নির্বাচন কখন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের নয় : ড. মুহাম্মদ ইউনূস

0
নির্বাচন কখন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের নয় : ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি বলে মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহবানে আমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করবো। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে ।

কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহবানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাবে যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয় আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাবো।

আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করবো। কমিশনকে যে কোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখবো।তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। দেশবাসীকে অনুরোধ করবো, একটা আলোচনা শুরু করতে আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাবো, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিক নির্দেশনা পেতে পারি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে। এই দিক নির্দেশনা না-পেলে আমরা দাতা সরকার এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে আলোচনায় দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রসর হতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমরা আমাদের পক্ষ থেকে মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো প্রশ্ন তুলবো না। আমরা আপনাদের সকলের দোয়া চাই। যে ক’দিন আছি সে সময়টুকু উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রত্যেকে নিজ নিজ সাধ্য মতো দেশের এই সংকটকালে, সংকট উত্তরণে যেন নিজ নিজ মেধা সাধ্য মতো কাজে লাগাতে পারি, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করলাম, আমরা আমাদের মতানৈক্যের কারণে সেটা যেন হাতছাড়া না করে ফেলি এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই।

এ সুযোগ এবার হারিয়ে ফেললে আমরা জাতি হিসেবে পরাজিত হয়ে যাব। শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই আমরা এই অর্জনকে কিছুতেই হারিয়ে যেতে দেবোনা। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর একটি শ্রদ্ধেয়, সকল দিকে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী, দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি। সব শেষে আবারো আমাদের দেশের সকল মানুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী,, বয়স্ক, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ সবার কাছে দোয়া চাইছি যেন আমরা আমাদের সকলের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সফল হই।

নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা হবে এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে সফল পরিণতি দিতে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইন-শৃঙ্খলা খাত এবং তথ্য প্রবাহে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এর লক্ষ্য হবে দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহীতামূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here