বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা-গঙ্গার পানি ভাগাভাগি সম্ভব নয় : মোদিকে মমতা

0
বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা-গঙ্গার পানি ভাগাভাগি সম্ভব নয় : মোদিকে মমতা

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ রাজ্যের অংশগ্রহণ ছাড়া তিস্তা ও গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কোনো আলোচনা করা উচিত হবে না বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা এক চিঠিতে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে মমতা মোদিকে পাঠানো চিঠিতে তিস্তা এবং ফারাক্কার পানি বাংলাদেশকে দেওয়ার বিষয়ে ব্যাপক বিরোধিতা করেছেন।

এমনকি একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদে ভারতজুড়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি করা সম্ভব নয়। কারণ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের মানুষের সেচ ও খাওয়ার জন্য পানির প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন তিস্তায় পানির প্রবাহ বছরের পর বছর ধরে কমে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পানি ভাগাভাগি করা হলে উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ মানুষ সেচের পানির অপর্যাপ্ততার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এ ছাড়া, উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের খাবার পানির প্রয়োজনীয়তা মেটাতেও তিস্তার পানি প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি করা সম্ভব নয়’ চিঠিতে উল্লেখ করেন মমতা।চিঠিতে মমতা লেখেন সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের পরিপ্রেক্ষিতে আমি এই চিঠি লিখছি। মনে হচ্ছে, এই গুরুত্বপূর্ণ সফরে তিস্তা ও গঙ্গা পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পরামর্শ ও মতামত ছাড়া এ ধরনের একতরফা আলোচনা গ্রহণযোগ্য বা কাম্য নয়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা আরও লিখেছেন রাজ্যের ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমি বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি এবং সর্বদা তাঁদের মঙ্গল কামনা করি। পশ্চিমবঙ্গ অতীতে বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশ-ভারত ছিট মহল বিনিময়ের চুক্তি, ইন্দো-বাংলাদেশ রেলওয়ে লাইন ছাড়াও বাস পরিষেবাগুলো এই অঞ্চলে অর্থনীতির উন্নতির মাইলফলক।

পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন পানি খুবই মূল্যবান এবং মানুষের জীবন রেখা। আমরা এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে আপস করতে পারি না, যা জনগণের ওপর মারাত্মক এবং বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ ধরনের চুক্তির প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি বুঝতে পেরেছি ভারত সরকার, ভারত-বাংলাদেশ ফারাক্কা চুক্তি নবীকরণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যার মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে।

এটি একটি চুক্তি যা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জল বণ্টনের নীতিগুলো বর্ণনা করে।এরপর সেই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে মমতা লিখেছেন আপনি জানেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জীবন-জীবিকা বজায় রাখার জন্য নদীর পানি একটি বিশাল প্রভাব রয়েছে। ফারাক্কা ব্যারেজে পানি সরানো হয়, তা কলকাতার বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

আমি আপনার নজরে আনতে চাই, ভারত ও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের নদীর রূপতত্ত্ব পরিবর্তিত হয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করেছে এবং রাজ্যের পানির প্রাপ্যতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং কিছু ঘোষণাও এসেছে।

সেখানে তিস্তা-গঙ্গার পানিবণ্টনসহ পশ্চিমবঙ্গ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হলেও ডাক পাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে মমতা কড়া ভাষায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।

আলোচনার পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, বাংলাদেশে তিস্তার পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য শিগগির একটি কারিগরি দল বাংলাদেশে পাঠানো হবে এবং ২০২৬ সালে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির নবায়নের বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here