প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ৮নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কার্যালয় ভাংচুর ও হামলার ঘটনায় সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা ও তার স্বামী সায়েম প্রধান সহ ২২ জনের নাম উল্ল্যেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তবে এর আগে থানায় কাউন্সিলর দিনাও অভিযোগ করেছিলেন। সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি। ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফ হাসান অর্নব এই মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় এখানো পলাতক রয়েছেন কাউন্সিলর আয়েশা আকতার দিনা। এদিকে এতোদিন সমাজসেবার নামে বিভিন্ন অপকর্মের কাহিনী বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে নারী কাউন্সিলর দিনার। বিশেষ করে তার চারিত্রিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র উঠে আসছে একে একে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৭,৮ও ৯নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর আয়েশা আকতার দিনা নারায়ণগঞ্জের একজন বিএনপি নেত্রী হিসেবে সমধীক পরিচিত।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে তার একটি পদ পদবীও রয়েছে, মহানগর মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হচ্ছেন কাউন্সিলর দিনা। তবে গত কয়েক বছর যাবত সুবিধাবাদী চরিত্রেই তাকে বেশী দেখা গেছে। বিএনপি নেত্রী হয়েও আওয়ামীলীগের সাংসদ শামীম ওসমানের সমাবেশে মিছিল নিয়ে যোগ দিয়েছেন তিনি,সাংসদ সেলিম ওসমানের অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা গেছে অনেকবার।
সর্বশেষ গত ১৬ জুন একটি পারিবারিক কলহকে রাজনৈতিক রঙ দিতে তিনি নিজেকে সিদ্ধিরগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী পরিবারের পুত্রবধূ পরিচয় দিয়ে সরকারী দলের সুবধা আদায়ের চেষ্টা করেন। পক্ষান্তরে যা তার রাজনৈতিক চরিত্রকে দ্বিখন্ডিত করে দিয়েছে। বিএনপির পদ পদবীধারী হয়েও আওয়ামী পরিচয়ে সুবিধা আদায়ের চেষ্টায় নিজেকেই নিজে ছোট করেছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এদিকে নারী কাউন্সিলর বিএনপি নেত্রী আয়েশা আকতার দিনা নিজ বলয়ের লোকদের দিয়ে স্থানীয় ছাত্রলীগের কার্যালয় ভাংচুর ও নিজ খালাকে মারধরের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চরম মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে এবং ইতিপূর্বে তিনি বেশ কয়েকবার এ জাতীয় ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেও জানান স্থানীয়রা। সিদ্ধিরগঞ্জে আধিপত্য ধরে রাখতে নিজে কোন অঘটন ঘটিয়ে তা প্রতিপক্ষের উপর চাপিয়ে দেয়া দিনার পুরানো অভ্যাস বলে জানান তারা। তাছাড়া দিনার ব্যক্তিগত জীবনও বেশ উচ্ছৃঙ্খল বলে জানা গেছে। তিনি যে স্বামীর কথা বলে আওয়ামী পরিবারের অনুকম্পা আদায় করতে চাচ্ছেন তা তার কত নাম্বার স্বামী সে প্রশ্নও করেছেন কেউ কেউ।
দিনার এ ধরনের আচরণে বিব্রত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরাও। বিএনপির নেত্রী হয়ে আওয়ামীলীঘ পরিচয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাকে তারা ভালোভাবে দেখছেন না। তাছাড়া গত প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও এ বিষয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কোন সিনিয়র নেতার সাথে এ নিয়ে আলোচনা না করলেও স্থানীয় আওয়ামীলেিগর সাংসদ শামীম ওসমানের সাথে একাধীকবার যোগাযোগ করেছেন, যোগাযোগ করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামীলীগ সভাপতি মজিবুর রহমানসহ স্থানীয় সরকারী দলের নেতাদের সাথে। যা একজন বিএনপি নেত্রীর কাছে কোনভাবেই কাম্য নয় বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা।
তাছাড়া কাউন্সিলর দিনার বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। করোনা মোকাবেলায় সরকারের দেওয়া ত্রাণ সামগ্রী তিনি নিজের নামে প্রচার করেছেন এবং সরকারী ত্রাণ পরিমানে কম দিয়ে সেসব দিয়ে নিজের নামে পোটলা বানিয়ে বিতরণ করেছেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। করোনায় প্রকৃত দুস্থ্যদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ না করে দিনা মুখ চিনে চিনে তার নিজস্ব লোকদের মাঝে বিতরণ করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগের কার্যালয় ভাংচুরের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা ও তার স্বামী সায়েম প্রধান ছাড়াও এই মামলায় আসামি রয়েছেন দিনার ভাই সমসের আলী খান দিপু, কর্মী রাব্বী প্রধান, আমির হোসেন প্রধান, জমির হোসেন প্রধান, শিপন মিয়া, মোঃ স্বাধীন, মোঃ রহমান মিয়া, কাওসার, ইমন, সোয়েব, মোঃ দুলাল মিয়া, জোনাইদ, মোঃ আমান উল্লাহ, আছমা, আজিজ, রফিক, আব্দুল হাই, ফয়সাল, মিঠু ও আব্দুর রহিম।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত ১৫ জুন সোমবার কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনার সঙ্গে তার খালার বাড়ির ভাড়াটিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া ও রাখা নিয়ে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। ওই দিন রাতে দিনার খালাতো ভাই রুবেলকে মারধর করা হলে সেখানে রুবেলের পক্ষ নিয়ে এগিয়ে যায় তারই বন্ধু ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুল হাসান রাকিব সহ অন্যরা। দুই পক্ষের মাঝে মারামারির ঘটনাও ঘটে।
ওই ঘটনায় কাউন্সিলর দিনা অভিযোগ করেন ছাত্রলীগের নামধারী নেতাকর্মীরা তার কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে এবং তাকে মারধর সহ কার্যালয় ভাংচুর করেছেন। সেই সঙ্গে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা তামিম ইসলাম, রাকিবুল হাসান রাকিব ও আরিফ হাসান অর্নব সহ বেশ কজন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন।
ওই ঘটনার বিষয়ে ১৬ জুন মঙ্গলবার বিকেলে ওই এলাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন দিনার খালা রাশিদা বেগম ও রুবেল হোসেন।
ওই সময় ছাত্রলীগের নেতারাও উপস্থিত থেকে তাদের বিষয়টি পরিষ্কার করেন। সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর দিনার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন খালা রাশিদা বেগম। ওই সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘন্টা পর রাত ৮টার দিকে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কার্যালয়ে কাউন্সিলর দিনা ও তার লোকজন হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছেন বলে অভিযোগ করেন ছাত্রলীগ নেতা আরিফ। তিনি এও অভিযোগ করেন- তার কার্যালয়টিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও এমপি শামীম ওসমানের ছবিও ভাংচুর করা হয়।
এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় তিনি একটি মামলা দায়ের করেন। তবে এই হামলার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন দিনা। তিনি বিষয়টিকে সাঁজানো দাবি করছেন।