মহেশপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ

0
মহেশপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মহেশপুর (ঝিনাইদহ)সংবাদদাতাঃ যোগদানের পর থেকে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে একক ক্ষমতা বলে চালিয়ে গেছেন একের পর এক কোটি টাকার দুর্নীতি। তার সময়ে বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের কোন সঠিক হিসাব পাওয়া যাইনি। বিদ্যালয়ের জমিতে গড়ে তোলা সুপার মার্কেটসহ দোকান-পাটের জামানত ও ভাড়ার টাকা নিজের পকেটে ভরে করেছেন কোটি টাকার গড়মিল। মাটি ভরাট প্রকল্পের ২৫ টন চাউলের কাজ না করে টাকা উত্তোলন করেছেন।

সরকারি রেজুলেশন ছাড়াই বিদ্যালয়ের ৩টি মেহগনি (৭ ফুট ব্যাড়) গাছ বিক্রি করে টাকা আত্মসাত, বিল ভাউচারে ১ কে ২ বানানোর মত জালিয়াতির। উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের জমিতে খেয়াল-খুশি মত দোকান পাট নির্মাণসহ নানা অীনয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে ঝিনাইদহের মহেশপুর সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানিয়ে নিজের আখের গুছিয়েছেন সাবেক প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম।

ততকালিন আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চলের মদদপুষ্ট হয়ে নিজের যোগ্যতা ব্যতি রেখে ২০১২ সালের ১৭ মে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান তিনি। দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই নানা অনিয়মে কোটি টাকা আত্নসাত করেন সাবেক এই প্রধান শিক্ষক। ৫ ই আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিদ্যালয়ের মার্কেট তরদারকি কমিটির গঠন করা হলে ওই কমিটির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির এমন সব চিত্র।

প্রতিবেদনের কপি বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দিয়েছেন ওই কমিটির সদস্যরা।প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সুপার মার্কেটের দোকান ভাড়া চুক্তিপত্র দলিলে জামানতের টাকার পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে প্রায় ১ কোটি ১০ হাজার টাকা। কিন্তু খরচের হিসাব পাওয়া গেছে মাত্র ৪৭ লাখ টাকা। এখানে প্রায় ৬৭ লাখ টাকার গড়মিল করেছেন প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম।বিদ্যালয়ের সুপার মার্কেটের ২য় তলায় জনতা ব্যাংকের ভবন নির্মাণে বিল ভাউচার অনুযায়ী খরচ হয়েছে ১৯ লাখ ছেষট্টি হাজার ৬৮৬ টাকা কিন্তু খাতায় খরচ দেখানো হয়েছে ২৭ লাখ পয়ত্রিশ হাজার ৪২৪ টাকা। এতে প্রায় আট লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ দেখিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।

ক্যাফে মদিনার ভবন নির্মাণে খরচের কোন হিসাব দেখাননি তিনি। এমনকি জামানতের টাকার কোন হদিস নাই। ক্যাফে মদিনা ২য় তলা ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে ৩য় তলায় রান্নাঘর, টি স্টল ও পার্ক তৈরী করে ব্যবহার করছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক মীর সুলতানুজ্জামান লিটনের অফিস নির্মাণে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তার কোন লিখিত রাখেননি তিনি। জামানতের টাকার কোন হদিস নেই। উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয় (শফিকুল আজম খান চঞ্চলের) ১১০০ স্কয়ার ফিট জায়গার অনুমতি ২২০০ স্কয়ার ফিট জায়গা ব্যবহার করছেন।

জামানতের ৩ লাখ টাকার উল্লেখ থাকলেও চুক্তিপত্রের কপি কিংবা ভাড়া আদায়ের কোন হিসাব দেননি। ওই কার্যালয়ের নিচের চায়ের দোকানের কোন অনুমতি নেই। এখন পর্যন্ত কার্যালয় ও চায়ের দোকান থেকে কোন ভাড়া পাননি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।অবকাশ যাপন ও বিনোদনের জন্য ৩ তলায় ৩ রুম বিশিষ্ট টিনসেড নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। ইসলামি এজেন্ট ব্যাংক ও সনো ডায়াগনেস্টিক সেন্টার নির্মাণে ৩ হাজার বর্গ ফুট জায়গার অনুমতি নেওয়া হলেও বিদ্যালয়কে কোন নির্মাণ খরচ দেখাননি সাবেক ওই প্রধান শিক্ষক।

অনুমতি ছাড়াই বিদ্যালয়ের মেইন গেটের পাশের ৩ টি টিন সেডের দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সব দোকান থেকে এখন পর্যন্ত কোন ভাড়া পাইনি কর্তৃপক্ষ। খেলার মাঠের পাশের চা বাজারের ৫ দোকানের একই অবস্থা। ভাড়া আদায়ের কোন লিখিত নেই। মনিরুল আলম খানের দোকানের জামানতের কোন হিসাব দেখাননি। এমনকি নির্মাণ ব্যয় কিংবা ভাড়া আদায়ের কোন হিসাবও দেখাননি তিনি। বিদ্যালয়ের ৩টি প্রায় ২ লাখ টাকা মূলের মেহগনি (৭ ফুট ব্যাড়) গাছ নিজ ক্ষমতায় বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করেছেন। মাটি ভরাট প্রকল্পের ২৫ টন চাউলের কাজ না করে পুরো টাকা আত্মসাত করেন।

পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে অল্প কিছু টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের গেইট নির্মাণ করেন তিনি।সুপার মার্কেটের গার্ড ফাইলের খরচের সাথে রেজুলেশন খাতায় খরচে ১৪-১৫ লাখ টাকার গড়মিল করেছেন প্রধান শিক্ষক। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দোকান ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। ফলে চুক্তি ভঙ্গ করে দোকান মালিকগণ বেশিভাগ দোকান অতিরিক্তি টাকায় অনত্র ভাড়া দিয়েছেন। জহুরুল ইসলাম ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী অবসরে যাওয়ার সময় সরকারি বিধি মোতাবেক বিদ্যালয়ের মালামালের কোন মাস্টার রোল তৈরী করে বুঝে দিয়ে যাননি। আয়-ব্যয়ের কোন সঠিক হিসাবও দিয়ে যাননি তিনি।

সাবেক প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের অনুমতি ছাড়া কোন দোকানঘর নির্মাণ করা হয়নি। ছাদ ভাড়া নিয়ে দোকান মালিকরা দোকান ঘর নির্মাণ করে নিয়েছেন সেক্ষেত্রে সবার নির্মাণ খরচ রাখা হয়নি। বাদ বাকি হিসাব অফিসে সংরক্ষিত আছে। বিদ্যালয়ের কোন বিষয়ে কোন কারচুপি হয়নি। তবে আওয়ামীলীগ অফিস কোন ভাড়ার টাকা দেয়নি।শিক্ষক কমিটি ও মার্কেট তদারকি কমিটির আহবায়ক সহকারী শিক্ষক এস. এইচ. এম টিপু সুলতান বলেন, বিদ্যালয়কে মার্কেট নির্মাণকে ঘিরো দুর্নীতির মহাযজ্ঞ চালিয়েছেন সাবেক প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম।

২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টম্বর বিদ্যালয় সরকারি হওয়ার পর এককভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করেছেন। এছাড়াও বিদ্যালয় ঘিরো তিনি আরো অনেক দুর্নীতি করেছে যা পরবর্তীতে একই ভাবে তদন্তের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে আলোচনা করেই এ প্রতিবেদন তৈরী করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন মনিরা বলেন, মার্কেট তদারকি কমিটির প্রতিবেদন পেয়েছি। এব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here