সিদ্ধিরগঞ্জে বড় ভাইয়ের সামনে ছোট ভাইকে পিটিয়ে হত্যা ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

0
বড় ভাইয়ের সামনে ছোট ভাইকে পিটিয়ে হত্যা ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি :সিদ্ধিরগঞ্জে নির্মাণাধিন ১০ তলা ভবনের ৪ তলা থেকে পরে শ্রমিক ওসমান মিয়ার (১৭) মৃত্যু হয়েছে এমনটাই পুলিশ ও নিহতের পিতাকে জানিয়ে ছিলেন সহকর্মীরা। ঘটনাটি ঘটেছিল গত ৮ জুলাই রাত ১০ টার দিকে মিজমিজি পাইনাদী নতুন মহল্লা টি-টাওয়ারে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের বড় ভাই স্বপন মিয়া প্রাণের ভয়ে তাৎক্ষনিক তার ভাইকে পিটিয়ে হত্যার কথা বলতে পারেনি। তবে নিরাপদে গিয়ে সত্য খোলে বলেন। ঘটনার পরে সকল শ্রমিক পালিয়ে গেছে বলে জানায় স্থানীয়রা।  জানা গেছে, সন্তানের মৃত্যুর খবর পেয়ে ৯ জুলাই লাশ নিতে আসেন স্বজনরা। তখন ভবনের সাব কন্টাকটার রিপন মিয়া ২ লাখ টাকা দিয়ে রফাদফা করার চেষ্টা করেন।

নিহতের পিতা রাজি না হয়ে লাশ নিয়ে চলে যান। বাড়ীতে গিয়ে বড় ছেলের কাছ থেকে প্রকৃত সত্য যেনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এসে হত্যা মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা নেয়নি। নিরুপায় হয়ে ঘটনার ১০ দিন পর ১৮ জুলাই ৯ জনকে আসামি করে নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৮ নম্বর আমলী আদালতে হত্যা মামলা করেন নিহতের পিতা।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন বাদীর আইনজীবী মো: নজরুল ইসলাম।বাদী নেয়াজ মিয়া হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার কৃষ্ণনগর নোয়াগাঁও এলাকার আব্দুল ছুপানের ছেলে। আসামি করা হয়েছে একই এলাকার মতি মিয়ার ছেলে সাইদুল (৩২), কুদ্দুস মিয়ার ছেলে জহিরুল (৩৫), বিলাত মিয়ার ছেলে রিপন (৩০) ও খোকন (২৫), ইছু মিয়ার ছেলে শিপন (২২), আঞ্জু উল্লাহর ছেলে মনু মিয়া (৫০),ভবন মালিক রহমান, আক্তার ও তোফাজ্জলকে।

হত্যাকে দুর্ঘটনা বলেধামাচাপা দেওয়ার কারসাজি করায় ভবন মালিকদের আসামি করা হয়েছে বলেজানান বাদী।মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামিরা ভাল কাজের প্রলোভন দেখিয়ে দুই ভাইকে সিদ্ধিরগঞ্জে এনে টি-টাওয়ারে শ্রমিকের কাজে লাগায়। থাকার ব্যবস্থা করে ভবনেই। ঘটনার দিনে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সহকর্মী খোকন ও সাইদুলের সঙ্গে ওসমানের ঝগড়া হয়।

এজের ধরে রাত ১০ টার দিকে ৬ জন মিলে দুই ভাইকে ৪ তলায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে শিপন ও মনু মিয়া বড় ভাই স্বপন মিয়াকে (২২) ধরে রাখে আর অন্যরা ওসমানকে লোহার বেলচা ও রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ লিফটের ফাঁকা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে রাতেই মৃত ওসমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় আসামিরা।

প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের বড় ভাই স্বপন মিয়া বলেন, রাতে দুই ভাই কাঁঠাল খাচ্ছিলাম। তখন ৬ জন এসে কাজ আছে বলে আমাদের ৪ তলায় নিয়ে যায়।কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা ওসমানকে মারধর শুরু করে। আমি তাকে রক্ষা করতে চাইলে শিপন ও মনু মিয়া আমাকে ধরে রাখে। বাকীরা আমার সামনেই ওসমানকে পিটিয়ে মেরে লাশ লিফটের ফাঁকা জায়গা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।

আমার ভাই অসাবধানবশত পড়ে গিয়ে মারা গেছে বলতে বলে। অন্যতায় ছোট ভাইয়ের মত আমাকেও হত্যা করবে বলে ভয় দেখায়। প্রাণ বাঁচাতে আমি তাৎক্ষণিক কিছু বলিনি। তবে লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার পর বাবাকে সব বলি। নিহতের পিতা নেয়াজ মিয়া বলেন, প্রথম থেকেই সন্দেহ হয়েছিল আমার ছেলে দুর্ঘটনায় মরেনি। বড় ছেলের কাছ থেকে সত্য জানার পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এসে হত্যা মামলা করতে চাইলে পুলিশ আমাকে বলে ভবনের নিরাপত্তা জনিত কারণে দুর্ঘটনাবশত ছেলের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ করতে।

আমি রাজি না হলে পুলিশ ধমকদিয়ে থানা থেকে বের করে দেয়। এবিষয়ে জানতে ভবনে গিয়ে মালিক ঠিকাদার কাউকে পাওয়া যায়নি। ফোন করলেও মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ভবনের নিরাপত্তারক্ষী মোখলেছুর রহমান বলেন, কাজ চলছিল সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত।

রাত ১০ টার দিকে একজন শ্রমিক চারতলা থেকে পরে গেছে বলে ডাকাডাকি শোনতে পাই। পরে কয়েকজন তাকে ভ্যান গাড়ি দিয়ে নিয়ে যেতে দেখি।ঘটনার পর সব শ্রমিক চলে গেছে। ঠিকাদার ও মালিকদের কেউ আসছেন না।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন, আদালতে মামলা হয়েছে তা শোনেছি। এখনো আদেশ থানায় আসেনি। মামলা গ্রহণ না করার বিষয়টি সঠিক নয়। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলি নিহতের পিতাকে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here