না.গঞ্জের ডিসির অনুরোধও উপেক্ষিত,মসজিদের পাশে চালু হচ্ছে মদের বার

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ দুইশত বিরান্নই বর্গমাইল জুড়ে প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলা। স্বদেশী বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ জেলার ভূমিকা ছিল সুখ্যাতির যোগ্য। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জন্ম হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া মিউচুয়েল ক্লাব থেকে। নারায়ণগঞ্জে চাষাড়া বাইতুল আমানে খান সাহেব এম. ওসমান আলী ঢাকার নবাবদের হারিয়ে প্রথম এম.এল.এ নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আর দ্বিতীয় এম.এল.এ নির্বাচিত হয়েছিলেন বাবুরাইলের তথা দেওভোগ ইউনিয়নের সন্তান মরহুম আলমাছ আলী। এই বাইতুল আমান থেকেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন হয়েছিল-নারায়ণগঞ্জের অনেক সন্তান যেমন শফি হোসেন খান-মাহবুব জামিল-মোস্তফা সারোয়ার-খান সাহেবসহ এই বাইতুল আমান থেকেই গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছিলেন।

গর্ব করার মতো এ জেলার ইতিহাস থাকলেও কিছু কিছু ঘটনা ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলার জন্য অত্যন্ত লজ্জার। এর মধ্যে অন্যতম ছিল, টানবাজারের পতিতাপল্লী। পতিতাপল্লীর যাত্রা শুরু হয় প্রায় ৪০০ বছর আগে। ১৯৯৯ সালে পতিতালয়টি ধ্বংস করে ফেলার আগে এটি ছিল দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পতিতালয়গুলোর মধ্যে একটি। এ জেলার জনগন জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জের পরিচয় দিলে নাক সিঁটকে অন্য জেলার বাসিন্দারা জিজ্ঞেস করতো – তোমাদের বাড়ি থেকে টানবাজার কতদূরে? এই লজ্জা থেকে আমাদের নারায়ণগঞ্জ বাসীদের মুক্তি দিয়েছিল খান সাহেব এম. ওসমান আলী সাহেবের নাতী নারায়ণগঞ্জ জেলার-৪ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ. কে. এম. শামীম ওসমান।

আরেকটি লজ্জার বিষয় ছিল, একটা সময় নারায়ণগঞ্জ জেলাকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য বলে আখ্যায়িত করা হতো। এর পিছনের অন্যতম ঘটনা ছিল নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডার। তবে খুব দ্রুত সময়ে আসামীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে নারায়ণগঞ্জবাসীদের অন্তরে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো চাষাড়া। চাষাড়া কেন্দ্রীক স্কুল, কলেজের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। জেলার সনামধন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাষাড়া কেন্দ্রীক। সাম্প্রতিক সময়ে চাষাড়ার প্যারাডাইজ ভবনে বারের (মদ বিক্রি ও সেবন) অনুমোদন পেয়েছে আওয়ামীলীগের এক নেতা।

এ নিয়ে তীব্র ঘৃনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে শহরের জনসাধারণের মাঝে। এ ব্যাপারে জেলার নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার বরাবর মদের বার বন্ধের আবেদন করলেও সুপ্ত এক শক্তির বলে বার উদ্বোধনের সময় চূড়ান্ত করতে যাচ্ছেন বারের মালিক উত্তর মতলবের জহিরাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী মুক্তার। নয়া বারের পাশেই ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ এবং নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবন। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মাসুম জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের কাছে তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেন, ছোট্ট একটি শহর নারায়ণগঞ্জ। বিভিন্ন জেলা থেকে এসেই লোকজন থাকছে এখানে। অঘটনও ঘটে এ শহরে। এরমধ্যে এমন একটি বার যদি শহরের উপর চালু হয় তাহলে শহরের পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হবে। সবথেকে বড় কথা হচ্ছে বারের সামনেই একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ, সাথেই রয়েছে প্রেস ক্লাব। বার চালু হলে মুসল্লীরা যাবে কোথায়, আর আমরা সাংবাদিকেরাইবা যাবো কোথায়? তাই জনস্বার্থে এই বার বন্ধ করতে হবে। এখানে বার চালু করতে দিতে পারি না।

মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আসছে বিগত দুই তিন বছর ধরেই। এমতাবস্থায় সরকারি বিধিতে নিষিদ্ধ থাকলেও বারটি কিভাবে নারকোটিকসের অনাপত্তিপত্র পায় সেটাই জনগনের মনে প্রশ্ন রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে পেশাদার সাংবাদিক প্ল্যাটফর্মের আহবায়ক ও মানবজমিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার বিল্লাল হোসেন রবিন বলেন, বিষয় অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। বারের পাশেই ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ। শহর ও শহরের বাইরের বিপুল সংখ্যক মুসুল্লীরা একত্রিত হয়ে মসজিদটিতে নামাজ পড়েন। বারটি চালু হলে দেখা যাবে মুসুল্লীরা নামাজ পড়ে বের হচ্ছে অন্যদিকে দেখা যাবে কেউ কেউ মধ্যপ অবস্থায় বার থেকে বের হচ্ছে। আবার যে রাস্তা দিয়ে মুসুল্লীরা নামাজে যাবে সেই রাস্তা দিয়ে কেউ কেউ মদ খেতে যাবে।

এটা খুবই দু:খজনক। চাষাড়ার এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানটিতে মদের বার কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এ ব্যাপারে নগরবাসীর অনেকের সাথে কথা বললে তারা সবাই ধিক্কার জানিয়ে বলেন, বারটি অনতিবিলম্বে বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। নগরের মিশনপাড়ার বাসিন্দা ওবায়দুল বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন নারায়ণগঞ্জের অভিবাবক এ.কে.এম শামীম ওসমান সাহেব। আমি মনে করি শামীম ওসমান সাহেবের হস্তক্ষেপে এই বার বন্ধ করা সম্ভব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here