নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে মানব পাচারকারী চক্রের ৬ সদস্য গ্রেফতার, ৪ তরুণী উদ্ধার

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের তারাবো এলাকা থেকে মানব পাচারকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১। এ সময়  বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে একত্রিত করা চার তরুণীকে উদ্ধার করে র‌্যাব। শনিবার (২৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে রূপগঞ্জের তারাবো মোড়ের শাহ চন্দপুরী রেস্টুরেন্ট চার তরুণীসহ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। রোববার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‌্যাব-১১ এর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে স্কোয়াড্রন লিডার মো. রেজাউল হক জানান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, এই পাচারকারী চক্রটি ১৫-২৫ বছর বয়সী তরুণীদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশের বিভিন্ন ড্যান্স বারে পাচার করতো। সেখানে তাদের যৌন পেশায় বাধ্য করা হতো। গ্রেফতাররা হলেন- তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বাসিন্দা মো. আক্তার হোসেন (৪০), ময়মনসিংহের ধুপাউড়ার বাসিন্দা মো. অনিক হোসেন (৩১), দুবায়ের ড্যান্স ক্লাবের মালিক নোয়াখালীর চাটখিল থানার বাসিন্দা মো. মনির হোসেন ওরফে সোহাগ (৩০), আরেক মালিক কুমিল্লার চান্দিনা এলাকার আব্দুল হান্নান (৫২), চাঁদপুর জেলার কচুয়ার মো. আফতাউল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের দেয়া তথ্যানুসারে  খিলগাঁওয়ের গোড়ান এলাকা অভিযান পরিচালনা করে  ট্রাভেল এজেন্সির মালিক ও মাদারীপুর এলাকার বাসিন্দা  মোঃ আকাশ (২৯) কে গ্রেফতার করে।

তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ৭০ টি পাসপোর্ট, ২০০টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ৫০টি বিমান টিকেট, ৫০টি ট্যুরিস্ট ভিসার ফটোকপি, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর ও ১টি বিলাসবহুল মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। উদ্ধারকৃত পাসপোর্টগুলো বিভিন্ন বয়সী তরুণীদের নামে ইস্যু করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাব। সংবাদি সম্মেলনে স্কোয়াড্রন লিডার মো. রেজাউল হক জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ আর্ন্তজাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য। তারা ১৫-২৫ বছর বয়সী সুন্দরী তরুণীদের উচ্চ বেতনে বিদেশে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে থাকে।

এই পাচারকারী সিন্ডিকেটের সাথে পঞ্চাশের অধিক এজেন্ট, ২০ জনের অধিক পাসপোর্টের দালাল, ২৫ জনের অধিক ড্যান্স বারের মালিক, ৭ এর অধিক ট্র্যাভেল এজেন্সি ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরাও যুক্ত আছে। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে,এই চক্রটি মূলত টার্গেট করে থাকে নি¤œবিত্ত পরিবারের, পোশাক শিল্পের, ব্রোকেন ফ্যামিলির সুন্দর তরুণীদের। টার্গেট করার পর প্রথমে তরুণীদের ছবি বিদেশে অবস্থিত ড্যান্স বারের মালিককে পাঠানো হয়।

ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর ড্যান্স বারের মালিক বা তার প্রেরিত প্রতিনিধি সরাসরি উক্ত তরুণীদের নির্বাচনের উদ্দেশ্যে ঢাকা অথবা আশে পাশের কোন রেস্টুরেন্টে, হোটেল বা লং ড্রাইভের নামে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাসে সাক্ষাৎ করে থাকে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত তরুণীদের পাসপোর্ট উক্ত নারী পাচারকারী সিন্ডিকেট তাদের নিজস্ব পাসপোর্ট দালালের মাধ্যমে প্রস্তুত করে থাকে।

ট্রাভেল এজেন্সীর মালিকের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ভিসা ম্যানেজ করে ও এয়ারপোর্টের বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এই সকল তরুণীকে মালয়েশিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন পাচার করে থাকে। এই সকল তরুণীরা বিদেশে পৌঁছা মাত্র এয়ারপোর্ট থেকে উক্ত সিন্ডিকেটের সদস্যরা রিসিভ করে হোটেলে নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখে।

বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে এই সকল তরুণীকে কোন অবস্থাতেই নিজের ইচ্ছার হোটেল তথা ড্যান্স বারের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। এই সমস্ত ড্যান্স বারগুলোতে পণ্যের মতোই বাংলাদেশ থেকে পাচার করা তরুণীদের আধুনিক স্বল্পবসনের আর সাজসজ্জায় বসিয়ে রাখা হয় এবং মধ্যযুগীয় কায়দায় খদ্দরের পছন্দ অনুযায়ী রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে ৩টা পর্যন্ত নাচ ও যৌন পেশায় বাধ্য করা হয়।

উর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক অবস্থায় তরুণীরা এ সকল অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে রাজি না হলে বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। আবার কোন নির্দিষ্ট তরুণীকে পছন্দ হলে উক্ত ড্যান্স বারের মালিকের নিকট হতে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে কয়েক দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে থাকে। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে পাচারকৃত তরুণীদের উক্ত সিন্ডিকেট আবার বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।

র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন জানান, গত এক বছরে এই চক্রটি মবিন এয়ারনামে ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের মোট ৭২৯ জন তরুণীকে দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। এই ট্র্যাভেল এজেন্সির আকাশকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তরুণীদের নামে পাসপোর্ট তৈরি করতো।

ট্যুরিস্ট ভিসায় বিভিন্ন মেয়াদে তাদের দেশের বাইরে পাঠানো হতো। বারের মালিক ও খদ্দররা অধিকাংশই বাঙালি। দুবাইয়ের দুটি বারের মালিক হান্নান ও মনির হোসেনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মানব পাচার বিরোধী আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব-১১।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here