প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ রাজশাহীতে বেশ কিছুদিন থেকে বাজারে বিক্রি হচ্ছে অপরিপক্ক, কষ্টা লিচু। জৈষ্ঠ্যের আগমন হয়েছে মাত্র। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পাকতে শুরু করবে মধুমাসের অন্যতম ফল লিচু। কিন্তু রমজান শুরু হয়ে যাওয়ায় বেশি লাভের লোভে বাগানের কাঁচা লিচুই বাজারে আনছেন রাজশাহীর পাইকার ও কৃষকরা।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, জেলায় তিন হাজার ৬৪৬ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। মধুমাস জৈষ্ঠ্যের অন্যতম রসালো ফল লিচুর প্রকৃত স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন লিচু প্রেমীরা। রমজানের জন্য দিনের বেলায় স্বাদ নিতে না পারায় অসাধু ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ক লিচু বাজারে এনে পরিপক্ক বলে বিক্রি করছে। ফলে বেশীরভাগ লিচুই দাম দিয়ে কিনে ইফতারের পর ফেলে দিতে হচ্ছে। এভাবে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা।
গতবছর থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আম নামানোর সময় বেধে দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের এই উদ্যোগকে ভোক্তা ও সচেতন মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছেন। ভোক্তারা আমের পাশাপাশি মধুমাসের আরেকটি রসালো ফল লিচু নামানোর সময়ও নির্ধারণ দেখতে চান। এতে অন্তত: ক্রেতারা প্রতারিত হবে না বলে তারা জানান। আমের জাতের ওপর যেমন নির্ভর করে দিন নির্ধারণ হয়েছে। তেমনি লিচুরও প্রকারভেদ রয়েছে। দেশি লিচু, চাইনা, বোম্বে এসব লিচুও একই সময়ে পাকে না। তাই দিন নির্ধারণ করলে খুবই ভাল হয়।
পবার নওহাটা এলাকার শিমুল সরকার, সাবেক অধ্যাপক আলাউদ্দিন মোল্লা বলেন বাজারে অপরিপক্ক লিচু বিক্রি হচ্ছে। ওপরে পাকা ও চকচকে মনে হলেও ভিতরে রস থাকছে না এবং কষ্টা। লিচুতে আসল স্বাদ নেই। মফস্বল হাট বাজার থেকে শুরু করে রাজশাহী মহানগরীর প্রায় সবক‘টি মোড়ে মোড়ে বিক্রি হচ্ছে এই অপরিপক্ক ও মানহীন কষ্টা লিচু। বিশেষ করে নওহাটা, কাটাখালি, নওদাপাড়া, শালবাগান, রেলগেট, লক্ষীপুর, কোর্টবাজার ও সাহেব বাজারে এসব লিচু দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত অন্যান্য ফলে ফরমালিন, ইথিলিন ও কার্বাইট ব্যবহারে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান হলেও লিচুর বিষয়ে প্রশাসন উদাসীন।
সরেজমিনে জানা গেছে, পবা উপজেলার দুয়ারী, মহানন্দখালী, মোহনপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে এমনকি নগরীর পাশে বছিরাবাদ এলাকা থেকেও এই অপরিপক্ক লিচু বাজারজাত করা হচ্ছে। প্রতি বছর জৈষ্ঠ্যে মাস জুড়েই আমের মত রাজশাহীর লিচু অন্যান্য স্থানে সরবরাহ না হলেও স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা প্রচুর। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটটি ভিন্ন। রমজানে ভালো বিক্রির লোভে গত কয়েকদিন ধরে কৃষক ও স্থানীয় পাইকাররা অপরিপক্ক লিচু গাছ থেকে সংগ্রহ করে তা বাজারে তুলছেন। আর এতেই লিচু প্রকৃত স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন লিচু প্রেমীরা।
মঙ্গলবার বিকালে রেলগেট এলাকায় লিচু কিনতে আসেন একটি মোবাইল কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি জানান বাজারে যে লিচু পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগ আবাত্তি (অপরিপক্ক)। আর কিছুদিন গাছে থাকলে লিচুর প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যেত। এখন যে লিচু গুলো পাওয়া যাচ্ছে তার অধিকাংশই টক। তবে, ভ্রাম্যমাণ লিচু বিক্রেতা সনাতন মন্ডল জানান এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে পুরোদমে বাজারে লিচু লাগবে। এখন বাজারে লিচুর দাম একটু চড়া, এ চড়া দাম নেমে যেতে পারে। তাই রমজানের প্রথমেই বাগান থেকে দেখে দেখে পাকা পাকা কিছু লিচু বাজারে তুলছি বলে দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলার পুঠিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মনজুরে মাওলা বলেন লিচুর ভালো ফলনের আশায় কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। লিচু পরিপূর্ণভাবে পাকার আগে তাঁর পরিপূর্ণ স্বাদ পাওয়া যায় না। লিচু পরিপক্ক হলেই তা গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতে হয়। তিনি আরো জানান আরো কয়েকদিন পর লিচু নামালে পুষ্টতা ও গুণগত মান ঠিক থাকবে। অপরিপক্ক লিচু বাজারে প্রশাসন থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রনি খাতুন জানান বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হবে এবং শীঘ্রই পদক্ষেপ নেয়া হবে।