লক ডাউনে অনেক শিশুর নিজ বাড়ি, বন্ধুটি ও অনিরাপদ — অ্যাড: জেসমিন সুলতানা।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ গতকাল মিডিয়া,সংবাদ পত্রের মাধ্যমে বরিশালের বাকেরগন্জে একজন কন্যা শিশুকে খেলতে যাওয়া তার চার শিশু খেলার সাথীর দ্বারা ধর্ষনের শিকার হয়েছে বলে আমরা দেখছি।কোন একটা ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই পক্ষে বিপক্ষে অনেক বিজ্ঞ জনেরা মতামত দিতে মরিয়া হয়ে পরেন। মিথ্যা মামলা, শত্রুতা,বৈরীতা,আগে থেকেই চরিত্র খারাপ কতো কিছুই না আসে।

ধর্ষনের মতো কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা, আক্রান্ত শিশুটির ডাক্তারী পরীক্ষা,তার ২২ ধারা জবানবন্দী,তার শরীরের আর কোন অঙ্গে আঘাত,নখের আঁচড় ইত্যাদি আছে কিনা তা পরীক্ষা করলেই সত্য বেড়িয়ে আসবে। এতো মত, এতো পথ,এতো জ্ঞান দেয়ার কিছু নেই আদালতে মামলা বিচারাধীন আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট, সমীক্ষায় দেখা গেছে বর্তমানে ৩০% শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু নির্যাতনের শিকার সমবয়সী দের দ্বারা, পরিবারের সদস্যদের দ্বারা, কখনো মেয়েদের দ্বারা। গবেষনায় দেখা গেছে দেশের ৪ জন মেয়ে শিশুর মধ্যে একজন, ৬ জন ছেলে শিশুর মধ্যে একজন নির্যাতনের শিকার।

আমরা যৌনতার শ্রেনী বিন্যাসে বহুগামিতা, পশু গামিতা,সমকামিতা,শিশুকামিতার কথা শুনে আসছি।
শিশু কামিতা ” পেডোফেলিয়া ” হলো এক ধরনের যৌন বিকৃতি, আক্রান্ত রা নাকি শিশুদের দেখলে তীব্র যৌন উত্তেজনা অনুভব করে তাই বিকারগ্রস্ত এসব মানুষেরা, কখনো নারীরা শিশুদের ও উপর যৌন নির্যাতন চালায় এটিকে চাইল্ড সেক্সচুয়েল এ্যাবিউজ বলাহয়,এ ছাড়া বিকার গ্রস্হ রা অনেক সময়ই শিশুদের ব্যবহার করে ভয়ংকর সব পর্নো ছবি নেটে ছেড়ে দিচ্ছে।।

শিশুরা জীবনের শুরু থেকেই বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে।  এখানে শিশুকে ছোঁয়া বা স্পর্শ করা একটি প্রধান বিষয়।স্পর্শের কোনটিতে থাকে কোমলতা,স্নেহ,ভালবাসা, আদর,থাকে অগাধ বিশ্বাস,ও নিরাপত্তা।আর কোনটি অপকর্ম তা শিশু বুঝতে পারেনা। অসৎউদ্দেশ্যের স্পর্শে থাকে ব্যথা,শিশুদের প্রাইভেট পার্ট গুলোতে স্পর্শ করেই বিকারগ্রস্হ হয়ে উঠে শিশু ধর্ষক। তবে নারী শিশু নির্যাতন আইনের সংজ্ঞায় তাদের ফেলানো অনেক সময় কঠিন।

আমাদের দেশে নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইন২০০০ (সংশোধনী২০০৩) এ শাস্তির বিধান রয়েছে। শিশুদের জন্য শিশু আইন ২০১৩ করা হয়েছে সেখানে মামলা গ্রহন,তদন্তরিপোর্ট, শিশুদের নিরাপত্তা,বিচার প্রক্রিয়ার সময় সীমা,বিচার চলাকালীন শিশুদের শোধনাগার রাখা, জামিন, শিশুর প্রতি দন্ড আরোপ সব কিছুই আছে। সব থাকা সত্বেও সব কিছুর আগে সচেতন হতে হবে সন্তানধারনকারী মা বাবাকে,শিক্ষা দিতে হবে শিশু সন্তানকেঃ

?️‍♂️আপনার অনুমতি ছাড়া সে যেন ঘরের বাইরে না যায়।?️‍♂️?️‍♂️কেউ অপ্রত্যাশিত ব্যবহার করলে আপনাদের যেন জানায়,তার কোন অভিযোগ,অনুযোগ উড়িয়ে দেবেন না।
?️‍♀️না জানিয়ে অপরিচিত জায়গায়,অপরিচিত মানুষের কাছে যেন না যায়, অপরিচিত কারো খাবার যেনো না খায় তাকে বলতে হবে।
?️‍♂️স্নেহ মাখা স্পর্শ আর যৌনতার স্পর্শ সম্পর্কে তাকে অবহিত করুন
?️‍♀️শিশুর সাথে গল্প করুন সে কার কার সাথে মিশে,কি ভাবে খেলেছে,গল্পেরচ্ছলে কি দেখেছে জেনে নিন।?️‍♀️আপনার শিশুর বন্ধু,তার পরিবার, বা মানসিক বিকারগ্রস্ত কোন বাবা মায়ের সন্তান কিনা জেনে মিশতে দিন।শিশুকে কোন ভাবেই একা রেখে যাবেন না,রেখে যেতে বাধ্য হলেও ঘরে সিসিটিভি,মোবাইল অপসানে শিশুটিকে দেখার অপসান রাখুন।?️‍♂️পরিবারের বন্ধু বান্ধব,আত্মীয়ের বাসা, গৃহকর্মী, ড্রাইভার, দারোয়ান, এদের কাছে না রেখে বাবা মায়ের দৃষ্টিগোচরে সন্তান দের রাখুন।আপনার শিশু সন্তানের প্রতি কারো আচরণ বাড়াবাড়ি রকমের মনে হলে তার প্রতি লক্ষ করুন যেমন অধিক পছন্দ করা,বেশী বেশী গিফট দেয়া,ছবি,ভিডিও করতে চাওয়া,চুমু দেয়া,একাকী কক্ষে নিয়ে যাওয়া মায়ের চেয়ে বেশী দরদ দেয়ার বিষয় গুলোর উপর নজর দিন।

বর্তমান সময়ে আমরা মা বাবারা সন্তানের প্রতি তেমন নজর দেইনা,কর্ম কালীন সময়ে বাদে সারাদিন ফেসবুক,চ্যাটিং ইন্টারনেটে কাটাই। শিশুর,খাওয়া,পড়া,যত্ন নেয়া, খেলাধুলা, বিনোদনের ব্যবস্হা করা সহ তার মানসিক অবস্থার খেয়াল রাখতেই হবে।আজ আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে বাস করছি। জন্মের পর থেকেই শিশুকে একটি মোবাইল ধরিয়ে দিচ্ছি।সচেতন বাবা মা হয়তো তাদের ভাল জিনিস দিচ্ছে কিন্তু যে বাবা মা তার কান্না, দুষ্টামী থামানোর জন্য মোবাইল হাতে দিচ্ছে এক সময় আঙ্গুল ঘেটে সে পর্নো ছবি বের করে ফেলছে কিনা তা ভাববার বিষয়। ইন্টার নেট যেমনি সুফল বয়ে এনেছে কুফল ও কম নেই, কেননা পর্নো ছবি দেখার কোন বয়স নির্ধারন করা নেই।

মনে রাখতে হবে ইন্টার নেট শিশুদের যোগাযোগের মাধ্যমনয়, আজকাল লক ডাউনে বাচ্চারা সারাক্ষন নেটে ডুবে থাকছে,স্কুলে ক্লাস করছে,বন্ধু বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ রাখছে পৃথিবী তার হাতের মুঠোয়।তবে অভিভাবক গন মাঝে মাঝেই একটু খেয়াল রাখবেন। এতো বিশ্বাসের কিছু নেই।। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনও শিশু নির্যাতন দমনে কঠিন আইন আছে, যৌন নিপীড়ন রোধ কল্পে বর্তমানে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী মহোদয় দের দিক নির্দেশনা মূলক রায় রয়েছে, যার সঠিক প্রয়োগ করলে কর্মক্ষেত্রে, স্কুল কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিযাতন অনেক কমে যেতো।কিন্তু আজ অবধি রায় টির সফল,প্রয়োগ বাস্তবায়ন, কর্মক্ষেত্রে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোথাও বাস্তবায়িত হয়নি।।

আমরা আমার সন্তানকে নিয়ে খেলা দেখতে চাইনা। “নিজকে জানো,নিজের দেহকে জানো” শিশু ধর্ষন প্রমান কঠিন বিষয়।দরকার ফরেনসিক ল্যাব,আর মানসিক স্বাস্হ্যের জন্য সেবা। স্পর্শকাতর বিষয়টি কতো ক্ষতিকর ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ জানেনা। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে আমাদের দেশে ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডাক্তার পরীক্ষার নামে শিশুদের যৌন নির্যাতন করা হয়,মাদ্রাসা,মক্তব,স্কুল,ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় শিশুরা নির্যাতনের শিকার। আসুন সবাই সচেতন হই। আর কোন শিশু যেন নির্যাতনের শিকার না হয়। শিশুর প্রতি মানবিক আচরন করি। তার জন্য নতুন পৃথিবী গড়ে তুলি।

লেখক: জেসমিন সুলতানা ,আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here