প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ডেস্ক নিউজ:পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। রবিবার (১৫ নভেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে, বেলভিউ হাসপাতাল থেকে সৌমিত্রের মরদেহ গলফ গ্রিনের বাড়িতে নিয়ে রাখা হবে টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে। সেখানেই তাকে সর্বস্তরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন।
এরপর মরদেহ নেয়া হবে রবীন্দ্র সদনে। সেখানে অভিনেতার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, ভক্ত-অনুরাগী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ঘনিষ্ঠজনরা শ্রদ্ধা জানাবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ মরদেহ কেওড়াতলা মহাশ্মশানের উদ্দেশে নেয়া হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে গান স্যালুট দিয়ে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত সম্পন্ন হবে।
রবিবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার কারণেই সব রকম চিকিৎসার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।
অভিনয় দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও একাধারে অভিনেতা, আবৃত্তিকার ও কবি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাচর্চা, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, নাট্যসংগঠন ছিল তার বৈচিত্র্যের নানা দিক। সত্যজিত রায়ের ‘অপু’ অভিনেতা সৌমিত্রের সময় আজ চিরতরে থেমে গেলো।
১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম। কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজে সাহিত্য নিয়ে পড়ালেখা করা সৌমিত্র ১৯৫৯ সালে প্রথম সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ ছবিতে অভিনয় করেন। সত্যজিত রায়ের ৩৪টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ১৪টিতেই অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। সিনেমা ছাড়াও নাটক ও যাত্রায় অভিনয় এবং লেখালেখি ও আবৃত্তিতেও খ্যাতি রয়েছে গুণী এই শিল্পীর।
সৌমিত্র অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে ‘অপুর সংসার’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ (ফেলুদা চরিত্র), ‘দেবী’, ‘ফ্ল্যাট নং ৬০৯’, ‘চারুলতা’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘বাক্স বদল’, ‘কাপুরুষ’, ‘বেলা শেষে’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘দেবী’, ‘ঝিন্দের বন্দি’, ‘স্বরলিপি’, ‘সমাপ্তি তিনকন্যা’, ‘কিনু গোয়ালার গলি’, ‘আগুন’, ‘বেনারসি’, ‘অভিযান’, ‘শেষ প্রহর’, ‘কাচ কাটা হীরে’, ‘অশনি সংকেত’ ও ‘প্রাক্তন’ অন্যতম।
অসাধারণ অভিনয়ের জন্য পঞ্চম দশকে ‘সেরা অভিনেতা’ বিভাগে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও বাঘিনী (১৯৬৮), অগ্নিসংকেত (১৯৮৮) এবং ক্রান্তিকাল (২০০৫) ছবিতে অভিনয়ের জন্য একাধিক বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন ফেলুদা খ্যাত এ অভিনেতা।
অভিনয়ের বাইরে কবি ও আবৃত্তিকার হিসেবে খ্যাতিমান সৌমিত্র ২০০৪ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সঙ্গীত নাটক একাডেমী পুরস্কার, ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার ও ফ্রান্সের ‘লেজিয়ঁ দ্য নর’ (২০১৮) এর মতো দেশ-বিদেশের অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এপার-ওপার বাংলায় সমানভাবে জনপ্রিয় এই কিংবদন্তি অভিনেতা।