প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ খান মোহাম্মদ কামাল ঃ ভোর ৬টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবা মিজান গাজী (৪৫) মারা গেছেন। শোকে বিহবল স্বজনেরা নিচ্ছেন লাশ দাফনের প্রস্তÍুতি। এমন অবস্থায় বাবার লাশ বাড়িতে রেখে সুমাইয়া আক্তার নামের এক শিক্ষার্থীকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে হলো। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরে বাবার লাশ দাফনে অংশ নেয় সে। চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের গাজী বাড়ীতে আজ বুধবার (১০ মে) এ ঘটনা ঘটে।
সুমাইয়া আক্তার চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের হামানকর্দ্দি পল্লী মঙ্গল উচ্চ বিদ্যালায়ের শিক্ষার্থী। সুমাইয় আক্তারের পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে মৈশাদী ইউনিয়নের বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে। আজ সকাল ১০টার আগে চোখ মুছতে মুছতে ওই কেন্দ্রে যায় সে। সহপাঠী ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহযোগিতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। দুপুরে পরীক্ষার্থী সুমাইয়ার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেন। সুমাইয়া আক্তারের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান,মিজান গাজী মৈশাদী ইউনিয়নের গাজী বাড়ীর মৃত হাছান গাজীর ছেলে।
তিনি পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট সুমাইয়া আক্তার। আজ সুমাইয়ার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের পরীক্ষা। রাতেই মিজান গাজী অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভোর ৬টার দিকে তিনি মারা যান। বাড়িজুড়ে শোকের আবহ, চলছে লাশ দাফনের প্রস্তÍুতি। বাবার মৃত্যুর পর সিনথিয়া ভেঙে পড়লেও স্বজনদের কথায় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যায় সে। পরীক্ষা শেষে সিনথিয়া বাড়ি ফেরার পর বাদ আছর নিজ বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন হবে।
তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন,সুমাইয়ার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি আমরা সকালেই জানতে পেরেছিলাম। সবার সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিলে তার জন্য ভালো হবে ভেবে তার জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম সে সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষা দিক। সে এক হাতে রুমাল দিয়ে বারবার চোখ মুছছিল। আর অন্য হাতে পরীক্ষার খাতায় লিখেছে।
’তিনি আরও বলেন, বাবাকে হারানো যে কারও জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তারপরও এসএসসি পরীক্ষার্থী সুমাইয়া বাবা হারানোর কষ্ট নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আমরাও তার পরীক্ষার সময় যতটা সম্ভব পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। পরীক্ষা শেষে সুমাইয়া বলল, ‘বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। বাবা চাইতেন আমি যেন পড়ালেখা করে অনেক বড় হই। তাই এমন অবস্থায়ও আমি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। বাবার আত্মাকে আমি কষ্ট দিতে চাই না।’