প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মানুষ হিসেবে প্রতিটি মানুষের একটা সামাজিক মর্যাদা রয়েছে। মানুষের এই সামাজিক মর্যাদার প্রতি ব্যক্তি তথা রাষ্ট্রের শ্রদ্ধাবোধ থাকাটা জরুরি। আমাদের দেশে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মীদের অসম্মান বা হয়রানি নতুন কোন ঘটনা নয়। তবে রাজনৈতিক হয়রানিকে সারা পৃথিবীতে অন্য রকমভাবে দেখে। মধ্য প্রাচ্যর কিছু দেশ, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং এশীয় অঞ্চলে এটা বেশি লক্ষ্মণীয় । ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা কম দেখা যায়। সাম্প্রতিক ট্রাম্প ঘটনা বাদ দিলে । তবে রাজতন্ত্রের দেশ আর সমাজতন্ত্রের দেশে এই প্রতিপক্ষ নির্যাতনের চিত্র ভয়াবহ । ভ্লাদিমির পুতিনের মতো শাসকরা ক্ষমতায় থাকার জন্য বিরোধী পক্ষকে নির্মূল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।
অভিযোগ আছে রাশিয়ার প্রধান বিরোধী দলের নেতা আলেক্সেই নাভানলিকে হত্যার জন্য পুতিনের লোকজন বিষ প্রয়োগ করে । সৌদি শাসকরা তো প্রতিপক্ষের সমালোচনা ও সহ্য করতে চায় না, যার প্রমাণ সাংবাদিক খাসোগী হত্যা । আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র চীনে ও সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা বড় অপরাধ। দেশটির সবচেয়ে বড় বেসরকারি কৃষি খাতের ব্যবসায়ী হুবেই প্রদেশের সান দাও। তাকে ২ /৩ দিন আগে ১৮ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি সাধারণত মানবাধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে কথা বলতেন। এর আগেও তিনি বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমালোচনা করেছেন।
তাই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের নির্যাতন নতুন কোন ঘটনা নয়। আমাদের দেশে বর্তমান বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের হয়রানির মূল হাতিয়ার হলো মামলা দিয়ে জেলে হাজতে আটক রাখা ও হয়রানি করা, আর মাঝে মধ্যে গুম করে ফেলা । এই হয়রানির জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, দ্রুত বিচার আইন, সন্ত্রাস বিরোধী আইনসহ বহু আইন আছে। এগুলো মূলত বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের নির্যাতনের জন্যই সর্বাধিক ব্যবহৃত । তবে আমাদের এখানে আর একটা দিকও আছে তাহলো সরকার দলের নেতা কর্মীরা দলের মধ্যে প্রতিপক্ষ বা দলের সিনিয়র নেতাদের রোষানলে পড়লে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা হয়রানি ও গ্রেফতার ।
ক্ষমতাসীন দল কোন কারণে কোন নেতার উপর রুষ্ট হলেই তার রফাদফা সারা। পদচ্যুত, মামলা, হামলা, ব্যবসা বন্ধ, ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ, ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল সাথে বাসা বা অফিস তল্লাশি করে মাদক, হরিণের চামড়া, বিদেশি মুদ্রা ও অস্ত্র উদ্ধার । ঐ নেতার অবস্থা বিরোধী দলের লোকদের থেকেও খারাপ হয় তখন ! এই বাস্তবতা আমরা দেখতে পাই সাম্প্রতিককালে আওয়ামী লীগ ও এর সাথে সম্পৃক্ত নেতাদের বাড়ী বা অফিসে যখনই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতৃক অভিযান চালানো হয় তখনই দেখা যায় তাদের কাছ থেকে বিপুল মাদক, অস্ত্র , হরিণের চামড়া, অর্থ পাওয়া যায় ।
এ ঘটনায় এই প্রশ্ন আসাটা কি স্বাভাবিক নয় যে সরকার দলের অন্য কোনও নেতাদের বাসা বা অফিসে তল্লাশি চালালেও কি একই অবস্থা হবে ? সম্রাট, খালিদ, জিকে শামীম, এরফান সেলিম আর হালের হেলেনা জাহাঙ্গীর সবার কাছ থেকেই প্রায় একই জিনিস উদ্ধার ! আচ্ছা হেলেনা আপার বাসায় মদ কি বহিষ্কার এর পরই এসেছে ? নাকি আগে ও ছিল ? তাহলে এতোদিন তার বাসা তল্লাশি হলো না কেন ? অন্য ভাইদের বেলায় ও আমার একই প্রশ্ন । শুধু দল বিরাগভাজন হলেই অভিযান আর অভিযান হলেই ওসব উদ্ধার ! ভাই আপনারা যারা আওয়ামী লীগ করেন বাসা পরিস্কার রাইখেন।
দল রুষ্ট হলেই কিন্তু পরিনতি ঐ রকমই হবে আর দল যে কখন কার উপর বিল্লা খাবে বলা মুশকিল ! হেলেনা আপা চাকরিজীবী লীগের দোকান না খুললে তার বাসায় মদ আর হরিণের চামড়া কি বৈধ ছিল ? নাকি আপা বহিস্কারের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ঐ সব হাবিজাবি এনেছেন ! দল খুশি থাকলে চরিত্রবান দল অখুশি হলেই মদখোর ! খুবই দূঃখজনক। এইখানে আমার জীবনে খুব কাছ থেকে দেখা একজন নেতার পরিনতি না বললে বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবো। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতার বেলায় ও এই ঘটনা ঘটেছিল বিএনপি আমলে। তার অফিস থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
ছাত্র দলের ঐ নেতার প্রতি তার ক্ষমতাসীন দলের রুষ্ট হওয়ার পরিনতি ছিল ওটা । আমাদের রাজনীতি কবে বিশুদ্ধ হবে ? দলের পেছনে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় দেওয়ার পরও দলের বাইরে একটু গেলেই ভয়াবহ পরিনতি । কতটা অকৃতজ্ঞ আমাদের রাজনীতি ! আমরা যদি ধরেও নেই তারা অপরাধের সাথে জড়িত ছিল তাদের তো রাষ্ট্র চাইলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো। তাদের প্রতি আর একটু সদয় হতে পারতো,আর একটু মানবিক হতে পারতো । তাদের থেকে ও তো আরও বড় বড় অপরাধী নেতা দলে আছে, দলে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে !
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো সরকার দল রুষ্ট হওয়ার সাথে সাথে রাষ্ট্র ও রুষ্ট হয়ে যায়। সরকারে থাকা রাজনৈতিক দল আর রাষ্ট্রের মাঝে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না । আমি বিশ্বাস করতে চাই ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদার প্রতি যত্নশীল হবে !