‘‘আপনার উদ্যোগই হতে পারে উদ্যোক্তা হওয়ার শক্তি’’: মোহাম্মদ হাসান আহাম্মেদ

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ  আমরা পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের গবেষণাভিত্তিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতির মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। এতে আঞ্চলিক অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি। তবে আমাদের প্রায়ই একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। দেশে এতো শিক্ষিত তরুণ বেকার থাকতে, আমরা কেন পঞ্চাশোর্ধ্বদের প্রাধান্য দিচ্ছি? খুবই যুক্তি-সঙ্গত প্রশ্ন।

আমাদের বিশ্বাস এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলে আপনিও বুঝে যাবেন, দ্রুত গতিতে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে কতোটা বেশি গুরুত্ব বহন করেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এইসব মানুষগুলো। প্রথমে একটি উদাহরণ দিয়ে আঞ্চলিক অর্থনীতি বিষয়টি আপনাদের কাছে পরিষ্কার করি। ধরুন,আপনি গ্রামে একটি বাড়ি বানাচ্ছেন। ওই ঘরের কাজ যেদিন থেকে শুরু করলেন, সেদিন থেকেই আঞ্চলিক অর্থনীতিতে আপনার অবদান শুরু হয়ে গেল। সেখানে কাজ করা শ্রমিকেরা আয়ের টাকা খরচ করবে বাজারে। বাজারে যাদের কাছ থেকে নিত্য পণ্য কিনবে তাদের হাতে যাবে অর্থ। তারা আবার নিজদের প্রয়োজনে ব্যবহার করবে সেই টাকা।

এভাবেই একটা চক্রের মাধ্যমে আপনার অর্থ আঞ্চলিক অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার করবে। আর আপনার বাড়ি আপনাকে দেবে নিরাপত্তা। তাহলে দেখুন, একটি বাড়ির কাজে সমাজের কতো মানুষের উপকার হল? এবার আসি গ্রাম অঞ্চলে পঞ্চাশোর্ধ্বদের কথায়। আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন,আপনার আশপাশের বেশিরভাগ পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ বেকার। আঞ্চলিক রাজনীতি থেকে শুরু করে গ্রাম্য সমাজ ব্যবস্থায় তাদের নামেমাত্র ‘মুরুব্বী’ বানিয়ে রাখা হয়। আর অনেকে রাস্তার মোড়ে কিংবা চায়ের দোকানের আড্ডায় তাদের তরুণ জীবনের ‘অভিনব গল্প’ করে সময় কাটান। তাঁর চায়ের টাকাও হয়তো অন্য কাউকে দিয়ে দিতে হয়!তারা এক রকম বোঝা হিসেবেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাটিয়ে দেন।

অলস জীবন কাটাতে কাটাতে অনেক সময় এসব মানুষ সমাজ ও পরিবারে অশান্তি বয়ে আনছেন, এমনও দেখতে পাই আমরা। অনেক সময় অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে এসব ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীর প্রধান বানিয়ে অনৈতিক সুযোগ নেয় স্বার্থান্বেষী একটি মহল। এই জায়গা থেকেই আমাদের কার্যক্রম শুরু। আমরা চাই পঞ্চাশোর্ধ্ব এসব মানুষ কারো হাতের পুতুল না হয়ে, নিজেদের পায়ে দাঁড়াক। আমাদের নিজস্ব গবেষণা বলছে, দেশের একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২৮ বছর পর্যন্ত উপার্জনের মধ্যে থাকেন। সরকারী ও শীর্ষ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ছাড়া, বেশিরভাগ মানুষই সর্বোচ্চ ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত উপার্জনক্ষম থাকেন।

এরপর থেকেই মূলত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তারা। আমরা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে দেশের পঞ্চাশোর্ধ্ব এই মানুষদের আবার কাজে ফিরিয়ে আনতে চাই। যাতে তারা নিজেদের শেষ সময়ে পরিবারের দিকে না তাকিয়ে থেকে, নিজেদের জন্য সৎ পথে কিছু আয় করতে পারেন। হয়তো তাহলেই, সমাজে আসবে পরিবর্তনের সুবাতাস। আমাদের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট কর্মজীবীর ৩০℅ পঞ্চাশোর্ধ্ব। আমরা চাই,তারা অন্তত ৬৫ বছর পর্যন্ত নিজেদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাক।

এজন্য তাদের স্বল্প আয়ের কর্মজীবী বা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি আমরা। বাংলাদেশে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে সরকারের পাশাপাশি আমাদের একান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গবেষণা ভিত্তিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তরুণ ও পঞ্চাশোর্ধ্বদের সাথে নিয়ে আঞ্চলিক অর্থনীতিকে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে আমাদের এই পথচলা। জাতীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এই দায়িত্ব আপনার, আমার, সবার।

মোহাম্মদ হাসান আহাম্মেদ (খোকন) চেয়ারম্যান, সালামত উল্লাহ রিসার্চ ফাউন্ডেশন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here