প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি: সিদ্ধিরগঞ্জে আব্দুল জলিলগংদের মালিকানা প্রায় ৪২ কোটি টাকা মূল্যের ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ জমি গ্রাস করার মিশনে নেমেছে সঙ্গবদ্ধ একটি ভূমিদস্যু চক্র। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখল,বিক্রি ও স্থাপনা নির্মাণসহ শ্রেণি পরিবর্তন করার অভিযোগ উঠেছে দখলকারী ফারুক ও আনোয়ার ইসলামগংদের বিরুদ্ধে।
জমির অংশিদার দুজনকে গুম করার অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দুটি জিডিও করা হয়েছে দখলকারীদের বিরুদ্ধে। নাম মাত্র মূল্যে কিনে নিতে প্রতিনিয়তই মামলার বাদী আব্দুল জলিলকেও দিচ্ছে গুম করার হুমকি। জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের আটি মৌজায় ১৮৮ নং খতিয়ানে সিএস ৫৩১ ও ৫৩২ নং দাগে ১৩৬ শতাংশ জমির মধ্যে ৮১দশমিক ৬ শতাংশের মালিক আব্দুল জলিলগং। জমিটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪২ কোটি টাকা। বিগত ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ জমি দখল করে নেয় সাইলোগেইট এলাকার মহিউদ্দিনের ছেলে ফারুক, রিপন ও আটি এলাকার মৃত মুনসুর আলীর ছেলে খলিলুর রহমানগংরা।
তখন জমি ফিরে পেতে আব্দুল জলিলসহ ২০ জন অংশিদার পক্ষ হয়ে ২২ জনকে বিবাদী করে ২০১০ সালে নারায়ণগঞ্জ যুগ্ন জেলা জজ ১ম আদালতে মামলা করেন। পরে বাদী পক্ষের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে নিন্ম আদালতের মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জমিতে স্থিতি অবস্থা বজায় রেখে কোন রকম স্থাপনা নির্মাণ কিংবা শ্রেণি পরিবর্তন না করতে ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট একটি আদেশ দেন মহামান্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে হাইকোর্টের ওই আদেশ অমান্য করে জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করে।
জমিটি গ্রাস করতে মিজমিজি টেরা মার্কেট এলাকার ক্ষমতাধর আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার ইসলামের( নাসিক ১ নং ওয়ার্ডের সাবেককাউন্সিলর) কাছে কম দামে আংশিক জমি বিক্রি করে দেয় ফারুকগং। আনোয়ার ইসলাম জমি কিনার পর বাদী আব্দুল জলিলসহ অন্য মালিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী শুরু করে। তবে এসব মিথ্যা মামলা থেকে অল্প দিনেই রেহাই পেয়ে যায় তারা। মামলা হামলা করে গায়েল করতে না পেরে নাম মাত্র মূল্যে জমি কিনে নেওয়ার অপচেষ্টা চালায়।
থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে জমির মালিকদের সঙ্গে কখনো এলাকায় আবার কখনো থানায় সালিশী বৈঠক বসে। ৪২ কোটি টাকার জমি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নিতে জমির মালিকদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। জমির মালিকরা এত কম মূল্যে বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় হত্যা গুমের হুমিক দেয়। সর্বশেষ আব্দুল জলিলগংদের বিরুদ্ধে জমির স্থাপনা ভেঙে ফেলার অভিযোগ করে রফাদফা করতে গত ২৩ আক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুস সালামের উপস্থিতিতে এলাকায় একটি বৈঠক হয়।
জমির মালিকরা বাজার দরের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করতে রাজি হলে ২ নভেম্বর সন্ধ্যার পর থানায় বৈঠক বসার দিন ঠিক হয়। রহস্যজনক কারণে দখলকারীরা নির্ধারিত তারিখে বৈঠকে বসেনি। জমির মালিক আব্দুল জলিল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন পরিদর্শন ও জমির কাগজপত্র, আদলতে করা মামলা ও মহামান্য পুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নিষেধাজ্ঞা পর্যালোচনা করে বিগত ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর তৎকালিন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ) মোহাম্মদ মতিয়ার রহমান একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দাখিল করেন জেলা পুলিশ সুপার বরাবর।
প্রতিবেদনে নারায়ণগঞ্জ যুগ্ন জেলা জজ ১ম আদালতে করা (২৫-১০ নং) মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নালিশী ভূমি দখল ও অবস্থানের বিষয়ে স্টেটাসকো(স্থিতিশীল সহাবস্থান) রক্ষা করতে পক্ষগণকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বিজ্ঞ আদালতের রায় অনুযায়ী নালিশী জমিতে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু থানার তৎকালিন ওসি সরাফত উল্লাহ বিবাদী পক্ষ দ্বারা ম্যানেজ হয়ে কোন রকম প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেননি।
ফলে বিবাদীরা আদালতের আদেশ অমান্য করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জমি বিক্রি ও স্থাপনা নির্মাণ করে অবস্থান পরিবর্তন করে ফেলে। আব্দুল জলিল আরো জানান, জমিটি গ্রাস করতে বিবাধীগণ জমির অংশিদার আরজু বেগম ও সেলিমকে গুম করেছে। তারা গুম হওয়ার পর থানায় পৃথক দুটি জিডি করা হয়। অথচ ৭-৮ বছর গত হলেও অধ্যবধি পর্যন্ত তাদের খোঁজ মিলছেনা। জমির মায়া ছেড়ে দিতে আমাকেও(আব্দুল জলিল) গুম করার হুমকি দিচ্ছে।
ফলে আমি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানা জিডি করেছি। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের জমি গ্রাস করতে অত্যাচার নির্যাতন করে আসলেও রহস্যজনক কারণে থানা পুলিশ জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুস সালাম বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিস্পত্তি করার এখতিয়ার পুলিশের নেই। তবে একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাই। তখন দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করি। উভয় পক্ষ বিরোধ মিমাংসাতে রাজি হলে ২ নভেম্বর থানায় বসার কথা ছিল। ওসি স্যার অসুস্থ হওয়ায় তারিখটি বাতিল করা হয়েছে।