সোনারগাঁয়ে হাইওয়ে রোডে সিএনজি-অটোরিক্সায় চাঁদাবাজী, যানজট

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ে সিএনজি-অটোরিক্সায় একের পর এক চাঁদাবাজির কারণে সড়কে যানজট লেগেই থাকে। সড়কে যানজট কমাতে চাঁদাবাজরা গাড়ি লাইনে আনার কথা বলে প্রতিদিন সিএনজি-অটোরিক্সা থেকে মোটা অংকের টাকা চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সিএনজি-অটোরিক্সায় চাঁদাবাজির কারণে যানজট লেগে থাকায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, যাত্রী সাধারণ ও স্থানীয় এলাকাবাসী। কোন ক্রমেই থামানো যাচ্ছে না চাঁদাবাজদের। দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পরিবহন চাঁদাবাজরা, সম্প্রতি র‌্যাব-১১ বেশ কিছু চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করলেও আবারও শুরু হয়েছে নতুন করে পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঐতিহাসিক গ্র্যানট্রাঙ্ক রোডের সোনারগাঁ থানা রোড এবং সোনারগাঁ সরকারী কলেজ রোডে প্রতিদিনই সহস্রাধিক সিএনজি-অটোরিক্সা চলাচল করে। এসকল সিএনজি-অটোরিক্সা থেকে ১০-১০০ টাকা এবং ৫০ হইতে ১৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা উত্তোলন করা হয়।

নির্দিষ্ট কোন লাইনম্যান না থাকায় চাঁদাবাজরা তাদের ইচ্ছেমত যেকোন স্থানে গাড়ি থামিয়ে জোরপূর্বক চাঁদা উঠাচ্ছে। যার কারণে সিএনজি-অটোরিক্সা চালকরা যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করে থাকে। সড়কে চাঁদাবাজি করার কারণে যাত্রীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক বেশি ভাড়া আদায় করে সিএনজি-অটোচালকরা। ভাড়া নিয়ে প্রায়ই যাত্রী ও চালকদের ঝগড়া করতে দেখা যায়।

থানা রোড ও কলেজ রোডের প্রবেশ মুখে অবৈধ স্থাপনাও যানজটের একমাত্র কারণ বলে জানা গেছে। সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারা অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। আর এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে এবং মার্কেটগুলোতে পর্যাপ্ত গাড়ি রাখার কোন গ্যারেজ না থাকায় বাধ্য হয়েই সড়কে গাড়ি থামিয়ে রাখে চালকরা।

রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায় যানজট নিত্যদিন লেগেই থাকে। এতে করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, স্থানীয় এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা সময়মত তাদের গন্তব্যস্থানে পৌঁছতে পারছে না। এলাকাবাসী আরও জানান, যানজট কমাতে পুলিশ প্রসাশনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কিছু লাইনম্যান নিয়োগ করা প্রয়োজন। যারা চাঁদাবাজি না করে সঠিকভাবে সিএনজি-অটোরিক্সা প্রবেশ ও বাহির করতে সহায়তা করবে। সেক্ষেত্রে তাদের নির্ধারিত আইডি কার্ড এবং পুলিশ লেখা পরিহিত ইউনিফরম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা দরকার। তাই চাঁদাবাজি বন্ধে সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও প্রশাসনের উর্দ্ধতনমহলের দৃষ্টি কামনা করছি।

সরেজমিনে ঘুরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের উলুকান্দি এলাকার মৃত. মোস্তফা রহমানের ছেলে ও মোগড়াপারা ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামের মৃত. মোতালেবের মেয়ের জামাই (ঘর জামাই খ্যাত) মিজানুর রহমান মিজান(৩৮) এবং একই গ্রামের মৃত. মরজত আলীর ছেলে আকতার(৩০) প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সোনারগাঁ থানা রোডে সহ¯্রাধিক সিএনজি-অটোরিক্সা চালকদের কাছ থেকে চাঁদার ভূয়া রশীদ দেখিয়ে জোরপূর্বক ১০-১০০ টাকা এবং গাড়ী প্রতি ৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে আসছে।

তারা প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তাদের নাকের ডগায় এসব অপকর্ম করে চলেছে। দিন দিন তাদের এমন অত্যাচারে সিএনজি-অটোরিক্সা চালকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চাঁদাবাজদের হাতে থাকা মোটা লাঠি দিয়ে আঘাত করে ও মারধর করে চালকদের রক্তাক্ত জখম করে বলে অভিযোগ রয়েছে। সোনারগাঁ থানা পুলিশ এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে বলে জানান সংশ্লিষ্টমহল।

উল্লেখ্য, গত ৬ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় ও ২৩ জুলাই মঙ্গলবার সকালে র‌্যাব-১১ কর্তৃক সোনারগাঁ থানাধীন মোগড়াপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়কালে চাঁদাবাজ উপজেলার হাবিবপুর এলাকার মৃত. চাঁদ মিয়ার ছেলে মোঃ সোহেল (৪২), ঘর জামাই খ্যাত মিজানুর রহমান মিজান এবং সোনারগাঁয়ের কাজী ফজলুল হক ডিগ্রী কলেজ এলাকার মৃত. সিরাজ পাটোয়ারীর ছেলে দর্পণ পাটোয়ারী (৪৫), মৃত. হানিফ মিয়ার ছেলে আফসার উদ্দীন (৩৬)কে চাঁদা আদায় করার সয়ম হতেনাতে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ৬ হাজার ৩’শ ২০ টাকা ও নগদ ৭ হাজার ৯’শ টাকা এবং চাঁদা আদায়ের রসিদ জব্দ করে র‌্যাব।

র‌্যাব আরো জানায়, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবত এসব এলাকায় পরিবহন সেক্টরের ট্রাক, অটো, সিএনজির চালকদের কাছ থেকে ভয়ভীতি এবং হুমকি প্রদর্শন করে গাড়ি প্রতি ৫০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা আদায় করে আসছিলো এবং কেউ চাঁদা দিতে অসম্মতি জানালে তাদের মরধরসহ জীবন নাশের হুমকি প্রদান করে আসছিলো।

এছাড়াও স্থানীয় চালক ও জনসাধারনের কাছ থেকে আরও জানা যায় যে, ইতিপূর্বে র‌্যাব-১১ তাদের সকলকে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করলেও চাঁদাবাজ ও ঘর জামাইখ্যাত আকতার রয়ে গেছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তবে কোন চালক চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের মারধরসহ জীবন নাশের হুমকি প্রদান করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এব্যপারে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোজাফফর বলেন, চাঁদাবাজির কোন ঘটনা আমার জানা নেই। তবে যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ সবসময়ই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here