সেনাবাহিনী কত দিন মাঠে থাকাবে সিদ্ধান্ত নেবে সরকারই

0
সেনাবাহিনী কত দিন মাঠে থাকাবে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তে। সুতরাং সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে সেনাবাহিনীর মাঠে কত দিন থাকা প্রয়োজন। সেনাবাহিনী তত দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে থাকবে। বুধবার (১৩ নভেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসের মেস আলফায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানিয়েছেন মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান।

দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দেশের ৬২টি জেলায় মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যৌথ অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তায় দায়িত্ব পালন করছে বাহিনী। আরও কতদিন সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে, তা সরকারের সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে সেনা সদর। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে সেনাবাহিনী আর কত দিন মোতায়েন থাকবে জানতে চাইলে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, সেনাবাহিনী কত দিন থাকবে তা সরকারের সিদ্ধান্ত।

সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তে। সরকারই নির্ধারণ করবে সেনাবাহিনী কত দিন মোতায়েন থাকা প্রয়োজন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে গত ১৯ জুলাই দিবাগত রাতে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করে সরকার। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পরও মোতায়েন থাকে সেনাবাহিনী।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদবির অফিসারদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয় সরকার। প্রজ্ঞাপনে পরবর্তী ৬০ দিনের জন্য এই ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার কথা জানানো হয়। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর আগের প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়, যা এখনো চলমান আছে জানিয়ে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী ৬ হাজারের বেশি অবৈধ অস্ত্র এবং প্রায় ২ লাখ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ২৫০০-এর বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৬০০-এর বেশি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী।

কারখানাগুলোকে চালু রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ-সহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে বর্তমানে দেশের ২০৮৯টি গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে প্রায় সব কটিই এ মুহূর্তে চালু রয়েছে। এর পাশাপাশি ৭০০-এর অধিক বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। যার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৪১টি, সরকারি সংস্থা বা অফিস সংক্রান্ত ৮৬টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৯৮টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ৩৮৮টি।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সময়মতো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এবং বহু মানুষের জানমালের ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। বিদেশি কূটনীতিকরা ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কূটনৈতিক এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক সেনা টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা, বিভিন্ন অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তারের কাজেও সম্পৃক্ত রয়েছে।

যৌথ অভিযানে ৭০০ জনের বেশি মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজাসহ অন্যান্য অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় বাহিনীটি। মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে সচেতন সেনাবাহিনী সেনাবাহিনী মাঠে থাকা অবস্থায় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে কি না, ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রতিরোধের বিষয়ে সেনাবাহিনী অত্যন্ত সচেতন।

এ বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দিষ্ট আদেশ রয়েছে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতিতে যেন কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যা সংঘটিত হতে না দিই। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে এটাকে প্রতিরোধ করার। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা হয়তো যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলো জানতে পারছেন। আমাদের কার্যক্রমের কারণে এ ধরনের পরিস্থিতিতে কতগুলো ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে, তা সেভাবে জনগণের সামনে আসে না।

একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, সেখানে বলা হয়, ধর্ম অবমাননার জন্য একজনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিওতে সেনা সদস্যরা একজন ব্যক্তিকে চোখে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছেন, মারধর করছেন, এমন দৃশ্য দেখা গেছে। সেই ভিডিওটি কী আপনার দেখেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, পরিস্থিতির প্রয়োজনে অনেক কিছু করতে হয়। কিন্তু এটা সেনাবাহিনীর টার্গেট (লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে) করে কাউকে মেরেছে, এমন কোনো ঘটনা হয়নি।

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট উদ্ধার করা ছাড়াও এসএসএফের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসএসএফের ভারী অস্ত্র খোয়া যায়নি। কিছু পিস্তল খোয়া যায়। সেটার সন্ধানে কার্যক্রম চলছে। আর পুলিশের খোয়া যাওয়া বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। যেগুলো উদ্ধার হয়নি, সেগুলো উদ্ধারে কাজ চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী কাজ করছে, পুলিশকে সহায়তা করছে।

এমন অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আদৌ উন্নতি হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সেনা কর্মকর্তা ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, পুলিশের কাছে যেসব ডেটা আছে, সেটি দিয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই স্টাডি অনুযায়ী বর্তমানে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাওয়ার পরে যে পরিসংখ্যান, সেখানে আগের তুলনায় অপরাধ কমেছে। পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। তবে হয়তো প্রত্যাশা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত উন্নতি হয়নি।

সেটা যেন হয়, সেই অনুযায়ী চেষ্টা চলছে। জামিনে মুক্ত হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিষয়ে তিনি বলেন, যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে যে তারা আবার অপরাধে লিপ্ত হচ্ছেন, তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। কয়েক দিন আগে পুলিশের একজন সহকারী সুপারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর একজন মেজরের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পরিষ্কার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সেদিন আসলে কী হয়েছিল, পরে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল? এর জবাবে ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, এটা একটি ভুল-বোঝাবুঝির ঘটনা ছিল। এটা একটা আইসোলেটেড ঘটনা। পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সার্বিকভাবে ভালো। এ ঘটনায় সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চাকরিচ্যুত ও পলাতক মেজর জিয়াউল হক জিয়া সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এই মুহূর্তে সেনাবাহিনীর কাছে কোনো তথ্য নেই।

তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি বন্যায় বিপদগ্রস্ত মানুষদের উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ এবং জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছে সেনাবাহিনী। হিন্দু ও বৌদ্ধদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন বাহিনীর সদস্যরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here