থেরাপি দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত এই চিকিৎসক আরও দুটি সমস্যার সমাধান এই কিট থেকে হতে পারে বলে মনে করেন। তিনি বলেন, নমুনা সংগ্রহের সময় একটি আরেকটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ফলে অনেকে নেগেটিভ হলেও, ফল এসেছে পজিটিভ। তাঁরা যখন প্লাজমা দিতে আসছেন, তখন বোঝা যাচ্ছে তাঁরা আসলে আক্রান্তই হননি। তাছাড়া আরটিপিসিআর পরীক্ষায় ভাইরাসের সংখ্যা ২০০ র নিচে হলে পরীক্ষায় শনাক্ত হয়না। সেক্ষেত্রেও র‌্যাপিড টেস্টিং কিট কাজে লাগতে পারে। জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কিটের বিষয়টি অনুমোদনের জন্য জোর সুপারিশ করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here