আল্লাহ পাকের উপর আস্থা ও বিশ্বাস থাকলে “করোনা” কেও বহন করা যায়: এড,জেসমিন সুলতানা

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ গত মার্চ মাসের পর থেকে আমরা সবাই ঘর বন্দী। একটি দিনের জন্যও বাসার কোন সদস্য ঘরের বাহির হইনি। নিয়ম মাফিক খাবার দাবার,শারীরিক ব্যয়াম,দুপুরে রোদে যাওয়া, বিকেলে বাগানে ফুল ফসলের যত্ন নেয়া সব নিয়ম মাফিক চলছিল।হঠাৎ খুব গরম,বড় মেয়ে, ছোট মেয়ে দুরুমের এসি চলছেনা,একজন মেকানিক ডাকা হলো সে হ্যান্ড সেনিটাইজার,মাক্স লাগিয়ে এলো।

দুটি এসি সার্ভিসিং করে চলে গেল।দুদিন পর দেখি আমার হাজব্যান্ডের জ্বর১০২ পরের দিন নাপা একস্ট্রা খাওয়ার পর জ্বর চলে গেল,দুদিন পর ৯৯ আবার নেই তিন দিন পর ১০০ মুখে টেষ্ট নেই,নাকে ঘ্রান নেই।। আমার জ্বর নেই তবে মুখে জ্বর ঠোস ভাবলাম গায়ে গায়ে জ্বর। আমি পাত্তা দেইনি আমার মুখে নাকে টেষ্ট,স্মেল আছে।।

বড় মেয়ে প্রাভা একটি সংস্থার লোক পাঠালো কোভিড ১৯ টেষ্ট করাতে। আমি আমার ঘর ছাড়িনি এই ভেবে যে হলে দুজনের হোক না হয় কে কাকে দেখবে।মনে হয়েছে আমার হাজব্যন্ডকে একা রুমে রাখলে সে প্রথম দিনই মারা যাবে। টেষ্টের রিপোর্ট আসা অবধি মহা টেনশন। দেখা গেলো। জন্ম না দিয়েও যাঁরা মায়ের আসন নিয়েছে তা দের ধারনারই ঠিক আমাদের পজেটিভ। এর আগে থেকেই গরম পানির ভাপ,মশলা চা গার্গেলিং, চলছিল সাথে ঔষধ।

আমার বাসাটা ডুপ্লেক্স,তাই আমরা সিদ্বান্ত নিলাম তিনতলায় ড্রয়িং ডাইনিং আমরা আইসোলেশনে রুম করে ফেলবো,করলাম ও তাই। আমার সেই ছোট্ট প্রজ্ঞা মেয়েটি কখন যে এতোটা দায়িত্বশীল মাদার তেরেসা হয়ে উঠলো ভেবে অবাক হই।ভোর থেকে রাত ঘুমানো অবধি কি খাবো,কি আমাদের করোনা মোকাবিলা খাবার হবে,কি এক্সারসাইজ করবো,সব মেয়েটি খাতায় চার্ট করে দিলো,বড় মেয়ে আসতে পারছেনা একঘন্টা পরপর অনলাইনে ভাপ নেয়ার মেশিন,প্রেশার মেশিন,এটা সেটা পাঠাতেই লাগলো।

একমাত্র জীবিত ভাই পাগল হয়ে গেলো প্যাকেট করে লুকিয়ে টাকা খাবার পাঠাতে লাগলো।এর মাঝে বড় মেয়েটির মনে হলো আমার ৮৫ বছর বয়সের মা ছোট মেয়ে,আমার বাসায় বড় হওয়া আরেকটি মেয়ে টেষ্ট করানো প্রয়োজন। টেষ্টে এলো আমার মা যে কিনা একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল তাঁর পজেটিভ।
এখন আম্মাকে কে দেখবে আমার ভাই বললো মনা আবেগ ছাড়ো আম্মাকে হাসাপাতালে দিতে হবে।

সে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ছটা অবধি একপায়ে দাঁড়িয়ে থেকে আম্মাকে অনেক চেষ্টার পর এ,এম জেড হাসপাতালে আমার মাকেভর্তি করানো হলো।আমার ভাইয়ের চোখে মুখের উদ্বিগ্নতা আজো কাদাঁয়। হাসপাতালে আম্মা যেন একাকিত্ব বোধ না করে সঙ্গে জন্য একজন সার্বক্ষণিক লোক রেখেছেন, আম্মার প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহের জন্য একজন কে ঠিক করেছেন।সে দুএক দিন পরপরই হাসপাতালে যাচ্ছেন,পৃথিবীতে এমন সন্তান আছে বলেই পৃথিবী এতো সুন্দর।

আমাদের পরিবারপরিজন সবাই উদ্বিগ্ন।আমার বড় মেয়ের শ্বশুর,শ্বাশুড়ী, সূর্য, আত্মীয় স্বজন,আমার ভাইয়ের মেয়ে, মেয়ে জামাই ছোট ভাবী,মেয়ে তুল্য বোন জোবাইদা সুচি রান্না করে পাঠিয়েছে আমাদের ভালো রাখার জন্য। দুপরিবারের বোন,ভাগ্নে, বন্ধু বান্ধব যারা সার্বক্ষনিক খোজঁ নিয়েছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আমরা এখন আল্লাহর অশেষ কৃপায় আপনাদের দোয়ায় মোটামুটি সুস্হ।

আজকে ভার্চুয়াল কোর্টে ১৭ তারিখে জমা দেয়া একটি মামলা এলে আসলে প্রচন্ড মানসিক শক্তির কারনেই মামলাটি শুনানি করলাম।তবে সবাইকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহ আমাকে সহ সবাইকে মানসিক শক্তি দিন। আল্লাহ তালার সাহায্যের পাশাপাশি আমাকে শক্তি দিয়ে,প্রেরনা দিয়ে সব রেডি করে দেয়ার কৃতিত্বই আমারই সন্তান ব্যারিস্টার প্রজ্ঞা তাপসী খানের। অনেক বড় কিছু হবে ইনশাআল্লাহ আমার মেধাবী, মানবিক গুনের অধিকারী মেয়েটি।

এ করোনা সময়ে হিংসা,দ্বেষ ভুলে গিয়ে আমরা মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হই। সবাই সব ভুলে সব ক্ষমা করি,ক্ষমা চাই,জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজাই,যদি সবাই বাঁচতে পারি। কখন কে,কিভাবে আক্রান্ত হবে কেউ জানেনা,কে নিজে জীবানু বাহক সে নিজেও জানেনা। কোন জ্বর নেই,গলা ব্যথা,মাথা ব্যথা কিছু নেই কিভাবে বুঝবে সে আক্রান্ত? ঢাকা মেডিকেলের করোনা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রেজাউল হক সাহেবের এর পরামর্শে আমরা চলেছি।আলহামদুলিল্লাহ।

আমরা ভাল আছি,আম্মা ও ভাল আছেন। সবাই দোয়া করবেন বিপদ আল্লাহ দেন তিনি ই উদ্ধার করেন।।
আল্লাহ আমার পরিবার সহ সবার সহায় হোন। সবার কাছে দোয়া চাই, দেশ বিদেশের সবার ভালবাসা, সহানুভুতি,সান্ত্বনা চিরজীবন মনে থাকবে। অনেক সময় ফোন রিসিভ করিনি, করার মানসিকতা ছিলোনা বলে দুঃখিত।। সবার জন্য দোয়া আল্লাহ সবাইকে সুস্হ রাখুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here