প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ তানজিলা আক্তার রূপগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের ষাটোর্ধ্ব এক অসহায় বাবা
তোফাজ্জল হোসেন ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে রাস্তায় রাস্তায় বিলাপ করছে। সোমবার (২২জুন) সকালে সোনারগাঁও উপজেলার আমগাঁও এলাকার তোফাজ্জল হোসেন ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ কোর্টের সামনে ছেলের ছবি ও মামলার কাগজ হাতে নিয়ে কান্না করছে আর বলছে আমার ছেলে হত্যার কি আর বিচার পাবো না।
বিলাপকালে কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে হত্যার আজ কতদিন হয়ে গেল এখনো কোনো বিচার পাইনি। যেখানে যাই সেখানেই চায় টাকা তবে বিচার করে না কেউ। অথচ পুলিশের হাতে আমার ছেলে হত্যার রয়েছে অনেক সূত্রই। তারপরেও অদৃশ্য কারণে এখন পর্যন্ত বড় কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি। কেন পড়েনি? এই প্রশ্নটা কার কাছে করি। তারমধ্যে দেশে চলছে এই দুর্যোগ। প্রতিদিন চোখের সামনে মৃত্যু দেখতে পাচ্ছে মানুষ। সন্তান হত্যার শিকার হওয়া এবং তার বিচারের জন্য অপেক্ষা করা একজন পিতার জন্য যে কতটা কষ্টের তা বুঝতে পারবে শুধু আরেকজন সন্তান হারানো পিতা। এছাড়া এ অনুভবের ক্ষমতা কারো নেই।
এমন কষ্ট যেন আল্লাহ শত্রুকেও না দেন। আমিতো বেঁচে আছি, অন্যের হয়তো তা সইবার ক্ষমতা নাও থাকতে পারে। তোফাজ্জল হোসেনের কাছে ছেলে হত্যার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার ছেলে রাজন হোসেন খান রূপসী কাজীপাড়া এলাকায় একটি এনজিও সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন সদস্য ছিল। কোথাও আড্ডা দিত না, সে সব সময়ই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। তবে রমজান মাস এলেই ইফতারের আগে বরগাঁও এলাকায় বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিয়ে ইফতার করে নামায পড়ে বাড়ি চলে আসতো।
কিন্তু গত ১৩ মে প্রতিদিনের মতো বরগাঁও এলাকায় বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। কিন্তু আর বাড়ি ফিরে নি। আমি ডেমরা করিম জুট মিলে চাকুরি করি। আমার কর্মস্থানে রাত ৮টার দিকে আমার ভাই এসে খবর দেন, আমার ছেলে রাজনকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা গুরুতর আহত অবস্থায় রূপসী কলাবাগান এলাকায় ফেলে রেখে গেছে। তখন আমি খবর পেয়ে বাড়িতে এলে শুনতে পারি এসব কথা। গত ২৯ মে রাতে ঢাকা সরোয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আমার ছেলে রাজন। ছেলের দাফন শেষে রূপগঞ্জ থানায় গিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন রাজনের পিতা তোফাজ্জল হোসেন।
মাসুদ নামে একজন আসামী আটক হলেও এ হত্যা মামলার পুরো রহস্য এখনো রয়ে গেল বলে মনে করছেন রাজনের পিতা তোফাজ্জল হোসেন। মাসুদকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে প্রেরণ করেছেন পুলিশ। রিমান্ড হলেও এ হত্যাকান্ডের সাথে কে বা কাহারা জড়িত, মূল রহস্য এখনো বের করতে পারেনি মাসুদের মুখ থেকে পুলিশ প্রশাসন। তবে কি এটা আজগবি হত্যা? এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে রাজনের বন্ধু সুমনের কাছ থেকে জানা গেছে, রাজন,মাসুদ,শামীম,জয়নাল তারা চার বন্ধু মিলে একটি সমবায় সমিতি পরিচালনা করতেন। সেই সমবায় সমিতির গ্রাহকদের টাকা বছর শেষে গ্রাহকদের কাছে বুঝিয়ে দিতেন তারা।
সমবায় সমিতির টাকার পুরো হিসেব থাকতো রাজনের কাছে আর টাকা পয়সা রাখতেন মাসুদের কাছে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও গ্রাহকদের টাকা পয়সা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য রাজন মাসুদের কাছে টাকার হিসেব চাইছিলেন। পরে গত কয়েক দিন যাবত টাকার হিসেব নিয়ে মাসুদের সাথে রাজনের দন্দ্ব চলছিলো।
এছাড়াও সুমন আরো জানান, গত ১৩ মে সন্ধ্যায় ইফতার শেষে হঠাৎ রাজনের মোবাইলে কল আসে পরে রাজন আমাকে বলে, আমি বরপা যাচ্ছি। তেমন সময় আমি রাজনকে প্রশ্ন করলে রাজন বলেন, আমি সমবায় সমিতির টাকা আনতে বন্ধুর কাছে যাচ্ছি আজ সমিতির হিসেব আছে। রাত ৯টার সময় আমি জানতে পারি রাজনকে কে বা কাহারা গুরুতর আহত অবস্থায় রূপসী এলকায় ফেলে রেখে গেছে। গত ২৯ মে আমার বন্ধু মারা যায়। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।