না’গঞ্জ রূপগঞ্জের মশার কয়েলের কারখানা থেকে টাকা ও ইয়াবা উদ্ধার

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভার রসুলপুর এলাকার একটি বাড়িতে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে অভিযান চালিয়ে নগদ ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও দুই হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ‘মাস্টার মশার কয়েল’ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল হোসেন মৃধা রয়েছেন ৩ দিনের রিমন্ডে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মোহসীনের আদালত এ আদেশ দেন। এরআগে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে জামাল মৃধার সংযোগ রয়েছে জানিয়ে তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হাই। তবে জামাল হোসেনের মৃধার পরিবারের দাবি, পুরো ঘটনাটি পুলিশের সাজানো নাটক। জামাল মৃধা একজন পরহেজগার এবং ভালো লোক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। জামাল মৃধার বড় ভাই লাভলু মৃধা বলেন, আমার ভাই মাস্টার মশার কয়েল কারখানার মালিক। সারাদেশে তার নাম ডাক করেছে। সারাদেশেই তার ডিলার রয়েছে। কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এছাড়া তার গরুর ফার্ম আছে। এবার কোরবানিতেও কোটি টাকার গরু বিক্রি করেছে। অথচ পুলিশ বলে সে মাদকের ব্যবসা করে। তাকে ফাঁসিয়েছে। অভিযানের সময় তারা বাড়ির সিসি ক্যামেরা এবং এর রেকর্ড ডিভাইজ ভেঙে নিয়ে এসেছে। আইনজীবী বলছেন, সেগুলো জব্দ দেখায় নাই।

পুলিশ বাড়িতে গিয়ে কি অভিযান চালাইছে তা ওই ভিডিও দেখলেই বের হয়ে যাবে। তাই তারা সেগুলো সরিয়ে নিয়েছে। কারও প্ররোচনায় পুলিশ এই অভিযান চালিয়ে আমার ভাইকে ফাঁসিয়েছে। জামাল মৃধার স্ত্রী সোনালী বেগম দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘুরছেন আদালত পাড়ায়। তিনি বলেন, আমরা স্বামী দক্ষিণ রূপসী নান্নু কাজীর মসজিদে তাবলীগে ৩ দিনের জন্য গিয়েছিলো। সেখান থেকে আসার পরদিনই হঠাৎ রাতে পুলিশ যায়। আমার স্বামীকে পুরো এলাকায় ভালো লোক হিসেবেই জানে। তার কয়েল ব্যবসা এবং গরুর ফার্ম সম্পর্কে পুুরো গ্রাম জানে। ৬ বছর হয় আমরা রূপগঞ্জে এই বাড়ি করেছি। পুলিশ অভিযানের নাটক করে আমার স্বামীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়েছে।

জামাল মৃধার ভাতিজা সোহেল বলেন, চাচা মাদকের বিরুদ্ধে সবসময় সরব ছিলেন এলাকায়। রূপগঞ্জের বরাব কবরস্থান রোডে নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদেও তিনি। মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ওখানকার মাদক ব্যবসায়ীরা তার উপর ক্ষুদ্ধ ছিলো। তাছাড়া আলোচিত প্রিয়াংকা হত্যা মামলার আসামীদের বিচারের দাবিতেও তিনি মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে এই ষড়যন্ত্র হয়ে থাকতে পারে। তাছাড়া চাচার বাড়ির পাশেই পুলিশ হেডকোয়ার্টারের উপ-পরিদর্শক মোস্তফা পাশার বাড়ি। তার সাথে চাচার সুসম্পর্ক ছিলো সবসময়। আচমকা এভাবে চাচাকে গ্রেপ্তারের পেছনে এতিনটি ঘটনা ছাড়া আর কোন কিছুই আমরা মাথায় আনছিনা। সম্পূর্ন পরিকল্পিতভাবে তাদের ফাঁসানো হয়েছে।

ছেলের গ্রেপ্তারের খবর শুনে বরিশালের উজিরপুর ধাসুরা গ্রাম থেকে এসেছেন জামালের মা ৭৫বছর বয়সী বৃদ্ধা জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, আমার ৯ ছেলে মেয়ের মধ্যে জামাল তৃতীয়। আমাদের পুরো পরিবার অত্যন্ত পরহেজগার। আমার ছেলে একটা সিগারেট পর্যন্ত খাননা। সেখানে তাকে মাদক ব্যবসায়ী বানানো হয়েছে। ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে শুনে বাড়ি থেকে চলে এসেছি। আমি ন্যায় বিচার চাই। আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু বলেন, সারাদেশে দুর্নীতি ও মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। আমরা এবং সাধারণ মানুষ দুর্নীতি ও মাদকবিরোধী অভিযানকে স্বাগত জানাই। কিন্তু প্রত্যেকটি ভালো কাজ কিংবা উদ্যোগ কিছু অতিউৎসাহী মানুষ, কর্মকর্তার জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।

এই মামলাটি তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। আসামীপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, পুলিশ মাদক বিক্রির যে টাকা জব্দ করেছে বলছে তা জমি মূলত তার জমি বিক্রি ও গরু বিক্রির টাকা। এসংক্রান্ত কিছু দলিলদস্তাবেজ ও প্রমাণাদি তারা আদালতে দাখিল করেছেন।  উল্লেখ্য, রূপগঞ্জের ‘মাস্টার মশার কয়েল’ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল হোসেন মৃধার রূপগঞ্জে বাড়িতে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে নগদ ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও ২ হাজার পিছ ইয়াবাসহ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তিনজনকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আটককৃত হলো- বাড়ি মালিক ও কয়েল ব্যবসায়ী জামাল হোসেন মৃধা (৪০), তার বড় ভাই মোস্তফা কামাল ও মানিক মিয়া।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উপ-পরিদর্শক মিজান জানান, জামাল ও মোস্তফা অবৈধ কয়েল কারখানা ও গরুর খামারের আড়ালে ইয়াবার ব্যবসা করে আসছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে এক লাখ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেটের একটি চালান স্থানীয় কয়েল ব্যবসায়ী জামাল হোসেন মৃধার বাড়িতে প্রবেশ করবে। এরপর থেকেই গোয়েন্দা পুলিশ মঙ্গলবার বিকেল থেকে ওই এলাকায় নজরদারি শুরু করে।

মধ্য রাতে জামাল হোসেন মৃধার চার তলা বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্লাটে তল্লাশি চালায়। এসময় একটি ট্রাংক থেকে নগদ এক কোটি টাকা এবং আলমারির ভেতর থেকে আরো পঁচিশ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। একই সাথে বাড়িটির নিচ তলায় জামাল হোসেনের ব্যক্তিগত অফিস থেকে দুই হাজার পিছ ইয়াবা উদ্ধার হয়। খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ ভোর রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, গ্রেফতারকৃত ব্যবসায়ী জামাল হোসেন মৃধা নিজেকে তিনটি কয়েল কারখানার মলিক দাবি করলেও এর কোন বৈধ লাইসেন্স দেখাতে পানেনি। জব্দকৃত টাকার বৈধ কোনো উৎসও দেখাতে পারেননি তিনি।এই টাকাগুলো হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করার জন্য রাখা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া কয়েল ব্যবসার আড়ালে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করে আসছে বলেও সন্দেহ রয়েছে। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, আটকৃতদের বিরুদ্ধে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে, ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে মাদকদব্য নিয়ন্ত্রন আইনে এবং আবাসিক এলাকায় কয়েল কারখানা নির্মাণ করে পরিবেশ দূষণের অপরাধে পরিবেশ আইনে মোট তিনটি মামলা দায়ের করা হবে।

পাশাপাশি জামাল হোসেন বাড়িতে এতো টাকা কি কারণে রেখেছেন, ইয়াবা ব্যবসা করে কতো টাকার মালিক হয়েছেন এবং তিনি কোন জঙ্গী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here