শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া দেবে না ভারত

0
শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া দেবে না ভারত

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তবে সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে ফেরাতে নয়াদিল্লিকে চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্ত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া না দেওয়ার কথা জানিয়েছে ভারত।

ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস প্রত্যর্পণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় সূত্রের বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে। কারণ হিসেবে সূত্র জানিয়েছে, এ ধরনের ইস্যুকে এগিয়ে নিতে ঢাকা প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেনি। এর আগে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি নোট ভারবাল বা স্বাক্ষরবিহীন কূটনৈতিক চিঠিপত্রের মাধ্যমে প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা হয়। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে নজিরবিহীন টানাপোড়েনের মধ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছে, কূটনৈতিক বিনিময়ের সর্বনিম্ন স্তরের একটি হলো নোট ভারবাল। সাধারণত প্রত্যর্পণের অনুরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নোট ভারবাল ব্যবহৃত হয় না। নয়াদিল্লির কিছু মহল প্রত্যর্পণের দাবিকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে ‘ট্রাম্প কার্ড’ বলে মনে করছে। বিশেষ করে যেসব ছাত্র সংগঠন প্রভাব বিস্তার করছে তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ দিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ‘প্রত্যর্পণ কোনো সহজ প্রক্রিয়া নয় এবং এই জাতীয় অনুরোধ করা ও গ্রহণে উভয় পক্ষেরই কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যে ব্যক্তি প্রত্যর্পণের অনুরোধের বিষয় তার কাছেও বিকল্প রয়েছে। সেই বিকল্পগুলো এখনো প্রয়োগ করা হয়নি। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে  ২০১৩ সালে হওয়া প্রত্যর্পণ চুক্তিতে এমন বিধান রয়েছে যার অধীনে প্রত্যর্পণের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে।

চুক্তির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যে অপরাধের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে তা যদি রাজনৈতিক অপরাধ হয়, তাহলে প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করার কারণ তালিকাভুক্ত ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে সরল বিশ্বাসে অভিযোগ না করা হলে’ কোনো ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ করা যাবে না। গত ২৩ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল প্রত্যর্পণের অনুরোধের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি নোট ভারবাল পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন, তবে এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরেছিল ভারত। ৯ ডিসেম্বর একদিনের সফর শেষে এক বিবৃতিতে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং একে অপরের উদ্বেগের প্রতি পারস্পরিক সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভারতের ইচ্ছার’ কথা তুলে ধরেন তিনি।

গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন ব্যক্ত করে মিশ্রি বলেন, যোগাযোগ, বাণিজ্য ও জ্বালানির মতো ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের শীর্ষ একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাক্ষাৎকারের বিষয়টিও হিন্দুস্তান টাইমসের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাক্ষাৎকারে ভারতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি এবং প্রত্যর্পণের অনুরোধের বিষয়টি উঠে আসেনি।

যেখানে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বলেছেন— বাংলাদেশ নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ভারতের ওপর নির্ভরশীল এবং এমন কিছু করবে না, যা নয়াদিল্লির কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী। বাংলাদেশের স্থিতিশীলতায় ভারতের আগ্রহ রয়েছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক রয়েছে, যা অবশ্যই ন্যায্যতার ভিত্তিতে হতে হবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও বুধবার প্রত্যর্পণ অনুরোধ এবং অন্যান্য ইস্যুতে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন বলে দাবি করা হয় প্রতিবেদনে।

তৌহিদ হোসেনের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়,এটি (প্রত্যর্পণ) একটি ইস্যু এবং দুই দেশের অনেক দ্বিপক্ষীয় বিষয় রয়েছে। ভারতের প্রত্যর্পণ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এসব বিষয় পাশাপাশি নিয়ে এগিয়ে যাব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here