প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নিউজ ডেস্ক: ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখনো কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেনি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মশা মারতে যেসব কার্যক্রম চালাচ্ছে এতে মশা মরছে না। এসব উদ্যোগ অনেকটাই লোক দেখানো। মশা নিধনের নামে চলছে তামাশা। এসব উদ্যোগের বাস্তব কোনো কার্যকারিতা ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
নীতিনির্ধারকরা অবৈজ্ঞানিক পন্থায় হাঁটছেন। এতে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মারা যাচ্ছে মানুষ।শনিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘কেন এই ডেঙ্গু মহামারি? পরিত্রাণ কোন পথে?’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে কীটতত্ত্ববিদরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।দেশে ডেঙ্গু প্রকোপের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভাগগুলোর মশা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী।সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন,মশা মারার নামে নীতি-নির্ধারকরা অবৈজ্ঞানিক পন্থায় হাঁটছেন।
এতে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মানুষ মারা যাচ্ছে। অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তায় নীতি-নির্ধারকরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ‘মশা নিধনের নামে তামাশা চলছে। ব্যাঙ, হরিণ আর হাঁস দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটা দেখা যায় না। ডোবা-নালায় এডিস মশা ডিম পাড়ে সেটারও কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। মশা মারার জন্য ফগার মেশিনও কাজ করে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বলেন, ডেঙ্গু প্রকোপ বাড়ার কারণে এখন শহরের মানুষেরা মোটামুটি সচেতন হলেও গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে সচেতনতা নেই বললেই চলে। এজন্য সরকারের কাছে আমার আহ্বান থাকবে- অন্তত মশা দিবসটাকে কেন্দ্র করে এই বছর না হোক, আগামী বছর থেকে কিছু কার্যক্রম ও পরিকল্পনা হাতে নেওয়া উচিত।কীটতত্ত্ববিদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ফ্যাকাল্টি ড. জিএম সাইফুর রহমান বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত তা করা হয় না।
মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক ও প্রকৃত জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। যে ফগিং করা হয় তাতে কিন্তু মশা মরে না। এডিস মশার জন্য যেসব কীটনাশক প্রয়োজন তা নেই আমাদের। গবেষণায় গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের এমনকিছু লোক থাকতে হবে, যারা সব সময় এই বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করবে। কারণ মশা প্রতিনিয়ত তার ধরন পালটাচ্ছে।কীটতত্ত্ববিদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ফ্যাকাল্টি ড. জিএম সাইফুর রহমান বলেন,মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় সেগুলো করা হয় না।
মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক ও প্রকৃত জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। যে ফগিং করা হয় তাতে কিন্তু তেমন একটা মশা মরে না। এডিস মশার জন্য যেসব কীটনাশক প্রয়োজন তা নেই আমাদের। গবেষণায় গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের এমনকিছু লোক থাকতে হবে, যারা সবসময় এই বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করবে। কারণ মশা প্রতিনিয়ত তার ধরন পাল্টাচ্ছে। আমরা যে ওষুধগুলো ব্যবহার করছি, সেগুলো কি নতুন ধরনেও কার্যকর হচ্ছে কিনা- সেগুলোও গবেষণা করতে হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবু ফয়েজ মো. আসলাম বলেন, মশা নিধনে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনেক ধরনের পরামর্শ দিয়েছি।
কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেননি। বিটিআইর চেয়ে আরও কার্যকরী কীটনাশক রয়েছে। যাতে মশা দ্রুত মরে। আজকে বিটিআই আমদানি নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। আমাদের পরামর্শ গ্রহণ করলে এমন পরিস্থিতি হতো না। বিশেষ করে যারা মশা নিয়ে গবেষণা করছেন তাদের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করা উচিত।দেশে ডেঙ্গুর পাশাপাশি ম্যালেরিয়া রোগের প্রভাব রয়েছে। বিশ্বব্যাপী মশাবাহিত রোগের মধ্যে অন্যতম হলো ম্যালেরিয়া। অ্যানোফিলিস মশার সাতটি প্রজাতি বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়। এর মধ্যে চারটি প্রজাতিকে প্রধান বাহক বলা হয়।
পার্বত্য জেলা এবং সীমান্তবর্তী এলাকার ১৩ জেলায় ৭২টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ) ডা. ইকরামুল হক বলেন, দেশে ২০০০ সালের পর সবচাইতে বেশি ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ২০০৮ সালে। ওই বছর ৮৪ হাজার ৬৯০ জন মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন এবং ১৫৪ জন মারা যান।
গতবছর শনাক্ত হয় ১৮ হাজার ১৯৫ জন এবং ১৪ জন মারা যান। সবশেষ চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৫ হাজার ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।