সদরঘাট যেন জেগে উঠেছে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়

0
সদরঘাট যেন জেগে উঠেছে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ পীর আবদল মান্নান: রাজধানীর নিষ্প্রাণ সদরঘাট যেন জেগে উঠেছে। ঈদ সামনে রেখে ঘরমুখো যাত্রীদের পদচারণে মুখর ঢাকার প্রধান নদীবন্দরটি। লঞ্চের কর্মীরা যেমন নিজ নিজ লঞ্চে যাত্রী ভেড়াতে হাঁকডাক করছেন, তেমনি যাত্রীরাও মালামাল নিয়ে লঞ্চে উঠতে ব্যতিব্যস্ত। ঈদ যাত্রার সে এক রোমাঞ্চকর আমেজ।

গতকাল শুক্রবার দক্ষিণের ৪১টি পথে চলাচলের জন্য ঘাটে প্রস্তুত ছিল ১২০টি লঞ্চ। যাত্রীতে পূর্ণ হলেই নির্ধারিত সময়ের আগেই ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চগুলো। গতকাল  রাত ১০টা পর্যন্ত ৯৮টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের দিকে রওনা হয়ে যায়। এ সময়ে আরো ১০টি লঞ্চে যাত্রী উঠছিল। আগামী সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়ছে কর্মজীবী মানুষ। বাসের পাশাপাশি দক্ষিণের পথে লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো।

গতকাল সকাল থেকেই সদরঘাটে যাত্রীর চাপ ছিল। বিকেলে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, বড় লঞ্চগুলোর কোনো কেবিন খালি নেই। বেশির ভাগ লঞ্চ যাত্রীঠাসা। লঞ্চের নিচতলায় (ডেকে) পাটি বিছিয়ে যাত্রীরা যার যার মতো বসে পড়েছে। কোনো কোনো লঞ্চের ডেকে যাত্রীদের বসার জায়গাও নেই। আবার যাত্রীতে ভরপুর থাকার পরও কোনো কোনো লঞ্চে আরো যাত্রী তোলার তোড়জোড় দেখা যায়। কিছু লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নিতেও দেখা গেছে। বরিশাল যাচ্ছেন আমান মিয়া।

ঈদের আগে পদ্মা সেতু দিয়ে বাসে চড়ে বাড়ি গেলেও ঈদে যাচ্ছেন লঞ্চে করে। জানালেন, ঈদ যাত্রায় পরিবারের চারজন সদস্যসহ মালামাল নিয়ে লঞ্চে যাওয়াই সুবিধাজনক। আমান মিয়া বলেন,আসলে এই গরমে লঞ্চের ভ্রমণ আরামের। সময় একটু বেশি লাগলেও যাত্রা স্বস্তির হয়। ঢাকা থেকে চাঁদপুরের পথে চলাচলকারী রফরফ-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার রাকিব হোসেন জানান,অন্যান্য দিনের তুলনায় ঈদের লঞ্চে যাত্রীর ছবি বদলে দিয়েছে। আগের ঈদগুলোতেও যাত্রীর এত চাপ ছিল না।

দুই দিন ধরে যাত্রী অনেক বেড়েছে, কাল (শনিবার) আরো বাড়বে। ঈদ যাত্রা নিরাপদ করতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ পুলিশ, বিআইডাব্লিউটিএ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন। বিআইডাব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও ট্রাফিক) মো. আলমগীর কবীর বলেন স্বাভাবিক পরিস্থিতির তুলনায় যাত্রীর চাপ অনেক বেড়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কোনো লঞ্চ যেন ঘাট ছাড়তে না পারে—সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

এদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বিআইডাব্লিউটিএ। গতকাল সন্ধ্যায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা হকারমুক্ত রাখতে, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বন্ধ করা, যাত্রী হয়রানি বন্ধ করার মাধ্যমে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে এবং অননুমোদিত লঞ্চ চলাচল বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। বিআইডাব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

আগের দিন বৃহস্পতিবার অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এর বিভিন্ন ধারায় এমভি মানিক-৯ লঞ্চকে (রেলিং না থাকায়) দুই হাজার টাকা, বাগেরহাট-২ লঞ্চকে (অবৈধভাবে নোঙর করা) পাঁচ হাজার টাকা, রাজারহাট-বি লঞ্চকে (রেলিং না থাকায়) তিন হাজার টাকা ও রাজদূত প্রাইম  লঞ্চকে (রেলিং না থাকায়) তিন হাজার টাকাসহ মোট ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here