ভেঙে গেলো জুটি, ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছে সাবিনা ইয়াসমিন

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ এন্ড্রু কিশোর আর নেই-খবরটি শোনামাত্র মনে হলো, আমার সত্তার একটি অংশের মৃত্যু হলো। যার সঙ্গে গানে গানে এতটা বছর পথ পাড়ি দিয়েছি, সে মানুষটি আমাদের মাঝে নেই, ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। একসময় প্লেব্যাকের জুটি মানেই ছিল এন্ড্রু কিশোর-সাবিনা ইয়াসমিন। এ জুটির এখন বিদায় হয়েছে। এটা যে কত বড় বেদনার, তা কোনোভাবেই বোঝাতে পারব না।

আমরা একসঙ্গে অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছি। আমাদের অনেক গানই শ্রোতারা গ্রহণ করেছেন। ব্যক্তি এন্ড্রু কিশোরের অনেক গান শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে। তার অনেক গান সবসময়ই শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে। সম্ভবত বাংলা ভাষায় এন্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয় গানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এখনও কোথাও বেড়াতে গেলে প্রিয় মানুষের [এন্ড্রু কিশোর] গান শুনতে পাই। একসঙ্গে গান করতে গিয়ে দু’জনের বন্ধুত্বও গাঢ় হয়েছে।

সে বন্ধুটি, সে মানুষটি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরই আমি ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। কোনো কাজে মন দিতে পারছিলাম না। আমি নিজেও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলাম, সবার দোয়ায় ফিরেও এসেছি। কিন্তু এন্ড্রু কিশোরের বিষয়টি ভিন্ন। তার সমস্যা আরও জটিল ছিল। চিকিৎসাও ছিল ব্যয়বহুল। অর্থাভাবে তার রাজশাহীর বাড়িটিও বিক্রি করে দেওয়া হয়। বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রিয় শিল্পীর প্রতি।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছিলেন। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলছিল তার। এন্ড্রু্র কিশোরের শারীরিক অবস্থা কখনও ভালো, আবার কখনও খারাপ যাচ্ছিল। এ অবস্থার মধ্যেই করোনাকালে দেশে এসেছেন শ্রোতাদের ভালোবাসার টানে।

মানসিকভাবে একধরনের প্রস্তুতি আমার, আমাদের ছিল; তিনি চলে যাচ্ছেন। তারপরও সত্যিই যখন সে খবরটি এলো, মনে হলো সব প্রস্তুতি ব্যর্থ। আমরা আমাদের অন্যতম সেরা কণ্ঠশিল্পীকে চিরদিনের জন্য হারালাম। এই কষ্ট আসলে তিনি যাওয়ার আগে বুঝিনি।

এন্ড্রু কিশোরের প্রিয় হাসিমুখ খানি চোখের সামনে ভেসে আসছে। কতশত স্মৃতি যে মনে পড়ে। শুধু রেকর্ডিংয়ে যে অজস্র স্মৃতি আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি ছিলেন স্বভাব রসিক, পরিমিত জীবনযাপন করতেন। পরিচ্ছন্ন মানসিকতার, নিজের পরিবার, স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি তার সজাগ দায়িত্ববোধ তাকে অনন্য করে তুলেছিল। তিনি আড়ালে থাকতেই পছন্দ করতেন; হাজার হাজার জনপ্রিয় গান তার- কখনোই এ নিয়ে কোনো দম্ভ দেখিনি। বরং আমরা কথা তুললে তিনি লাজুক হাসিতে অন্য প্রসঙ্গে চলে যেতেন।

সিঙ্গাপুর বিজনেস সোসাইটি এবং বাংলাদেশ চেম্বারের আয়োজনে গেটওয়ে থিয়েটার হলে আয়োজন করা হয় ‘এন্ড্রু কিশোরের জন্য ভালোবাসা’ শিরোনামের সংগীতানুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে অনেক শিল্পীর সঙ্গে আমিও ছিলাম। বক্তৃতা দিতে গিয়ে এন্ড্রু কিশোর তার গাওয়া ‘জীবনের গল্প’ গানটির কয়েকটি লাইন গেয়ে শোনান। উপস্থিত সবার চোখ এ সময় ছলছল থাকলেও প্রিয় শিল্পীর গান শুনতে পেরে আবেগে ভাসেন তার সহশিল্পীরাও। সিঙ্গাপুরের ওই অনুষ্ঠানের পর এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে আর সেভাবে দেখা হয়নি।

শুধু শিল্পী হিসেবেই নয়, মানুষ হিসেবে এন্ড্রু কিশোর ছিলেন বন্ধুদের কাছে অতিপ্রিয়। যে কোনো আড্ডায় তিনি ছিলেন মধ্যমণি। তার মৃত্যুতে বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল সংগীতের। তার মতো শিল্পী ছিল বলেই বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের ভিত অনেক মজবুত হয়েছে।

এমন অসামান্য শিল্পীর আসলে মৃত্যু হয় না। তিনি চির অমরের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে স্বর্গবাসী হলেন। এন্ড্রু কিশোরের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here